‘এই স্থান যদি একডালা দুর্গ হয়, সারা পৃথিবীর মানুষ দেখতে আসবে’

‘আমাদের যে এভিড্যান্স আছে, এই স্থান যদি একডালা দুর্গ হয়, তাহলে সারা পৃথিবীর মানুষ এই জায়গা দেখতে আসবে। বাঙালির বীরত্ব দেখতে আসবে। কী রকম দুর্গে বসবাস করেছে, দিল্লির সুলতান এসেও পরাজিত করতে পারেনি।’
খননের পর বেড়িয়ে আসছে দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। ছবি: স্টার

'আমাদের যে এভিড্যান্স আছে, এই স্থান যদি একডালা দুর্গ হয়, তাহলে সারা পৃথিবীর মানুষ এই জায়গা দেখতে আসবে। বাঙালির বীরত্ব দেখতে আসবে। কী রকম দুর্গে বসবাস করেছে, দিল্লির সুলতান এসেও পরাজিত করতে পারেনি।'

কথাগুলো বলেছেন প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা কেন্দ্র ঐতিহ্য অন্বেষণের নির্বাহী পরিচালক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান।

আজ শুক্রবার গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে দরদরিয়া দুর্গে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও খননে আবিষ্কৃত প্রত্নবস্তু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

এই প্রত্নতাত্ত্বিক বলেন, 'আমাদের ২০ বছরের গবেষণা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেপেছে, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ছেপেছে, টেক্সট বইয়ে এসেছে। খননের সঙ্গে যদি ইতিহাসের সংযোগ স্থাপন করতে পারি সেটি হলো বড়।'

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর এখানে খনন শুরু হয়। ছবি: স্টার

তিনি বলেন, 'রানির বাড়ি বা স্থানীয়ভাবে পরিচিত দরদরিয়া দুর্গ প্রত্নস্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু হয় গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর। ৭টি খাদে উৎখনন পরিচালনা করেই তাৎপর্যপূর্ণ প্রত্নবস্তু ও তথ্য-উপাত্ত আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রাথমিক জরিপে আবিষ্কৃত হয়েছে দুর্গের আকার, আকৃতি ও পরিমাপ।'

সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'দরদরিয়া দুর্গটির আকার অর্ধচন্দ্রাকৃতির। রয়েছে দুর্গ প্রাচীর ও পরিকল্পিত পরিখা। পূর্ব দিকে অর্ধচন্দ্রের পরিধিব্যাপী পরিখা এবং পশ্চিম দিক ঘেঁষে রয়েছে নদী বানার (শীতলক্ষ্যা)। দরদরিয়া দুর্গটি প্রকৃতি এবং মানবসৃষ্ট পরিখার এক দারুণ কৌশলগত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।'

তিনি আরও বলেন, 'অর্ধচন্দ্রাকৃতির দুর্গের পরিধি অংশের দুর্গ প্রাচীরের পরিমাপ ৫৫০ মিটার এবং নদীর দিকে সরলরেখায় দুর্গ প্রাচীরের পরিমাপ ৩৩০ মিটার। ৫৫০×৩৩০ বর্গমিটার দুর্গের অভ্যন্তরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে এ পর্যন্ত মানববসতির চিহ্ন বা আলামত পাওয়া গেছে সমতল ভূমি থেকে ২ মিটার নিচ পর্যন্ত।'

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের বাড়ির সামনে দিয়ে চলে যাওয়া সড়ক ধরে আধা কিলোমিটার উত্তর দিকে গেলেই দরদরিয়া দুর্গের অবস্থান।

আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ এসেছেন দুর্গের খননকাজ দেখতে। ছবি: স্টার

দরদরিয়া গ্রামের নার্গিস আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রানির বাড়ি দেখতে এসেছি। এসে রানির বাড়ির ভিটার ইটের দেয়াল দেখেছি। শুনেছি, এখান থেকে আরও অনেক কিছু বের হবে।'

পার্শ্ববর্তী রায়েদ গ্রামের বদিউজ্জামান শেখ বলেন, 'বিশ বছর আগে এই স্থানে একটি বড় পাতিল পাওয়া গেছে। তবে সেটি কোথায় আছে জানি না।'

স্থানীয় ছাত্তার চৌকিদার বলেন, 'ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি, এই জায়গা রানির ভিটা। এখন দেখছি, ইটের দেয়াল ও বিভিন্ন প্রকার পাতিলের মতো কী যেন দেখা যাচ্ছে।'

দরদরিয়া গ্রামের আজিজ মিয়া ও দুর্গের পাশের বাড়ির আতাউর রহমান বলেন, 'বাবা-দাদা বলে গেছেন, এটা রানির ভিটা।'

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি বলেন, 'আমি যখন কলেজ পড়ি তখন একটি বইয়ে এই দুর্গ সম্পর্কে জানতে পারি।'

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ড. নূহ-উল-আলম লেনিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল ও ইউএনও মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English
What constitutes hurting religious sentiments

Column by Mahfuz Anam: What constitutes hurting religious sentiments?

The issue of religious tolerance have become a matter of great concern as we see a global rise in narrow-mindedness, prejudice and hatred.

10h ago