আগুন বা গরম জিনিসে ত্বক পুড়ে গেলে করণীয় কী

ত্বক পুড়ে গেলে করণীয়
ছবি: সংগৃহীত

আগুন বা গরম জিনিসের সংস্পর্শে ত্বক পুড়লে তাৎক্ষণিকভাবে কী করা উচিত এবং কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে সেটি অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না।

এই সম্পর্কে জানিয়েছেন নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. আসমা তাসনীম খান।

ত্বক কীভাবে পোড়ে

ডা. আসমা তাসনীম বলেন, ত্বক বিভিন্নভাবে পুড়ে যেতে পারে। শুধু আগুন নয় অনেক উৎস থেকে ত্বক পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। রান্না করার সময় গরম কড়াই বা পাতিলের স্পর্শে ত্বক পুড়ে যেতে পারে। চুলার আগুন, বাষ্প, গরম পানি, গরম তেল, গরম কোনো বস্তুর সংস্পর্শে ত্বক পুড়ে যেতে পারে। কাপড় ইস্ত্রি করার সময় আয়রন, বিভিন্ন রাসায়নিক, বিদ্যুতের সংস্পর্শজনিত কারণেও ত্বক পুড়ে যেতে পারে।

পোড়ার ধরন ও লক্ষণ

ডা. আসমা তাসনীম বলেন, আগুন বা গরম জিনিসের সংস্পর্শে ত্বক পুড়লে সাধারণত ৩ ধরনের পোড়া হতে পারে। পোড়া এক ধরনের ক্ষত। পোড়ার তীব্রতা ও গভীরতার ওপর ভিত্তি করে এর ধরন নির্ধারিত হয়। যেমন-

১. ফার্স্ট ডিগ্রি বার্ন বা প্রথম পর্যায়ের পোড়া: ত্বকের বাইরের স্তর (এপিডার্মিস) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে করে পোড়া স্থান লালচে হয়ে যায়, যন্ত্রণা হয়, ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হয়। এক্ষেত্রে ফোসকা পড়ে না। কিছুদিন পর পোড়া স্থানের চামড়া শুকিয়ে উঠে যায়।

২. সেকেন্ড ডিগ্রি বার্ন বা দ্বিতীয় পর্যায়ের পোড়া: ত্বকের বাইরের স্তর (এপিডার্মিস) এবং ত্বকের দ্বিতীয় স্তর (ডার্মিস) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক্ষেত্রে পোড়া স্থান লাল হয়ে যায়, অনেক সময় কালচে ও গাঢ় বাদামী হয়ে যায় ত্বক। তীব্র যন্ত্রণা হয় এবং ফোসকা পড়ে। অনেক সময় ফোসকা ফেটে যায় এবং পরবর্তীতে সেটি ঘা এর মত হতে পারে। ধীরে ধীরে তা ঠিক হয়ে যায়।

৩. থার্ড ডিগ্রি বার্ন বা তৃতীয় পর্যায়ের পোড়া: ত্বকের সব স্তর পুড়ে যায় এবং নার্ভ বা স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ধরনের পোড়ায় ব্যথা বা জ্বালাপোড়ার অনুভূতি থাকে না। কারণ স্নায়ুর ক্ষতি হওয়ার ত্বক সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলে।

৪. ফোর্থ ডিগ্রি বা চতুর্থ পর্যায়ের পোড়া: আরও এক ধরনের বার্ন আছে, যেটি ফোর্থ ডিগ্রি বার্ন নামে পরিচিত। ফোর্থ ডিগ্রি বা চতুর্থ পর্যায়ের পোড়ায় ত্বকের সব স্তর, নার্ভ, মাসল বা মাংশপেশী পুড়ে গিয়ে হাড় পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ত্বকের বেশি পরিমাণে বার্ন হয়। মূলত আগুনে পুড়ে গেলেই এই ধরনের বার্ন হয়।

করণীয়

ডা. আসমা তাসনীম বলেন, আগুন বা গরম জিনিসের সংস্পর্শে ত্বক পুড়ে গেলে তার ধরন এবং তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী হাসপাতালে নিতে হবে।

১. আগুন বা গরম বস্তুর সামনে থেকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সরিয়ে নিতে হবে।

২. পোড়া জায়গায় কাপড় লেগে থাকলে খুব সাবধানে খুলে নিতে হবে। ত্বকের পোড়া স্থানে কাপড় লেগে গেলে খোলার জন্য টানাটানি করা যাবে না, সাবধানে কাপড়ের অংশ কেটে ফেলতে হবে।

৩. পোড়া স্থানে কোনো গয়না যেমন- চুরি, আংটি, চেইন, ঘড়ি ইত্যাদি পরে থাকলে সেগুলো খুলে নিতে হবে।

৪. ত্বকের পোড়া জায়গায় ঠান্ডা পানি দিতে হবে। ট্যাপ ওয়াটার বা কলের পানিতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট রাখতে হবে ক্ষতস্থান।

৫. পোড়া স্থানে ধুলাবালি, ময়লা যাতে না লাগে সেদিকে নজর রাখতে হবে। পোড়া জায়গায় কোনো ধরনের ময়লা, ধুলাবালি জাতীয় কিছু থাকলে সর্তকতার সঙ্গে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

৬. সংক্রমণ প্রতিরোধে পরিষ্কার, শুকনো নরম কাপড় বা গজ দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে ক্ষতস্থান।

৭. সিলভার সালফাডায়াজিন একটি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ, যা বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়। পোড়ার ক্ষত চিকিৎসায় এই ক্রিম লাগানো যেতে পারে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৮. ক্ষতস্থানের ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ খেতে হবে।

৯. থার্ড ডিগ্রি বার্ন বা তৃতীয় পর্যায়ের পোড়া হচ্ছে গুরুতর অবস্থা, এক্ষেত্রে রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। পোড়া স্থানে টিস্যু নষ্ট হয়ে গেলে টিস্যু ডিব্রাইডমেন্ট অর্থাৎ ক্ষতিগ্রস্ত বা সংক্রমিত টিস্যু অপসারণ করতে হবে। ক্ষতস্থান নিয়মিত ড্রেসিং করতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ দিতে হবে রোগীকে।

যা করা যাবে না

পোড়া স্থানে বরফ দেওয়া যাবে না। ক্ষতস্থানের ফোসকা ফাটানো যাবে না। ডিম, টুথপেস্ট, বিভিন্ন ধরণের ভ্যাসলিন, ক্রিম, তেল দেওয়া যাবে না। অনেকে বিভিন্ন ভেষজ ওষুধ বা ঘাস পাতা থেঁতো করে রস দেন ক্ষতস্থানে, সেটিও দেওয়া যাবেনা। এগুলো পোড়া স্থানের সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ায়।

 

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

10h ago