মানবমুক্তির সংগ্রামের আমৃত্যু যোদ্ধা

সরদার ফজলুল করিম মানবমুক্তির সংগ্রামের আমৃত্যু যোদ্ধা। তিনি সারাজীবন জ্ঞানবিশ্বের সঙ্গে বাঙালি মননের যোগাযোগ সৃষ্টির প্রয়াস চালিয়ে গেছেন। তার অনুবাদের মাধ্যমে আমরা যেমন বিশ্বখ্যাত মনীষীদের সেরা চিন্তার সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছি তেমনি দর্শন, ইতিহাস ও রাজনীতির বিচিত্র বিষয়ে তিনি আমাদের সমৃদ্ধ করেছেন।
বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক সরদার ফজলুল করিমের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে (১৩ মে) সেমিনারের আয়োজনে আলোচকরা উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। সত্তা, সম্পর্ক ও সাধনা : সরদারের 'মানুষ' ধারণার দার্শনিক পাঠ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী এ এস এম নূরুল হুদা।
আলোচক হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুন রশীদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপ সৈয়দ নিজার। সভাপ্রধান ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
মূল প্রাবন্ধিক বলেন, সরদার ফজলুল করিমের দৃষ্টিতে মানুষ হলো এমন এক নৈতিক সত্তা, যিনি আত্মসচেতন, আত্মনিয়ন্ত্রিত এবং মানব ও অমানব সকল অপরের সঙ্গে ন্যায্য সহাবস্থানের সম্পর্কে নিজেকে দায়বদ্ধভাবে গড়ে তোলেন। এই মানুষ ব্যক্তি হিসেবে নিছক একক বা পরমাণু সত্তা নন; বরং তিনি ঐতিহ্য, ইতিহাস, সমাজ ও প্রকৃতির সঙ্গে জড়িত থেকে তাঁর আত্মপরিচয় নিমার্ণ করেন।
আলোচকদ্বয় বলেন, শিক্ষক ও লেখক সরদার ফজলুল করিম রাজনৈতিক সক্রিয়তারও মানুষ। তাই আমরা তাঁকে দেখেছি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী রাজপথেও। জন্মশতবর্ষে তাঁর কর্মময় জীবন ও অনন্য রচনাসমুদয় নতুন মূল্যায়নের দাবি রাখে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, সরদার ফজলুল করিম আমাদের সমাজের একজন কিংবদন্তি মানুষ তবে শতবর্ষ সমাগত হলেও সরদারের রচনা বিশেষত তাঁর অনুবাদকর্মের বৈশিষ্ট্য বা স্বাতন্ত্র্য নিয়ে পদ্ধতিগত আলোচনা চোখে পড়ে না। ফলে তাঁর সংগ্রামী জীবন নিয়ে নানা কিংবদন্তি তৈরি হলেও তা যথাযথ মূল্যায়নের রাস্তাকে প্রশস্ত করে না। জন্মশতবর্ষে বাংলা একাডেমির এ আলোচনা সরদার ফজলুল করিম—মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা তৈরি করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
Comments