একুশের একাত্তর

ভাষা আন্দোলনে কক্সবাজার

কক্সবাজারে ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম
কক্সবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
কক্সবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ছবি: সংগৃহীত

(ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পূর্ণ হচ্ছে চলতি বছর। ভাষা আন্দোলনের একাত্তরতম বছরে ডেইলি স্টারের ধারাবাহিক বিশেষ আয়োজন 'একুশের একাত্তর'। ধারাবাহিক এই আয়োজনে ২১ দিনে ডেইলি স্টার প্রকাশ করবে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ২১ জনপদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। আমাদের আজকের ঊনবিংশ  পর্বে রইল কক্সবাজার ভাষা আন্দোলনের চিত্র)

ভাষা আন্দোলনের প্রবল উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল বঙ্গোপসাগর বিধৌত দেশের সর্বদক্ষিণের জনপদ কক্সবাজারেও। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের প্রথম পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষার বিষয় থেকে বাংলা ভাষা বাদ দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন কক্সবাজারের সন্তান ঢাকা সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক ফরিদ আহমদ। তিনি বাংলা ভাষার পক্ষে কর্মসূচিতে অংশ নেয়ায় নিজ কার্যালয়ে ডেকে ভর্ৎসনা করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের চিফ সেক্রেটারি আজিজ আহমদ। এরপর ৮ জানুয়ারি তার কার্যালয়ে গিয়ে বাংলাকে কেন্দ্রীয় পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ভাষা হিসেবে বাদ দেয়ার প্রতিবাদে চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন। ফরিদ আহমদের এই পদত্যাগ কেবল কক্সবাজারই নয় সমস্ত চট্টগ্রাম জুড়ে ভীষণ আলোড়িত হয়েছিল।

ফরিদ আহমদের চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার বিষয়টি যখন কক্সবাজারের রামুতে এসে পৌঁছায় তখন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সুতিকাগার রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন স্কুলের ছাত্র বদরুজ্জামান, ওবায়দুল হক, রসিকচন্দ্র বড়ুয়া। শত শত ছাত্রের এই মিছিলটি রামুর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রামুর চৌমুহনীতে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত হয়েছিল একটি সমাবেশ। সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন ছাত্রনেতা বদরুজ্জামান, জাকের আহমদ, মোশতাক আহমদ, আমিরুল কবির প্রমুখ। বক্তারা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার দৃঢ় শপথ গ্রহণ করেন।

১৯৪৮ সালের ৬ জানুয়ারি ফরিদ আহমদ কক্সবাজারে এলে রাজনৈতিক সচেতন মানুষ ও ছাত্র সমাজের মধ্যে তীব্র উদ্দীপনা দেখা যায়। তিনি নিজেও রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি জানিয়ে ছাত্রসমাজ ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবিত করেন। এসময় ছাত্ররা কক্সবাজারে বেণীমাধব পালের বাসভবন এবং নিরিবিলি হোটেলের পাশের অ্যাডভোকেট নলিনীরঞ্জন দত্তের বাসভবনে একাধিক বৈঠকে মিলিত হন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট প্রবোধ রঞ্জিত, সুরেশ সেন, আব্দুস সালাম, মহিউদ্দিন মোক্তারসহ গণ্যমান্যেরা। এসব বৈঠকে ভাষা আন্দোলনকে সফল করতে নানা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবি জানিয়ে গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তমিজুদ্দিন খানের নেতৃত্বে গণপরিষদের মুসলিম লীগের সদস্যরা প্রস্তাবের বিরোধিতা এবং খাজা নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার আন্দোলনের খবর ছড়িয়ে পড়েছিল কক্সবাজারে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী ১১ মার্চকে মূল কর্মসূচির দিন হিসেবে নির্ধারিত করে কক্সবাজারজুড়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। একই সঙ্গে আন্দোলন সফল করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়।

১১ মার্চ আন্দোলনের দিনে কক্সবাজারে হরতাল পালিত হয়েছিল। কক্সবাজার জুড়ে দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস এদিন ছিল বন্ধ। এদিন রামুর খিজারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ছাত্ররা মিছিল বের করে। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্রনেতা মোহাম্মদ বদরুজ্জামান। মিছিল শেষে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ওবায়দুল হক, আফসার কামাল চৌধুরী, রসিকচন্দ্র বড়ুয়া, জাকের আহমদ, মোশতাক আহমদ, নুরুল ইসলাম হেলালি, আমিরুল কবির চৌধুরী প্রমুখ।

প্রথম পর্বের ভাষা আন্দোলনে ছাত্র এবং প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ ছাড়াও কক্সবাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন স্থানীয় আইনজীবী, শিক্ষক, প্রগতিশীল পেশাজীবীরাও। ৪৮'র ভাষা আন্দোলন রামুতে যতটা প্রভাব বিস্তার করেছিল ততটা কক্সবাজারের আর কোথাও প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।

আটচল্লিশের ভাষা আন্দোলন কক্সবাজারে তেমন একটা সাড়া না ফেলতে পারলেও বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন তুমুলভাবে দানা বেঁধেছিল কক্সবাজারে।

১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন 'উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা' ঘোষণা করলে পূর্ববঙ্গের নানা শহরের মতো বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল কক্সবাজারবাসীও। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই কক্সবাজারে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছিল। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের মূল দিন হিসেবে ধার্য করে কক্সবাজারে গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ।

আন্দোলন সফল করতে কক্সবাজারসহ টেকনাফ উখিয়া রামুতে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের সর্বত্র স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট ও হরতাল পালিত হয়েছিল। এদিন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে। এদিন ছাত্ররা স্কুল থেকে মিছিল বের করে নানা স্লোগান দিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। কক্সবাজারের মহকুমা প্রশাসক মৌলভী গফুরুজ্জামান চৌধুরী ভাষা আন্দোলনের পক্ষে থাকায় কক্সবাজারে ছাত্র জনতা প্রশাসনের তেমন কোনো বাধার সম্মুখীন হয়নি।

২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রহত্যার খবর কক্সবাজারে প্রথম এসে পৌঁছায় সেদিন রাতেই। মহকুমা প্রশাসক মৌলভী গফুরুজ্জামান চৌধুরী টেলিফোনে এই খবর পান। সেখান থেকে খবর পান তৎকালীন সিএন্ডবি প্রকৌশলী এস আর খান। তার কাছে তার ভাগ্নে কক্সবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র খালেদ মোশাররফের কাছে পৌঁছাতেই তিনি সে খবর তার স্কুলের সহপাঠীদের কাছে পৌঁছে দেন। এসময় খালেদ মোশাররফ (পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও কে ফোর্সের অধিনায়ক এবং বীর উত্তম) নিজেই উদ্যোগী হয়ে কক্সবাজার হাইস্কুলে সহপাঠীদের নিয়ে সংগঠিত করেন। এই খবর শোনামাত্র বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা রাজপথে নেমে আসে। ছাত্রদের মিছিলটি এসময় দুইভাগে বিভক্ত হয়ে কক্সবাজারের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

মিছিলে নেতৃত্বে দেন খালেদ মোশাররফ, আবদুল মাবুদ এখলাসী ও নুরুল হুদা। মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন আক্তারুজ্জামান চৌধুরী, শামসুল হুদা, রফিক উল্লাহ, ওসমান গণি, ছালেহ আহমেদ, জালাল আহমেদ, ইসলাম মিয়া, আবদুল রহমান, বাদশাহ মিয়া, নূর আহমদ, কামাল উদ্দিন আহমদ, নিখিলেশ্বর চক্রবর্তী, নাসির উদ্দিন।

অন্যদিকে সালামত উল্লাহ ও আমিরুল কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে ছাত্রদের একটি বড় মিছিল নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

দুটি মিছিলই নগরীর বাহারছড়ায় এসে মিলিত হয়। এসময় বাহারছড়ায় ছাত্র জনতার অংশগ্রহণে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন খালেদ মোশাররফ, আবদুল মাবুদ এখলাসী, সালামত উল্লাহ, নুরুল হুদা, আমিরুল কবির চৌধুরী প্রমুখ। ২২ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার শহরের বটতলায় (পরবর্তীতে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) এক অনির্ধারিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এদিন ছাত্ররা ছাড়াও রাস্তায় নেমে আসে কক্সবাজারের সর্বস্তরের জনতা।

২৩ ফেব্রুয়ারি মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় গোটা কক্সবাজার। আগের দিনের চেয়ে এদিন জনতার মিছিল ছিল কয়েকগুণ বেশি। সমস্ত কক্সবাজার মিছিলের স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে। মিছিলে তখন ছাত্র জনতার স্লোগান, 'নুরুল আমীনের বিচার চাই', 'ছাত্র হত্যার বিচার চাই। 'গণপরিষদ সদস্যদের পদত্যাগ চাই'। এদিন ছাত্র জনতার মিছিলে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে মিলিত হয়। এদিন পাবলিক লাইব্রেরিতে প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করার জন্য এদিন বিকেলে কক্সবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন খালেদ মোশাররফ, আখতারুজ্জামান চৌধুরী, নুরুল হুদা চৌধুরী, নাসির উদ্দিন প্রমুখ। সভায় একপর্যায়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা আব্দুল আওয়াল সেখানে উপস্থিত হয়ে নুরুল হুদা চৌধুরীকে আটক করলে সভা পণ্ড হয়ে যায়।

আটচল্লিশের ভাষা আন্দোলনের মতো কক্সবাজারের রামুতে ভাষা আন্দোলন প্রবলভাবে পালিত হয়েছিল। ২৩ ফেব্রুয়ারি রামুতে খিজিরে হাইস্কুলের ছাত্ররা স্কুলে ধর্মঘট পালন করেছিল। একইসঙ্গে করেছিল ক্লাস বর্জন কর্মসূচিও। মিঠাছড়ি ও চকরিয়া হাইস্কুলের ছাত্ররাও নানা তৎপরতার মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করেছিল।

২২ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের চকরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্ররা ধর্মঘট পালন করেছিল। একই সঙ্গে এদিন স্কুল থেকে প্রায় আড়াইশ ছাত্র বের করেছিল বিক্ষোভ মিছিল। মিছিলটি চকরিয়ার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেছিল। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন স্কুলের ছাত্রনেতা জামালউদ্দীন, সিরাজ উদ্দীন, নাসির উদ্দীন রেজা, মোসলিম উদ্দীন, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। ছাত্রদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন চকরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জগবন্ধু।

২২ ফেব্রুয়ারি ধুরুং উচ্চ বিদ্যালয় ও কুতুবদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররাও প্রতিবাদি মিছিল বের করেছিল। ছাত্রদের মিছিলের স্লোগান ছিল, 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই', 'খুনী নুরুল আমীনের বিচার চাই'। প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর এই মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মোসলেম খান, ছালেহ আহমদসহ অন্যরা।

২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার ঈদগাঁও হাইস্কুলের ছাত্ররা ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে স্কুলে ধর্মঘট করে। এদিন নুরুল আজিম চৌধুরীর নেতৃত্বে স্কুলের ছাত্ররা মিছিল বের করে। মিছিল শেষে তার সভাপতিত্বেই একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ভাষা আন্দোলন পৌঁছে গিয়েছিল কক্সবাজারের প্রত্যন্ত জনপদ টেকনাফ ও উখিয়ায়। টেকনাফ ও উখিয়া তৎকালীন সময়ে অধিকতর প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় এবং প্রতিকূল যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে এই দুটি এলাকায় আন্দোলনের খবর পৌঁছাতে দেরি হয়। কারণ প্রতি সপ্তাহে মাত্র দুই দিন টেকনাফ থেকে কক্সবাজারে দুটি স্টিমার যাত্রা করত। ছিল না টেকনাফের সঙ্গে কক্সবাজারের কোনো সড়ক যোগাযোগ। সংবাদপত্রও পৌঁছাতো সপ্তাহখানেক বাদে।

যদিও ২৫ ফেব্রুয়ারি অবশেষে টেকনাফে এসে পৌঁছায় ঢাকায় পুলিশের গুলিতে ছাত্র হত্যার খবর। ২৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ মাইনর স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাবু অবিনাশচন্দ্র, বাবু মংনি, পোস্ট মাস্টার সৈয়দুর রহমান, মাস্টার আবদুর রবের উৎসাহ ও সহযোগিতায় ছাত্ররা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। টেকনাফে কোনো উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় নিম্নমাধ্যমিক ছাত্রদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। যা ছিল বিরল উদাহরণ।

২৬ এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রদের মিছিলের স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে টেকনাফের প্রান্তিক জনপদ। একপর্যায়ে শিশু ছাত্রদের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন নূর আহমদ, অলী আহমদ সওদাগর, আবদুর রহমান, আবদুল গণি, জহির আহম্মদ, মোহাম্মদ মিয়া মেকার, বদিউর রহমান, নুরুল হক মাস্টার, নুরুজ্জামানান প্রমুখ।

ঢাকায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রহত্যার খবর উখিয়ায় এসে পৌঁছালে পালং হাইস্কুলের ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে। এসময় ছাত্ররা উখিয়া থানা ঘেরাও করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাদশা মিয়া চৌধুরী ও মোহাম্মদ জাকারিয়ার নেতৃত্বে ছাত্রদের মিছিল 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই', 'ছাত্র হত্যার বিচার চাই', 'খুনি নুরুল আমীনের বিচার চাই' প্রভৃতি স্লোগান নিয়ে মিছিল সহযোগে উখিয়া থানায় পৌঁছে থানার পুলিশদের আন্দোলনে যোগ দেয়ার আহ্বান জানায়। পরে ছাত্ররা উখিয়া স্টেশনে গিয়ে প্রতিবাদসভা আয়োজন করে। সভায় বক্তব্য দেন বাদশা মিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ জাকারিয়া, নিরোধবরণ বড়ুয়া, প্রিয়দর্শী বড়ুয়া, ললিত বড়ুয়া। বক্তব্যে ছাত্রনেতারা উখিয়ার জনসাধারণকে ভাষা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। পালং হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক লোকনাথ দে ছাত্রদের কর্মসূচিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন।

সূত্র-

ভাষা আন্দোলন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া/ আহমদ রফিক

ভাষা আন্দোলন কোষ প্রথম খণ্ড/ এম আবদুল আলীম

Comments