বুদ্ধিবৃত্তিক সাংবাদিকতার পথিকৃৎ আবুল মনসুর আহমদ
আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন ওজস্বী ও বুদ্ধিবৃত্তিক সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। ওজস্বিতা ভাষার প্রাঞ্জলতা আর বুদ্ধি বা যুক্তি হলো সত্যনিষ্ঠ বক্তব্য- যা সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে তার ভাষার দক্ষতা নির্মিত হয়েছে মূলত তার দুজন গুরুর সান্নিধ্যে। একজন ফজলুল হক সেলবর্সী আরেকজন ওয়াজেদ আলী। অকপটে দুজন গুরুর ঋণ স্বীকারও করেছেন তিনি।
'আত্মকথা' বইতে লিখেছেন, 'সেলবার্সী সাহেবের লেখা ছিল হৃদয়স্পর্শী উচ্ছ্বাস; তিনি যুক্তিতর্কের ধারে-কাছে যাইতেন না। পক্ষান্তরে ওয়াজেদ আলী সাহেবের লেখা ছিল যুক্তিপূর্ণ, তিনি উচ্ছ্বাসের ধারে-কাজেও যেতেন না। আমি একাধারে ওজস্বিতা ও যুক্তিপূর্ণ বহু সম্পাদকীয় লিখিয়া সাংবাদিক মহলে প্রশংসা অর্জন করিলাম।'
সাংবাদিকতা যে গুরুমুখী বিদ্যা আবুল মনসুর আহমদের আত্মকথায় তা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি ছিলেন চিন্তা ও মননে আধুনিক। সহকর্মী, জ্যেষ্ঠ ও অনুজ ব্যক্তিবর্গের পাশাপাশি তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তার চিন্তা-চেতনাকে ঋদ্ধ করেছে। গ্রহণের ব্যাপারে কোনো কার্পণ্য ছিল না তার।
তিনি জানাচ্ছেন, সাংবাদিক হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তার ছেলেবেলায় ছিল না। যেটা ছিল তা হলো সাহিত্যিক হওয়ার সাধ। আর সেই সময় সাংবাদিকতার জন্য উপযুক্ত পরিপ্রেক্ষিতও ছিল না। তৎকালীন পূর্ব বাংলার ময়মনসিংহে তার জন্ম ও বেড়ে উঠা। আর খবরের কাগজের কেন্দ্র কলিকাতা। তিনি লিখছেন, 'একটা কিছু চাকরি জোগাড়ের মতলবেই কলিকাতা গিয়াছিলাম। তবে সাংবাদিকতার দাবি ছিল সবার আগে।'
আবুল মনসুর আহমদ সাংবাদিকতা করেছেন ২৫ বছর এবং একে চারটি ভাগে ভাগে করেছেন। প্রথমভাগে তিনি মাসিক 'আল-এসলাম'-এ প্রবন্ধ ও 'সওগাত'-এ গল্প লিখতে শুরু করেন। তার লিখিত ছোট ছোট সম্পাদকীয় মন্তব্য, দার্শনিক ও রাজনৈতিক প্রবন্ধগুলো মুসলিম সাংবাদিকদের নজর কাড়ে।
তিনি মনিরুযযামান ইসলামবাদীর 'ছোলতান'-এ যোগ দেন ১৯২৩ সালে। এর মধ্য দিয়ে তার সাংবাদিকতায় গোড়াপত্তন হয়। এখানে দেড় বছর কাজ করেন সহ-সম্পাদক হিসেবে। এ সময় তিনি সম্পাদকীয় লেখার পাশাপাশি রাজনৈতিক প্যারোডি ও স্যাটায়ার লেখা শুরু করেন। আবুল কালাম শামসুদ্দীনসহ সেই সময়কার প্রখ্যাত সাংবাদিকদের সঙ্গে আবুল মনসুর আহমদের সখ্য গড়ে উঠে।
তার লেখায় সন্তুষ্ট হয়ে মওলানা আকরম খাঁ মনিরুযযামান ইসলামবাদীর কাছ থেকে সাপ্তাহিক 'মোহাম্মদী'র জন্য আবুল মনসুর আহমদকে চেয়ে নেন। এ সময় তিনি ওজস্বিতা ও যুক্তিপূর্ণ বহু সম্পাদকীয় লিখে সাংবাদিক মহলে সুখ্যাতি ও মওলানা আকরম খাঁর প্রশংসা অর্জন করেন। তার লেখা 'রক্তচক্ষু' 'বজ্রমুষ্টি' ও 'সিংহ নিনাদ' উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।
আবুল মনসুর আহমদ কেবল সম্পাদকীয় লিখতেন না। সংবাদ ব্যবস্থাপনা ও সম্পাদনা, শিরোনাম লেখা, সংবাদের ট্রিটমেন্ট ও মেকআপ নিবিড়ভাবে দেখতেন। তিনি কম্পোজিটর ও মেশিনম্যানদের সঙ্গে থেকে কাজ করেছেন। এ সময় তিনি লক্ষ্য করেন সাংবাদিকতায় জ্যেষ্ঠরা অনুজদের কাঁধে দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে পছন্দ করেন। তিনি মন্তব্য করেন, 'জুনিয়র স্তরের এ খাটুনি তার জীবনে খুব কাজে লেগেছিল'।
আবুল মনসুর আহমদ কপি এডিট করতে খুব পছন্দ করতেন। এ বিশেষ গুণটি তিনি শাণিত করেছেন চর্চার মধ্য দিয়ে। তিনি মন্তব্য করেন, 'সম্পাদনার কাজ অনেকে সহজ মনে করেন। আসলে তা মোটেও সহজ নয়।'
এ প্রসঙ্গে মজার যে তথ্য তিনি উল্লেখ করেছেন তা হলো, তখন 'কলিকাতার' সবগুলো বাংলা দৈনিক কাগজই ছিল 'হিন্দুদের দ্বারা সম্পাদিত ও পরিচালিত'। আবুল মনসুর আহমদ মন্তব্য করেন 'এ সময় বাংলা ভাষাকেও আমাদের "মুসলমানি" করে নিতে হতো; যেমন-'জল'-কে 'পানি' 'ঈশ্বর'-কে 'আল্লাহ', 'পৌরহিত্য'-কে 'এমামতি', 'অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া'-এর পরিবর্তে 'কাফন-দাফন' ইত্যাদি। তিনি জানান, মুসলমান পাঠকদের জন্য সাপ্তাহিক চালাতে গিয়ে ওইসব ভাষিক সংশোধন অত্যাবশ্যক ছিল।'
বাংলা ভাষায় সংবাদপত্র বিকাশের ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের আধিপত্য নানাভাবে তার লেখায় উঠে এসেছে। মুসলমানদের পক্ষে সংবাদপত্র প্রকাশ করা বা সাংবাদিকতার চাকরি পাওয়া কতো দুরূহ ছিল তা তুলে ধরেছেন তিনি। শুধু তাই নয় হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত সংবাদপত্রগুলো মুসলমানদের সংবাদপত্রের প্রকাশ ও প্রচারের ব্যাপারে কতো সমালোচনাত্মক ছিল, তাও তুলে ধরেছেন।
ব্রিটিশদের শাসনাধীন থাকায় এ সময় সংবাদপত্র সম্পাদনার ক্ষেত্রে মানহানি বা রাষ্ট্রদ্রোহ এড়াতে সম্পাদনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সর্তকতা অবলম্বন করতে হতো। তিনি লেখেন, 'প্রুফরিডিং কেবল টেকনিক্যাল জ্ঞানের বিষয় নয়, এটা একটা বিশেষ আর্ট, জ্ঞানের চেয়ে দক্ষতা ও নিপুণতা যে এ কাজে অধিক আবশ্যক।'
সংবাদপত্র হাউসের কুটিল রাজনীতির প্রথম শিকার হন তিনি মোহাম্মদীতে। তাকে ভালোবেসে ও পছন্দ করে মওলানা আকরম খাঁ উচ্চ বেতনে মোহাম্মদীতে চাকরি দিয়েছিলেন। কিন্তু খুব সামান্য এক ঘটনায় আবুল মনসুর আহমদকে মোহাম্মদী থেকে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়।
বিষয়টি ছিল মওলানা আব্দুল্লাহিল কাফী 'সত্যাগ্রাহী' বের করলে আবুল মনসুর আহমদ সেখানে মাঝে মাঝে যেতেন। মওলানা আকরম খাঁ এটি ভালোভাবে নেননি। এটি 'আত্মকথা'য় উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'কোনোও মুসলমান নতুন বাংলা কাগজ বের করলে মওলানা আকরম খাঁ অসন্তুষ্ট হতেন, এটা তাঁর বরাবরের দুর্বলতা।' চাকরি হারিয়ে আবুল মনসুর আহমদ চোখে অন্ধকার দেখেন। তবে তিনি উপলব্ধি করেন চোখে অন্ধকার দেখে লাভ নেই।
এরপর তিনি পঁয়ষট্টি টাকা বেতনে মৌলবী মুজিবর রহমানের 'দ্য মুসলমান'-এ যোগ দেন। মৌলবী মুজিবর রহমান তাকে এক মাসের বেতন অগ্রিম দেন। তা নিয়ে তিনি লিখেছেন- 'মনে হলো গায়ের চামড়া দিয়ে মৌলবী সাহেবের পায়ের জুতা বানাই দিলেও এ ঋণ শোধ হবে না।' পরবর্তী চার বছর তিনি 'দ্য মুসলমান'-এ কাজ করেন।
এ সময় আবুল মনসুর আহমদ মৌলবী সাহেবের কাছ থেকে সমালোচনার ব্যাকরণ শেখেন। মৌলবী সাহেবকে উদ্ধৃত করে তিনি লিখেছেন, 'তুমি জান একজন মিথ্যা কথা বলছেন, তার কথা লিখিতে গিয়ে কখনও লিখিও না তিনি মিথ্যাবাদী বা তিনি মিথ্যা কথা বলেছেন। বরং তার বদলে লিখবে, তিনি সত্যবাদী নন।' এ শিক্ষা আবুল মনসুর আহমদের পরবর্তী জীবনে পথের দিশারীরূপে কাজ করেছে। মৌলবী সাহেব পরবর্তীতে 'খাদেম' নামে বাংলা সাপ্তাহিক বের করলে আবুল মনসুর আহমদকে সম্পাদনার দায়িত্ব দেন।
ইতোমধ্যে আবুল মনসুর আহমদ ওকালতি পাস করেন। প্রথম পর্যায়ের সাংবাদিকতা শেষ করে ময়মনসিংহে আইন পেশায় যোগ দেন। ফলে সাংবাদিকতায় তার দশ বছর ছেদ পড়ে। দ্বিতীয় পর্যায়ে এসে ১৯৩৮ সালে তিনি দৈনিক 'কৃষক'-এ প্রধান সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। আবুল মনসুর আহমদের রাজনৈতিক মতবাদ কৃষক অধিকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তার উদারনৈতিক প্রকাশনা নীতির ফলে 'কৃষক' কলকাতার হিন্দুদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
একপর্যায়ে 'কৃষক' অর্থাভাবে পড়ে। আবুল মনসুর আহমদ লিখেছেন, 'বিপদই মানুষের বড় শিক্ষক।' 'কৃষক'-এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি সংবাদপত্র, সাংবাদিকতা, সংবাদশিল্পী, সংবাদ-বাণিজ্য—সকল দিক সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করেন।
'কৃষক'- কে বাঁচাতে অর্থসংগ্রহের জন্য তিনি মাঠে নেমেছেন, ছাপাখানার আধো-অন্ধকার পরিবেশ, গরমের মধ্যে কম্পোজিটার, মেশিনম্যানের কাঁধের কাছে দাঁড়িয়ে কাজ দেখেছেন। কম্পোজিটাররা সংকীর্ণ ও আলো-বাতাসহীন কুঠুরিতে বসে দিনরাত শিসা হাতিয়ে কীভাবে শরীর, স্বাস্থ্য ও চোখ নষ্ট করছে দেখে তিনি শিহরিত হয়েছেন। প্রতিজ্ঞা করেছেন, অভাব দূর হলে তাদের জন্য দু-চারটা ফ্যানের ব্যবস্থা করবেন। 'কৃষক'-এ পারেননি, তবে পরবর্তীতে অন্যত্র তা করেছেন।
আবুল মনসুর আহমদ 'কৃষক' চালাতে গিয়ে দুটো বিষয় শিখেছেন বলে আত্মকথায় উল্লেখ করেছেন; (১) সংবাদপত্র পরিচালনা এবং ইন্ডাস্ট্রি; এতে প্রচুর মূলধন লাগে; (২) ধনীতন্ত্র সমাজে অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রি যেমন সংবাদপত্রও তেমন, যার টাকা তিনিই মালিক। এ সময় একটি বড় বিতর্ক উঠে খবরের কাগজে কার মত অনুসারে চলবে: মালিক? না সম্পাদকের।
'কৃষক'-এ সম্পাদকীয় লেখেন, 'মালিকের মত চলবে।' তার মতে, সাংবাদিকতা ওকালতির মতোই একটি পেশা। এটা মিশনারির মতো আদর্শ সেবা নয়। যার টাকা তার কর্তব্য। সাংবাদিক সেক্ষেত্রে মালিককে সদুপদেশ দিতে পারেন মাত্র। মালিক যদি সে উপদেশ না রাখেন, তবে সাংবাদিককে কাগজের মালিকের কথা লিখতে হবে। এ ছিল আবুল মনসুর আহমদের স্পষ্ট অবস্থান।
সাংবাদিকতার তৃতীয় পর্যায়ে আবুল মনসুর আহমদ ১৯৪১ সালে 'নবযুগ' সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। সম্পাদক নির্ধারণে শেরে বাংলা ফজলুল হকের নানামুখী অবস্থান, হক সাহেবের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ইত্যাদি বিষয়ে আবুল মনসুর আহমদের ব্যক্তিগত সংকট বাড়তে থাকে। মালিকানা নিয়ে শুরু হয় নানাধরনের ষড়যন্ত্র। এমতাবস্থায় তিনি নবযুগের সঙ্গে ছয় বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
চতুর্থ পর্বে ১৯৪৭ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি 'ইত্তেহাদ'-এ সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। আবুল মনসুর আহমদের নবযুগের অভিজ্ঞতা ছিল সবচেয়ে সুখকর। জনপ্রিয় রাজনৈতিক মতবাদের সমর্থন, সু-সম্পাদনা, সুন্দর ছাপা, কাগজ, সাইজ ও নিয়মিত প্রকাশনার কারণে তা দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। আবুল মনসুর আহমদ উল্লেখ করেছেন-সাংবাদিকতার পঁচিশ বছরের অভিজ্ঞতা তিনি ইত্তেহাদে প্রয়োগের চেষ্টা করেন।
ইত্তেহাদে তিনি সাংবাদিকদের হাতে-কলমে শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। প্রতিদিন সম্পাদকীয় টেবিলে আলাপ-আলোচনা, পাঠক মজলিস, হেডলাইন, ডিসপ্লে, মেকআপ, গেটআপ, টাইপ বিতরণ, প্রুফ রিডিং-এর ফলে ইত্তেহাদ অতিদ্রুত কলকাতায় শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় দৈনিকে পরিণত হয়।
মূলত সার্কুলেশনের কারণে ইত্তেহাদের শক্র বেড়ে যায়। দুবার দীর্ঘসময়ের জন্য এবং শেষবার অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ব বাংলায় ইত্তেহাদ নিষিদ্ধ করা হয়। পূর্ব বাংলার সরকার ইত্তেহাদ প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করলে ১৯৫০ সালে এর অপমৃত্যু ঘটে। এরপর আবুল মনসুর আহমদ ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সালে বিভিন্ন বাংলা ও ইংরেজি কাগজে কলাম লিখে সাংবাদিকতা চালিয়ে নেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, আবুল মনসুর আহমদ সাংবাদিকতায় পেশাগত দক্ষতার জন্য কখনো প্রশ্নের মুখে পড়েননি বরং অনেকসময় মালিক ও হাউসের সহকর্মীদের কূটকৌশলের শিকার হয়েছেন। সাংবাদকিতায় নৈতিকমান অনুসরণের ব্যাপারে তিনি কখনও পিছপা হননি। নীতির প্রশ্নে ছিলেন অটল। এই পেশার প্রতি ছিল তার গভীর অনুরাগ। তিনি পেশাগত উৎকর্ষের ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন।
সাংবাদিকতায় আবুল মনসুর আহমদের যে অঙ্গীকার স্পষ্ট তা হলো, জনমানুষকেন্দ্রীকতা। তিনি রাজনীতি সচেতন ছিলেন, রাজনীতি করতেন। রাজনীতি, সাহিত্য ও সাংবাদিকতার ত্রিমুখী ধারা তার রক্তে ছিল বহমান। এ ত্রি-মাত্রিক ব্যাকরণ আবুল মনসুর আহমদের মনোকাঠামো নির্মাণ করেছে। তিনটি করতাল তিনি সমানতালে বাড়িয়েছেন। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের অধিকার ছিল তার লেখার মূল আধেয়। পাশাপাশি লিখেছিলেন রাজনৈতিক নিপীড়ন, অন্যায্যতা, দুর্নীতি ও নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে। আরও লিখেছেন সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে।
আবুল মনসুর আহমদ পূর্ব বাংলার ময়মনসিংহ অঞ্চলের সন্তান। ছয় ফুট লম্বা এ ব্যক্তিত্ব দাপটে কলকাতার সাংবাদিকতার মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। তবে তার এ বিচরণ নিষ্কণ্টক ছিল না। তার ধারালো ভাষা, সৃজনশীলতা ও সংবেদী মন মফস্বলের পরিচয় ভুলিয়ে দিতে সাহায্য করেছে। কলকাতার সাংবাদিকতার জগতে এক শক্ত অবস্থান গাড়তে সাহায্য করেছে।
তাকে অনগ্রসর মুসলমান সমাজের অবস্থা দারুণভাবে ভাবিয়েছে। সাংবাদিকতায় মুসলমান যুবকদের স্বল্পতা নিয়ে তিনি ভাবতেন। আবুল মনসুর আহমদ পিছিয়ে পড়া মুসলমান যুবকদের সাংবাদিকতায় আসতে ও কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে প্রণোদনা দিয়েছেন, সফল হয়েছেন।
আবুল মনসুর আহমদ বিশ্বাস করতেন সাংবাদিকতা নিছক সংবাদ সরবরাহ নয়, সংবাদের সুষ্ঠু ব্যাখ্যাও বটে। অতএব সংবাদ প্রকাশে নিরপেক্ষতা চাই। তিনি আরও মনে করতেন, 'সাংবাদিকতায় সমালোচনার ভাষা যত বেশি ভদ্র হইবে, সমালোচনা তত তীব্র ও ফলবতী হইবে।'
তিনি আরও বিশ্বাস করতেন, সাংবাদিকতা সাহিত্য, আর্ট, সায়েন্স, ইন্ডাস্ট্রি ও কর্মাসের সমবায়। এর একটার অভাব হলে সাংবাদিকতা ক্রটিপূর্ণ এবং পরিণামে নিষ্ফল হইবে। তার কলম থেকে যে দ্যুতি বিচ্ছুরিত হয়েছে তার নিবিড় পাঠ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও জরুরি।
খান মো. রবিউল আলম: লেখক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ
Comments