বিপ্লবী উল্লাসকরের বাড়ি প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ঘোষণা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ গ্রামে জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের বাড়ি প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ‌ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
বিপ্রবী-উল্লাসকরের-বাড়ি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ গ্রামে ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের ঐতিহাসিক বাড়ির সামনের অংশে পাকা ভবন তৈরি করা হচ্ছে। ছবি: মাসুক হৃদয়/স্টার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ গ্রামে জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের বাড়ি প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ‌ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

গত ১৮ নভেম্বর 'অস্তিত্ব সংকটে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জন্মভিটা' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দ্য ডেইলি স্টার। 

গেজেট প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই বাড়ি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি স্থানীয় কয়েকটি সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে গত ৭ ডিসেম্বর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। চিঠি পাওয়ার পর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে একটি বিশেষজ্ঞ টিম বাড়িটি পরিদর্শন করে। পরিদর্শনের পর তারা উপজেলা প্রশাসনের কাছে জায়গা সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব চায়। এরপর প্রস্তাব পাঠানো হলে সেটি আমলে নিয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়িটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে।'

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে পাঠানো চিঠিতে ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের এক পুরোধা ব্যক্তিত্ব বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জীবন ও কর্মের সাক্ষী হিসেবে তার বসতভিটার ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। প্রত্নসম্পদ আইন ১৯৬৮ অনুযায়ী, সংরক্ষণ করা যায় এমন প্রতিবেদন পাওয়া গেছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

ইউএনও জানান, সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রাজীব কুমার সরকার এই বাড়ি নিয়ে গেজেট প্রকাশ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন।

ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরাইলের কালিকচ্ছ গ্রামের বাগবাড়ি তথা বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের বাড়িটি ৮৫২৯ নম্বর দাগে‌ মোট ৩১ শতক। এর মধ্যে ১৫ শতক পরিমাণ জায়গার মূল বাড়িটিকে সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বাড়িটির সিএস রেকর্ডীয় মালিক উল্লাসকরের বাবা দ্বিজ দাস দত্ত বলে উল্লেখ করা হয়।

ইউএনও আরও জানান, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী এখন বাড়িটিকে অধিগ্রহণ করা হবে। বর্তমানে যারা বাড়িটির রেকর্ডীয় মালিক তাদেরকে অধিগ্রহণের আওতায় ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন বলেন, 'আমরা গত নভেম্বরে জানতে পারলাম এই জন্মভিটাকে আড়াল করে কুচক্রী মহল একটি স্থাপনা গড়ে তুলছে। তারপর সাহিত্য একাডেমি, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ সংস্কৃতি কর্মীরা সেখানে গিয়ে মানববন্ধন করি। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে স্মারকলিপি পাঠাই। এর পরিপ্রেক্ষিতে যেহেতু তারা বাড়িটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে, এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল মহল সাধুবাদ পাওয়ার মতো একটি কাজ করেছে। এখন এই বাড়িটিতে সরকার যেন একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলে এই দাবি জানাচ্ছি।'

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি জহিরুল ইসলাম চৌধুরী স্বপন বলেন, 'প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এখন যেহেতু বাড়িটিকে সংরক্ষণের ঘোষণা দিয়েছে, সরকারের উচিত বাড়িটিতে একটি স্মৃতি জাদুঘর এবং পাঠাগার নির্মাণ করা।'

বাড়িটি সংরক্ষণ করা হয়েছে জানার পর জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা ডেইলি স্টারকে বলেন, এই বাড়িটির সঙ্গে সরাইল তথা বাংলাদেশ এবং উপমহাদেশের ইতিহাস জড়িত। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের অবদান সমগ্র ভারতবাসী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। ব্রিটিশদের অস্ত্রাগার, সরকারি ডাক লুণ্ঠনের মাধ্যমে যিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চালিয়েছিলেন, তার বাড়ি এভাবে অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়া আমাদের জন্য লজ্জাকর। এখন যেহেতু বাড়িটি উদ্ধার হয়েছে, সেখানে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে এই বিপ্লবীর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখা দরকার।

Comments