চা বাগানের দাস

tea_graphisc.jpg
চা-শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের এই আলোকচিত্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যেমে ছড়িয়ে পড়েছে। সংগৃহীত ওই আলোকচিত্র অবলম্বনে তৈরি গ্রাফিক্স।

'দেশে চা-শিল্পের ১৬৮ বছরের ইতিহাসে চা-শ্রমিকদের মজুরি ১৬৮ টাকাও হলো না। এখনো আমাদের মজুরি মাত্র ১২০ টাকা। এখন ১ কেজি চাল বা ২ হালি ডিমের সমান।'

কথাগুলো মৌলভীবাজার চা-শ্রমিক সংঘের আহ্বায়ক রাজদেও কৈরীর।

ব্রিটিশ আমলে ১৮৫৬-৫৭ সালে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান থেকে 'গাছ ছিলালে রুপিয়া মেলে'- এমন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সাঁওতাল-মুণ্ডা-খাড়িয়া-ভূমিজ-দেশোয়ালি-ওঁরাও-কন্দ-শবরসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর দরিদ্র মানুষদের এনে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের টিলাভূমিতে চা বাগানের সূচনা করা হয়। সীমাহীন দারিদ্র্যতার মধ্যে দিয়ে এসব শ্রমিককে সেখানে কাজ করতে হতো। বাজারে প্রচলিত মুদ্রাও তখন তাদের কপালে জুটত না। বাগানে ব্যবহারের জন্য এক ধরনের বিশেষ মুদ্রা পেতেন শ্রমিকরা। ফলে তারা বাগানের বাইরে যেতে পারতেন না; বাগানেই তাদের জীবন কাটাতে হতো।

এমন পরিস্থিতিতে শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আজন্মের দাস বণে যাওয়া চা-শ্রমিকরা বার বার গর্জে উঠেছেন। এসব ঘটনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—১৯২১ সালের মুলুক চলো আন্দোলন। ওই আন্দোলন দমাতে চাঁদপুর নদী বন্দরে রাষ্ট্রের বন্দুক ঝাঁঝরা করে দেয় দ্রোহী মুলুকযাত্রী চা শ্রমিক দলকে। শ্রমিকের রক্তে লাল হয়ে ওঠে পদ্মা।

মুলুকযাত্রার পর ১৯৩৮ সালে নারায়ণছড়া চা বাগানে প্রথম সফল চা শ্রমিক ধর্মঘট হয়।

এরপর স্বাধীন বাংলাদেশে চা-শ্রমিকের অধিকার আদায়ে আন্দোলন সংগঠিত করায় ১৯৭২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হত্যা করা হয় শ্রীমঙ্গল থানার সিন্দুর খান চা বাগানের চা-শ্রমিক নেতা বসন্ত বুনারজীকে।

এখন নতুন সহস্রাব্দে এসে বাগানগুলোতে সেই নির্মমতা হয়তো নেই। কিন্তু বঞ্চণার মধ্যেই বাঁচতে হয় উত্তরাধিকার সূত্রে কাজ পাওয়া প্রান্তিক ও বিপন্ন চা-শ্রমিকদের। কেবল ভোট দেওয়ার অধিকার ছাড়া কোনো ধরনের নাগরিক সুবিধা পৌঁছায় না বাগানগুলোতে।

এবার পাতা তোলার ভরা মৌসুমে দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে সাময়িক কর্মবিরতির পর অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটে গেছেন লাখো চা-শ্রমিক।

১৩ আগস্ট সকাল থেকে সিলেট ভ্যালির ২৩টি, হবিগঞ্জের ২৪টি এবং মৌলভীবাজারের ৯২টি বাগানসহ মোট ২৪১টি চা বাগানের শ্রমিক একযোগে এ ধর্মঘট শুরু করেছেন। এই ধর্মঘটের আওতায় শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে বাগানের বিভিন্ন সেকশনে ভূখা মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করছেন।

চা-শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে রচিত কথামালা—

পিঠের ঝুড়িটা ভারি হয়ে ওঠে খুব
পাতার আড়ালে কুঁড়িরা লুকোয় দুখ,
জঠরের খিদে তাই রাজপথে ডাকে
যুগের ক্যামেরা দাসের জীবন মাপে।

শোনো সভ্যরা প্রান্তজনের স্বর
লেবার লাইনে আমাদের কুঁড়েঘর,
ছেঁটে দেওয়া ঊণ-জীবনের হল্লায়
রক্তের নদী পেয়ালায় ছলকায়।

বহুজাতিকের ভাড়াখাটা মহাজন;
দেখে রাখো ভূখা মিছিলের আয়োজন,
দ্যাখো সমকাল, একুশ শতক দ্যাখো 
ভোট নেবে যদি ভাতের যোগাড় রাখো।

নাহলে কিন্তু বিপদ ঘনাবে ঘোর
পুড়তেও পারে বেনিয়ার ঘরদোর।

Comments

The Daily Star  | English

US cuts tariffs on Bangladesh to 20% after talks

The deal for Dhaka was secured just hours before a midnight deadline set by President Donald Trump

3h ago