শিশু-কিশোর

মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে পারে যে ৪ রং

তোমরা তো জানোই এই সময়ে মশার উৎপাত বেশি। ডেঙ্গুর প্রকোপও বেড়েছে। কিন্তু, কোনো বিশেষ রং কি মশা বা কীটপতঙ্গের থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করে? চলো দেখে নিই কী বলছেন গবেষকরা।
মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে পারে যে ৪টি রং
ছবি: রয়টার্স

তোমরা তো জানোই এই সময়ে মশার উৎপাত বেশি। ডেঙ্গুর প্রকোপও বেড়েছে। কিন্তু, কোনো বিশেষ রং কি মশা বা কীটপতঙ্গের থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করে? চলো দেখে নিই কী বলছেন গবেষকরা।

আচ্ছা এমন হলে কেমন হতো বলতো, যদি আমাদের পরা পোশাক মশা তাড়াতে সাহায্য করে। এটি খুব ভালো হতো তাই না? একদল গবেষক এটি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তারা বলছেন, ইয়োলো ফিভারের মশা (এডিস এজিপ্টি) কীভাবে রঙের প্রতি সাড়া দেয়। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, মশারা কিছু রং পছন্দ করে এবং কিছু রং অপছন্দ করে। এই রং পছন্দের বিষয়টি শুধুমাত্র কার্বন-ডাই-অক্সাইডের (CO2) উপস্থিতিতে বিদ্যমান। তোমরা তো জানোই আমরা শ্বাস নেওয়ার সময় কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করি।

গবেষণার প্রধান লেখক জেফ রিফেল বলেছেন, আমাকে করা সবচেয়ে সাধারণ প্রশ্নগুলোর একটি হলো- মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে আমরা কী করতে পারি? গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, পোশাকের রং এবং নতুন মশা-প্রতিরোধী প্রযুক্তির বিকাশে সম্ভাবনা দেখা গেছে।

কোনো রং কি মশাকে আকর্ষণ করে?

গবেষণায় দেখা গেছে, মশারা লাল, কমলা, কালো এবং সায়ান রং পছন্দ করে। যা দৃশ্যমান আলোর বর্ণালীতে সবুজ এবং নীলের মধ্যে থাকে। কিন্তু, তোমাদের হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে, গবেষকরা কীভাবে এটা জানল। রিডার্স ডাইজেস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এজন্য গবেষকরা একটি অত্যাধুনিক ল্যাব তৈরি করেন। এটি নিয়মিত ফিল্টার করা বাতাস এবং মশা দিয়ে পূর্ণ করো হতো। তারপর তারা কার্বন-ডাই-অক্সাইড পাম্প করে ল্যাবের মধ্যে রাখা রঙিন বস্তুগুলোতে মশার প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করেন।

লাল

লাল রং মশাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছে। তুমি হয়তো অবাক হবে, আমাদের ত্বক কিন্তু লাল রঙের আভা দেয়। এক্ষেত্রে ত্বকের টোন বা শেড কী তা বিবেচ্য নয়। আর বিষয়টি মশার কাছে সুস্বাদু লাল ট্রিটের মতো।

কমলা

মশা দীর্ঘ-তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রঙে সাড়া দেয় এবং লাল রঙের সঙ্গে কমলার অনেক মিল আছে। যখন গবেষকরা ল্যাবে দীর্ঘ-তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রং সরাতে ফিল্টার ব্যবহার করেন, তখন মশারা তাতে আগ্রহ দেখায়নি। এমনকি মানুষের হাত দিয়েও পরীক্ষা করা হয়।

কালো

কালো রং মশার খুব প্রিয়। মশারা গাঢ় রংয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ১৯৪০ সালে গবেষকরা দেখিয়েছিলেন, সাদার ওপর মশা একটি কালো রেখাকেও অনুসরণ করতে পারে। যদিও কালোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য নেই, কারণ প্রযুক্তিগতভাবে এটি কোনো রং নয়। তবে এটি তাপ শোষণ করে, যা মশারা পছন্দ করে।

সায়ান

ল্যাবে মশা সায়ান রঙের বস্তুর কাছে উড়েছিল। যদিও দৃশ্যমান আলোর বর্ণালীতে সায়ান নীল এবং সবুজের মধ্যে থাকে। এ কারণে মশারা কোনো পছন্দ দেখায়নি।

কোন রং মশা তাড়ায়

ওই গবেষণায় দেখা গেছে, মশারা নীল, সবুজ, বেগুনি এবং সাদা রঙে আগ্রহ দেখায়নি। তবে মস্কিটো জো-এর প্রযুক্তিগত পরিষেবার পরিচালক ডেভিড প্রাইস বলেন, মশার কামড় এড়াতে স্বতন্ত্র প্রতিরক্ষা হিসেবে এই রঙের পোশাক পরা যথেষ্ট নয়।

মশা যেসব রং এড়িয়ে চলে

নীল

গবেষণায় মশার অপ্রিয় রং ছিল নীল। যদিও রং কতটা গাঢ় তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উদাহরণস্বরূপ নেভি ব্লু তাপ শোষণ করে, যা মশাকে আকর্ষণ করে। এজন্য হালকা রঙের পোশাক পরার পরামর্শ দেন প্রাইস।

সবুজ

গবেষকরা ল্যাবের বাইরে মানুষের হাত নিয়েও পরীক্ষার ফল নিশ্চিত করেন। মশা মানুষের খালি হাতে আগ্রহ দেখিয়েছিল, কিন্তু গবেষকরা যখন সবুজ গ্লাভস পরান তখন মশাগুলো উড়ে যায়।

বেগুনী

আলোর বর্ণালীতে দৃশ্যমান যে কোনো রঙের কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যর একটি বেগুনী। তাই এটি অবাক করা বিষয় নয় যে, মশারা এই রং পছন্দ করেনি। কারণ আমাদের ত্বকের দীর্ঘ-তরঙ্গদৈর্ঘ্যের লাল এবং কমলা রঙের প্রতি মশার ভালোবাসা বেশি।

সাদা

ওই গবেষণা ল্যাবে সাদা ছিল নিয়ন্ত্রণ বস্তু, অর্থাৎ গবেষকরা তুলনা করার জন্য একটি সাদা বস্তুর সঙ্গে ল্যাবের প্রতিটি রংকে যুক্ত করেন। এমনকি ল্যাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড থাকা সত্ত্বেও মশারা তাদের পছন্দসই রঙের মুখোমুখি হলেও সাদা বস্তুটি এড়িয়ে চলে।

সূত্র: ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদন, নাসা, ডেভিড প্রাইস

Comments