বৈষম্যের বাংলাদেশ আমরা চাইনি

ছবি গ্রাফিতি পেইজ থেকে সংগ্রহ 

রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারিতে অকুতোভয় ভাষাসৈনিকেরা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় প্রাণ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ একদিন বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাঁড়াবে-এই প্রত্যয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন বীর সেনারা। সেই স্বপ্ন আজও অধরা। লাখো শহীদদের রক্তে কেনা স্বাধীনতা বিপন্ন। 

সমাজের প্রতিটি স্তরে লাগামহীন বৈষম্য চরম মাত্রায়। সামাজিক বৈষম্যের সঙ্গে যুক্ত রাষ্ট্রীয় বৈষম্য। গত ১৫ বছরের স্বৈরশাসকের অনলে পুড়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। অনিবার্য হয়ে ওঠে স্বৈরাচার দমনের অশনি সংকেত। চব্বিশের জুলাইয়ে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আবার স্বাধীনতার খোঁজে বাংলাদেশ দাঁড়ায় এক নির্মম বাস্তবতায়। স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে বটে কিন্তু স্বৈরাচারের বিস্তারিত জাল এখনও নিঃশেষিত হয়নি। শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ, নাঈমা, ফাইয়াজের রক্তে কেনা স্বাধীনতা পুনর্বার হুমকির মুখে। কাঠামোগত সংস্কার না হলে বার বার তাজা প্রাণ ঝরে যাবে-কিন্তু প্রত্যাশার বাতিঘরে হতাশার বিস্তার ক্রমশই বাড়বে-তাই সঙ্গত প্রশ্ন 'আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম'?

ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব ঘটনা হিসেবে ২০২৪-এর ছাত্র জনতার আন্দোলন এক নির্মোহ আন্দোলনের দাবি রাখে। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ চাকরি বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জন্য সংরক্ষিত ছিল। কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের সূচনা ২০১৮ সালে। এই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত সরকার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তখন চাকরিতে কোটা তুলে দেয়। কিন্তু পুনরায় ২০২৪ এর ৫ জুন হাইকোর্টের রায়ে কোটা পুনর্বহাল করা হলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের জন্য ৬ জুলাই থেকে মিছিল-সমাবেশ শুরু করে। 

৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে। ঢাকায় গণপরিবহণ বন্ধ এবং রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি চালায় এবং পরবর্তীতে সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হয় যা 'বাংলা ব্লকেড' নামে পরিচিত। প্রায় প্রতিদিন শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চলছিল ছাত্র-জনতার, ধীরে ধীরে আন্দোলনের পরিসর বাড়তে থাকে পুরো দেশ জুড়ে। 

এমন একটি পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের আগুনে ঘি ঢালে স্বয়ং সরকার প্রধান। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা রাখার বিষয়ে ছাত্রদের আপত্তি নিয়ে বলেন- 'মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে না, রাজাকারদের নাতি-নাতনিরা পাবে?' রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ব্যঙ্গ করে স্লোগান দিতে থাকেন 'তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার। কে বলেছে? কে বলেছে? 'স্বৈরাচার' 'স্বৈরাচার'। 

শিক্ষার্থীদের এই স্লোগানকে ইস্যু করে একে একে উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ। তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নষ্ট করার অভিযোগ আনেন। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ এক নেতা তার বক্তব্যে বলেন 'এসব রাজাকারদের প্রতিহত করতে সরকার দলের ছাত্র সংগঠনই যথেষ্ট'। এসব অযাচিত কথা আন্দোলনকে আরো তীব্র থেকে তীব্রতর করে তোলে। এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে সমন্বয়কগণ সরকার প্রধানকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর সরকারদলের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। একই সময়ে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। সংঘর্ষে আহত হয় তিন শতাধিক মানুষ। মুহূর্তের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং উত্তরাঞ্চলীয় রংপুরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এসময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন (১৬ জুলাই)। গুলি লাগার মুহূর্তে রাজপথে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকা আবু সাঈদের ছবি গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে মানুষ সরকার প্রধানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে। 

আবু সাঈদের মৃত্যু আন্দোলনের গতিকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। এই আন্দোলনই রূপ নেয় ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে। সে দিন আবু সাঈদসহ কমপক্ষে ৬ জন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। ছাত্ররা নিহতদের জন্য 'গায়েবি জানাজা' পড়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশ তাতে বাধা দেয় এবং ঢাকা, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ঐ সমাবেশে হামলা চালায়। এর প্রেক্ষিতে ছাত্রদের পক্ষ থেকে ১৭ জুলাই রাতেই ১৮ জুলাই এর জন্য 'কমপ্লিট শাটডাউন' কর্মসূচি ঘোষণা করে। কমপ্লিট শাটডাউন বা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ঢাকাসহ ১৯ জেলায় ব্যাপক সহিংসতা ঘটে। পুলিশ ও অজ্ঞাত ব্যক্তিরা গুলি চালালে সেদিন অসংখ্য মানুষ নিহত হন। ঐ সময় তাজা বুলেট শটগান ছররা এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করা হয়। এই নির্মম সহিংসতা সাধারণ জনগণকে মারাত্মকভাবে ব্যথিত করে। হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে অন্যান্য বিভিন্ন গোষ্ঠী যোগ দিয়ে শাটডাউন কর্মসূচি সফল করেন। 

২৬ জুলাই নাহিদ ইসলামসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়কে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকে একদল ব্যক্তি। পরবর্তীতে ২৭ জুলাই আরো ২ জন সমন্বয়ককে তুলে নেয়া হয়। ছাত্র আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ক গোয়েন্দা শাখায় থাকা অবস্থায় ওপর মহলের চাপে বাধ্য হয়ে আন্দোলন শেষ করার বিবৃতি পাঠ করেন। তবে মাঠে থাকা অন্যান্য সমন্বয়কারীগণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও শিক্ষার্থী গণহত্যার সাথে জড়িত মন্ত্রী পর্যায় থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সকল দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। 

দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসে। হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে আন্দোলনের ছয়জন সংগঠকের সঙ্গে গোয়েন্দা শাখার দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা যে অমানবিক ব্যবহার করছে তার জন্য তিরস্কার ও প্রতিবাদ জানানো হয়। ৩১ জুলাই হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা-মামলা ও গুমের প্রতিবাদে সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন 'মার্চ ফর জাস্টিস (ন্যায্য বিচারের জন্য পদযাত্রা)' কর্মসূচি পালন করেন। এর প্রেক্ষিতে ১ আগস্ট  পুলিশের হেফাজতে থাকা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদের ছেড়ে দেয়া হয়।

২ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন 'প্রার্থনা ও ছাত্র জনতার গণমিছিল' কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ৩ আগস্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয় এবং সকল সমন্বয়ক ও ছাত্র জনতার উপস্থিতিতে একইসাথে শহিদ মিনার থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সরকার পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করেন। ছাত্র সমন্বয়করা সরকার প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে এবং 'সবার কাছে গ্রহণযোগ্য' এমন এক ব্যক্তির নেতৃত্বে 'জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানায়।' স্বৈরশাসক নির্বিচারে ছাত্র জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। 

দেশের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক ও কবি-সাহিত্যিকের অনেকেই চুপ থেকেছে। চার দফা দাবি নিয়ে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে, প্রথমদিক থেকেই দেশের কিছু লেখকেরা সমর্থন জানিয়েছেন। তারা তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট মতামত এবং অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। কবি আবিদ আজম, ইমরান মাহফুজ ১ আগস্ট বিকেলে গঠন করলেন "বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজ''। পরদিন শিক্ষার্থীদের এক দফা "ফ্যাসিস্ট হাসিনার পদত্যাগের দাবিকে" সমথর্ন জানিয়ে রাজপথে নামার ঘোষণা দিলেন। জুলাই গণহত্যা ও দেশব্যাপী নিপীড়নের প্রতিবাদে ২ আগস্ট সকাল ১০টায় শতাধিক কবি ও লেখক, রাজধানী বাংলামটরের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রবেশ মুখে সমবেত হন। লেখকরা হলো জাতির বিবেক। তারা জানিয়ে দেন- 'যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে না তারা লেখক না'।  

ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে এভাবে জাতির বিবেকদের বিক্ষোভে ফেটে পড়তে দেখে সাংবাদিক, শিল্পীমহলসহ দেশ বিদেশের আপামর জনগণ নড়েচড়ে বসলেন। লেখকদের আহবানে সাড়া দিয়ে সাংবাদিকেরা মিথ্যে সংবাদ প্রচারে অসম্মতি জানিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর দিন ৩ অগাস্ট দেশের সংগীতাঙ্গনের শিল্পীরা রাজপথে নেমে এলেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কেরা সিদ্ধান্ত জানালেন, মার্চ টু ঢাকা ৬ অগাস্ট নয় বরং ৫ অগাস্ট হবে। 

৬ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন 'লংমার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সমন্বয়করা কর্মসূচি একদিন এগিয়ে এনে ৫ আগস্টে 'লংমার্চ টু ঢাকা' ঘোষণা করেন। ৫ আগস্টেই সরকার দেশ জুড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করে। কিন্তু কারফিউ উপেক্ষা করে ঢাকা ও আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ শহরে ঢুকতে থাকে। বিকেল নাগাদ তা কয়েক লক্ষ্যে পৌঁছায়। সরকার প্রধান এক দফা দাবির প্রেক্ষিতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের চাপে ৫ই আগস্ট পদত্যাগ করেন এবং দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এরই মধ্য দিয়েই তার ১৫ বছরের বেশি সময়ের শাসনের অবসান ঘটে। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের পর সেনাপ্রধান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগ নেন। ৭ আগস্ট রাষ্ট্রপতির সাথে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকের পর মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ৮ আগস্ট সরকার শপথ গ্রহণ করেন।

দেশ গঠনে সবার ঐক্য তৈরি হয়নি বলে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও ধরাছোয়ার বাইরে। ফলে দক্ষ জাতি গঠনে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত গণমাধ্যম তৈরি, প্রকৃত স্বাধীন নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তনের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।

মুসোলিনির মতো হাসিনা দেশের মানুষের জীবন ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক কার্যক্রম, মুজিবকে জাতির শীর্ষে দেখানোর সংস্কৃতি, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস ও গণমাধ্যমকে কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করতো। আর তাকে সহযোগিতা করে দেশের কথিত বুদ্ধিজীবী, কবি-লেখক, ব্যবসায়ী। ফলে স্বৈরশাসক আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে; মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হতে থাকে। নবারুণ ভট্টাচার্যের কবিতা মনে পড়ে-"এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না।" পরের অংশে বলেছেন-"যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরাণী/ প্রকাশ্যপথে এই হত্যার প্রতিশোধ চায় না/ আমি তাকে ঘৃণা করি।"দেশটা যখন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হচ্ছে তখনও চুপ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক, চুপ করে ছিলেন দেশের কবি-লেখক, সম্পাদক ও সাংবাদিক।

জীবনবাজি রেখে সকল শ্রেণির মানুষ আঘাত হেনেছে স্বৈরাচারের ক্ষমতাকেন্দ্রে। নজরুলের ভাষায়-উষার দুয়ারে আঘাত হেনে রাঙা প্রভাত আনার ছন্দময় বিপ্লব এনেছে তারা। জনমানুষের ভাষা হয়ে ওঠেছিল "বুকের ভেতর অনেক ঝড় বুক পেতেছি গুলি কর"। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের কান্নার আওয়াজ এখনও থামেনি। তাদের স্বপ্ন কি পূরণের পথে, না মনে হয়! 

বছর পার হয়ে গেলেও নতুন বন্দোবস্তের নামে বাস্তবে আসেনি নতুন কিছু। বলা যায়, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসকের পতন হলেও সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এখনও তাদের দৌরাত্ম্যে চিত্রগত প্রতিবাদে পানির তৃষ্ণায় পাখি হয়ে উড়ে যায়, মুগ্ধের "পানি লাগবে পানির আকুতি'।

দেশ গঠনে সবার ঐক্য তৈরি হয়নি বলে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও ধরাছোয়ার বাইরে। ফলে দক্ষ জাতি গঠনে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত গণমাধ্যম তৈরি, প্রকৃত স্বাধীন নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তনের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আরেকটি রক্তাক্ত জুলাইয়ে কেড়ে নেবে সহস্র প্রাণ। এমন বাংলাদেশ কারোই প্রত্যাশিত নয়। 

Comments

The Daily Star  | English
remittance earning of Bangladesh

Bangladesh’s forex reserves cross $25b again

However, as per BB’s calculation, the figure stands at $30.07 billion

3h ago