ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বিএসএফের মারধরে বাংলাদেশি যুবক নিহতের অভিযোগ

নিহত মুরাদুর রহমান মুন্না। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর সীমান্তে ধানের জমি দেখতে গিয়ে এক যুবক নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পরিবারের দাবি, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) মুরাদুর রহমান মুন্না (২৬) নামের ওই যুবককে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের সেজামুড়া সীমান্তের শূন্যরেখায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মুন্না সেজামুড়া গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।

পরিবারের ভাষ্যমতে, মুন্না গতকাল বিকেলে ধানের জমি দেখতে সেজামুড়া সীমান্ত এলাকায় যান। তখন কয়েকজন বিএসএফ সদস্য তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং মারধর করে বাংলাদেশ সীমান্তে ফেলে রেখে যায়। পরে বিজিবি সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। গুরুতর আহত অবস্থায় মুন্নাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সাফিউল্লাহ আরাফাত বলেন, 'মঙ্গলবার রাতে মুন্নাকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। রাত ১০টা ২১ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে এবং আজ বুধবার ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা রয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।'

এ বিষয়ে সরাইল ২৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, 'প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, মুরাদ অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়েছিলেন। তিনি কেন গিয়েছিলেন, বিএসএফ তাকে আটক করেছিল কিনা কিংবা কেউ মারধর করেছিল কিনা—তা এখনো পরিষ্কার নয়। ঘটনাটির তদন্ত চলছে।'

সীমান্তে বিজিবির টহল দলের বরাতে তিনি বলেন, 'মুন্না ভারতে ঢোকার পর সুস্থ অবস্থায় ফিরে এসেছিলেন। তাকে স্থানীয় এক ব্যক্তি বাড়িতে পৌঁছে দেন। তবে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।'

নিহতের স্ত্রী রত্না আক্তার জানান, তাদের পারিবারিক জমি সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ১৫০ থেকে ৩০০ গজ ভেতরে অবস্থিত। মুন্না মঙ্গলবার সকালে লিচু গাছে পানি দেওয়া ও পরিচর্যায় ব্যস্ত ছিলেন। দুপুরের খাবারের পর তিনি সীমান্তে ধানখেত দেখতে যান। বিকেলেও বাড়ি না ফিরলে রত্না উদ্বিগ্ন হয়ে তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে স্থানীয় এক বাসিন্দা তাকে ফোন করে জানান, বিএসএফ মুন্নাকে আটক করেছে। 

সন্ধ্যায় পরিবারের লোকজন মুন্নাকে অচেতন অবস্থায় নিজেদের জমিতে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, যেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রত্না বলেন, 'হাসপাতালে নেওয়ার পথে আমার স্বামী জানান, বিএসএফ সদস্যরা তাকে ডাকেন এবং তাদের ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করেন। পরে বিএসএফ তাকে ফিরিয়ে দেয় এবং বিজিবি সদস্যরা তাকে ধানখেতে রেখে যান। আমার স্বামী কখনো কোনো খারাপ কাজে জড়িত ছিলেন না। আমি তার হত্যার বিচার চাই।'

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গের সামনে নিহতের বড় বোন আমেনা খাতুন বলেন, 'সন্ধ্যায় ধানখেত থেকে ভাইকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করি। বিএসএফ আমার ভাইকে ডেকে নিয়ে মারধর করে হত্যা করেছে। তার ঘাড় ও কপালে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ভাইয়ের অসহায় পরিবারটিকে এখন কে দেখবে?'

Comments

The Daily Star  | English

Scrap draft ordinance on revenue

The BCS Taxation Association has called to immediately rescind the draft ordinance that proposes dissolving the National Board of Revenue (NBR) and replacing it with two separate entities -- the Revenue Policy Division and the Revenue Management Division..Under the draft "State Policy and

1h ago