ব্রাহ্মণবাড়িয়া

যে ছানামুখীর খ্যাতি দেশে-বিদেশে

ছানামুখী মিষ্টি। ছবি: মাসুক হৃদয়/ স্টার

মিষ্টিপ্রিয় বাঙালির পছন্দের তালিকার প্রথম সারিতেই যে মিষ্টিগুলোর নাম রয়েছে তার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার 'ছানামুখী' অন্যতম। বৃটিশ রাজত্বকাল থেকে তৈরি হয়ে আসা প্রসিদ্ধ এই মিষ্টি দীর্ঘ সময় ধরে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এখনো পছন্দের খাবারের তালিকায় প্রথম সারিতে আসে ছানামুখীর নাম।

শহরের প্রবীন মিষ্টি ব্যবসায়ী নারায়ণ মোদক বলেন, বহু বিখ্যাত মানুষ এই মিষ্টির স্বাদ নিয়েছেন। ছানামুখীর সুখ্যাতি এখনও দেশ-বিদেশে অক্ষুণ্ন।

তিনি জানান, ছানামুখী তৈরির প্রধান উপকরণ গাভীর দুধের সংকটের কারণে এখন শহরের সবকটি দোকানে ছানামুখী তৈরি হয় না। হাতেগোনা ১০/১২টি মিষ্টান্ন ভান্ডারে ছানামুখী তৈরি করা হচ্ছে। শহরের দোকানগুলোতে প্রতিমাসে অন্তত ৮/১০ লাখ টাকার ছানামুখী বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।

ছবি: মাসুক হৃদয়/ স্টার

ছানামুখী তৈরির জন্য প্রসিদ্ধ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ফরিদুল হুদা রোডের 'আদর্শ মাতৃভান্ডার' এর সত্ত্বাধিকারী দুলাল মোদক বলেন, 'দুধের ছানার তৈরি বলেই এর নাম ছানামুখী। ছানার উপর জমাটবাঁধা চিনির প্রলেপ দেওয়া থাকে। এটি খেতে খুব সু-স্বাদু।'

মহাদেবপট্টি এলাকার মহাদেব মিষ্টান্ন ভান্ডারের ছানামুখীর কারিগর গোপাল দাস বলেন, ১০ কেজি ছানামুখী তৈরি করতে প্রয়োজন হয় দেড় মণ দুধ আর ১০ কেজি চিনি। প্রথমে দুধের ছানা তৈরি করে চারকোনা করে কেটে নিতে হয়। তারপর তা চিনির রসে ভেজে নিয়ে তৈরি করতে হয় ছানামুখী। তবে স্পেশাল অর্ডার পেলে একটু কড়া করে ভেজে নেওয়া ভালো।

ছানামুখী তৈরির জন্য প্রথমে চৌকো করে কাটা হয় ছানা। ছবি: মাসুক হৃদয়/ স্টার

মহাদেব ভান্ডারের সত্বাধিকারি নারায়ণ মোদক বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখীসহ মিষ্টির সুনামের পেছনে তার পূর্ব পুরুষ মহাদেব পাঁড়ে'র নাম জড়িত। মহাদেব পাঁড়ের জন্ম কাশীতে হলেও বড় ভাই দূর্গা প্রসাদের দোকানে মিষ্টি তৈরি করতে কলকাতায় আসতেন কিশোর মহাদেব। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর আশ্রয়হীন হয়ে ঘুরতে ঘুরতে এক সময় তিনি চলে আসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। শতাধিক বছর পূর্বে তখন শহরের মেড্ডা এলাকার শিবরাম মোদকের একটি মিষ্টির দোকান ছিল। তিনি মহাদেবকে আশ্রয় দেন। মহাদেব আসার পর শিবরামের মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। মৃত্যুর সময় শিবরাম তার মিষ্টির দোকানটি মহাদেবকে দিয়ে যান।

নারায়ণ মোদক বলেন, গরমকালে ছানামুখীর চাহিদা বেশি থাকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ দেশে-বিদেশে থাকা স্বজনদের কাছে নিয়মিত পাঠায় এ মিষ্টি। তাছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেড়াতে এসে ছানামুখী না খেয়ে যান কিংবা না নিয়ে যান এমন মানুষের দেখা পাওয়া কষ্টকর।

মাতৃভান্ডারের সত্বাধিকারি প্রমোদ পাল বলেন, প্রতি কেজি ছানামুখী ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়। জেলার বাইরে থেকেও নিয়মিত ভোক্তারা ছানামুখী কিনতে আসেন।

ছানামুখী কিনতে এসেছেন ক্রেতারা। ছবি: স্টার

মাতৃভান্ডারে ছানামুখী কিনতে আসা নরসিংদীর সাহেবপ্রতাপ এলাকার বাসিন্দা ফজলুল হক বলেন,ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখীর নাম-ডাক অনকেদিন ধরেই শুনে আসছি। এখন বেড়াতে এসে ছানামুখী খাওয়া ও বাড়িতে নিয়ে যাবার লোভ সামলাতে পারিনি।

Comments

The Daily Star  | English
High Court rule to curb air pollution in Dhaka

HC issues rule for curbing air pollution in Dhaka

The HC bench of Justice Kazi Zinat Hoque and Justice Aynun Nahar Siddiqua issued the rule after hearing a writ petition

2h ago