সৈয়দ আবুল মকসুদ যেখানে অন্যায় দেখতেন, সেখানে ভূমিকা রাখতেন

সৈয়দ আবুল মকসুদের ৭৮ তম জন্মদিন উপলক্ষে ‘গণঅভ্যুত্থানের গণআকাঙ্ক্ষা’ শীর্ষক আলোচনা আজ জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ স্মৃতি সংসদ।

সৈয়দ আবুল মকসুদ যেখানে অন্যায় দেখতেন, সেখানে ভূমিকা রাখতেন। তার চিন্তা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে এবং আগামীতে করবে। তিনি বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই আন্দোলনে যুক্ত হতেন, মানুষের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতেন। তার গণমুখী চেতনাকে ধারণ করে যদি আমরা ২৪' এর গণঅভ্যুত্থানকে বিশ্লেষণ করি তবেই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী জনতার গণআকাঙ্ক্ষাকে বুঝতে পারব। 

সৈয়দ আবুল মকসুদের ৭৮ তম জন্মদিন উপলক্ষে 'গণঅভ্যুত্থানের গণআকাঙ্ক্ষা' শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ স্মৃতি সংসদ।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে এতে আলোচক হিসেবে ছিলেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান, সাংবাদিক কাজল রশীদ শাহীন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও কবি ইমরান মাহফুজ।

প্রবন্ধ পাঠ করেন গবেষক সামসুদ্দোজা সাজেন। প্রবন্ধে তিনি বলেন, গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গণঅভ্যুত্থান ঘটে, কিন্তু তা কোন নিশ্চিত ফলাফল নয়। গণঅভ্যুত্থানের অনিশ্চয়তার অন্যতম কারণ হল অংশগ্রহণকারী জনগণের স্বত:স্ফূর্ততা।  ৩টি পর্বে আলাপ করেন তিনি- গণঅভ্যুত্থান কোন প্যারাডক্স নয় বরং জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার বহি:প্রকাশ, গণঅভ্যুত্থান ঘটে, গণঅভ্যুত্থানের কোন মাস্টারমাইন্ড থাকে না এবং গণঅভ্যুত্থানের নিয়তি বিপ্লব নয়, বেহাত বিপ্লব। 

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সৈয়দ আবুল মকসুদের পরিচয় শুধু লেখনীর মাধ্যমে নয়। তিনি ছিলেন রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট; তিনি সক্রিয় রাজনীতি করতেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি রাজনীতি করে গেছেন। যেখানে অন্যায় দেখতেন, সেখানে তিনি ভূমিকা রাখতেন। যখন ইরাকে আমেরিকা হামলা চালালো, এর প্রতিবাদে তিনি সাদা বেশভূষা ধারণ করলেন। তার সঙ্গে আমার সর্বশেষ কথা হয়েছে কীভাবে বুর্জোয়া দলগুলো ছাড়িয়ে বামপন্থী, প্রগতিশীল শক্তির আন্দোলন এবং ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া যায়। এজন্য তাকে কমরেড আবুল মকসুদ বলতে চাই। 

জোনায়েদ সাকি বলেন, আবুল মকসুদ এ দেশে দীর্ঘসময় ধরে নিরলস কাজ করেছেন, যে সময় দাঁড়ানোর মত কাউকে পাওয়া যায়নি সেখানে মকসুদ ভাইকে দেখেছি। এ দেশের রাজনীতি ও গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। তিনি গণমানুষের সংকটে পাশে দাঁড়িয়েছেন বুদ্ধিজীবী হিসেবে। বাংলাদেশে জাতীয় অগ্রগতির পক্ষে যেসব মানুষ আলোকবর্তিকা, তিনি তার অন্যতম। তিমি আমাদের অনুপ্রাণিত করবেন। তিনি বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই আন্দোলনে যুক্ত হতেন, মানুষের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতেন।

কাজল রশীদ শাহীন বলেন, আমাদের এ ভূখন্ডে গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য পরিণতি পায় না। এ ব্যর্থতা বা দায়ের জায়গা- গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী বুদ্ধিজীবী সমাজ বিশেষ করে লেখক-কবি-সাহিত্যিক বা যারা সমাজ নেতৃত্বস্থানীয় তাদের যে ভূমিকা পালন করার কথা সে ভূমিকা তারা হয়তো পালন করেন না৷ এ গণ অভ্যুত্থানের বয়স যদি আড়াই মাস বা তিনমাসের কাছাকাছি ধরি, তাহলে জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থানের যে প্রবল শক্তি আমরা দেখেছি, ছাত্র এবং জনতার যে উদ্যোম দেখেছি, একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের যে ভূমিকা, সেই ভূমিকা পালনে ধারাবাহিকতা থাকা কিংবা এই জায়গাগুলোকে সংস্কৃতি হিসেবে নিয়ে আসা -সেই জায়গায় আমাদের ঘাটতি রয়েছে। 

আরিফ সোহেল বলেন, গত দেড় দশকে কে কি লিখেছেন কীভাবে দেখেছেন সময় ও সমাজ- সবই আমাদের পড়তে হবে। সেই ক্ষেত্রে অন্যতম পাঠের বিষয় সৈয়দ আবুল মকসুদের লেখা। গণ অভ্যুত্থানের পূর্বাবর সাহিত্য সংস্কৃতি রাজনীতি ও গণতন্ত্র- এসব বিষয়ে তার লেখা ক্রিটিক্যালি পড়তে হবে। প্রয়োজনে আলাপ আলোচনা করতে হবে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জুবায়ের ইবনে কামাল, স্বাগত ভাষণ দেন আলমগীর কবির, সমাপনী বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন। এই আয়োজনে গণতন্ত্র ও গণআকাঙ্ক্ষা শিরোনামে একটি সংকলন প্রকাশ করা হয়। 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

4h ago