মধুসূদন দত্ত শিক্ষক হিসেবে যেমন ছিলেন
শিক্ষকতা পেশা নিয়েই শুরু হয়েছিল মাইকেল মধুসূদন দত্তের কর্মজীবন। কবি হিসেবে তিনি যেমন শক্তিমান; শিক্ষক হিসেবেও তার কৃতিত্ব কম নয়। ভালো ইংরেজি জানতেন। শুধু 'ভালো' বিশেষণটা ব্যবহার করলে অবিচার করা হবে; তার সময়ে তার মতো ভালো ইংরেজি জানা বাঙালির সংখ্যা ছিল খুব কম। তবে শিক্ষকতার সময় স্কুলে তাকে শুধু ইংরেজি পড়াতে হতো না। তাকে ইতিহাস, ভূগোল, ভাষা সাহিত্যসহ অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বাইবেলও পড়াতে হতো।
১৮৪৭ সালের শেষদিকে মধুসূদন কলকাতার বিশপস কলেজ ছেড়ে ভাগ্যান্বেষণে মাদ্রাজ রওনা হন। কুড়ি দিন সমুদ্রপথে অবস্থানের পর ১৮৪৮ সালে ১৮ জানুয়ারি মাদ্রাজ উপকূলে পৌঁছান তিনি। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে অথবা মার্চ মাসের প্রথম দিকে মাদ্রাজ শহরে অবস্থিত মাদ্রাজ মেল অরফ্যান অ্যাসাইলাম স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন মধুসূদন।
সে সময়ে মাদ্রাজে বাঙালিদের বসবাস কম ছিল। কিন্তু মধুসূদন এখানকার খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সহযোগিতা পেয়েছিলেন। বিশপস কলেজে তার বন্ধু এগবার্ট কেনেট আগেই মাদ্রাজে ফিরে এসেছিলেন। মধুসূদন বিশপ হতে চেয়েছিলেন। কলকাতা অবস্থানকালে মাদ্রাজের একজন বিশপের সাথে তার পরিচয় হয়েছিল। যে বিশপও তাকে চাকরি দিতে চেয়েছিল বলে, তার ওপর ভরসা করেই মধুসূদন মাদ্রাজ আসেন। কিন্তু মধুসূদনের ধর্মীয় চেতনা সম্পর্কে বিশপদের ধারণা খুব উঁচু ছিল না। তারা মধুসূদনের মধ্যে ধর্ম বিষয়ে যে অধিক আগ্রহ দেখেছেন, তা একমাত্র নিজের প্রতিষ্ঠার জন্য, এটা তারা বুঝতে পেরেছিলেন। অধ্যাপক স্ট্রিটের কথায় 'এ এক আত্মপ্রবঞ্চিত মধুসূদন।' তাই মাদ্রাজের বিশপরা তাকে যাজক হওয়া বা অন্য কোনো চাকরির ব্যাপারে খুব সাহায্য করেননি, এটা স্পষ্ট। তবে কে তাকে সাহায্য করেছিলেন স্কুলের চাকরির জন্য?
গবেষক গোলাম মুরশিদ জানিয়েছেন, 'তার মাদ্রাজ যাওয়ার কথা তিনি দু-তিন জনকে বলেছিলেন। এই দু-তিন জনের মধ্যে একজন ছিলেন মি. টমাস ডিয়ালট্রি। কিন্তু তা সত্ত্বেও মাদ্রাজের বিশপ তাকে সাহায্য করেছিলেন বলে কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই। তবে তিনি সেখানে সাহায্য পেয়েছিলেন অন্য সূত্র থেকে, কেনেট পরিবার থেকে। এগবার্ট কেনেট তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মাইকেলকে কোনো চাকরি দেওয়ার সম্ভব হবে কিনা, এ নিয়ে এগবার্ট এবং তার পিতার মধ্যে আগেই আলাপ হয়েছিল। এ প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায়। এগবার্ট কেনেটের পিতা চার্লস কেনেট ছিলেন অরফ্যান অ্যাসাইলামের সেক্রেটারি। মাইকেল এই অ্যাসাইলামের বয়েজ স্কুলের 'আশার' অর্থাৎ সহকারী শিক্ষকের চাকরি পেয়েছিলেন। মাইকেলের চাকরি নিতান্ত সাধারণ এবং তার বেতন অথবা সম্মান কোনোটাই স্পর্ধা করার মতো নয়। কিন্তু একটা অপরিচিত জায়গায় কোনোমতে মাথা গোঁজার ব্যাপারে পরিবেশ তার জন্যে বেশ অনুকূলে ছিল। অনুকূল ছিল না তার ভাগ্য। তিনি সেখানে গিয়ে স্থির হয়ে বসতে না বসতেই তার বসন্ত হয়েছিল। তখন যে অপরিচিত বিভূঁইয়ে কপর্দকহীন অবস্থায় মারা যাননি, তা থেকেও পূর্ব পরিচিতদের সাহায্যের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।'২ গোলাম মুরশিদ মাদ্রাজে মধুসূদনের প্রতিষ্ঠায় তার বন্ধু কেনেটের যে অবদানের কথা বলেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে।
কেননা মধুসূদন মাদ্রাজ থেকে বন্ধু গৌরদাস বসাককে চিঠিতে জানিয়েছেন, 'এখানে (মাদ্রাজে) এসে পৌঁছানোর পর থেকে একটু দাঁড়াবার জায়গা খোঁজ করবার জন্য আমাকে অনেক প্রকার চেষ্টা করতে হয়েছে। এ কথা মনে রেখ, একজন স্বজনহীন অজ্ঞাতকুলশীল ব্যক্তির পক্ষে এ কাজ খুব সহজ নয়। যা হোক ধন্যবাদ ঈশ্বরকে, আমার দুর্দশা কিছুটা দূর হয়েছে। এখন আমি নিজেকে এভাবে ভাবতে শুরু করেছি যে, আমি যেন একটা জাহাজের কর্ণধার, যে ভীষণ ঝড়-ঝঞ্ঝার পরে কিছুটা নিরাপদ আশ্রয়ে নোঙর ফেলতে পেরেছে।'
মাদ্রাজ পৌঁছানোর এক বছর পর বন্ধুকে লেখা এ চিঠি থেকে বুঝা যায়, মাথা গোঁজার মতো একটু ঠাঁই খুঁজে পেতে মধুসূদনকে কম কষ্ট করতে হয়নি। তিনি যখন নিজেকে বলেন 'স্বজনহীন' তখন বন্ধু এগবার্ট কেনেট পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন বলে মনে হয় না। নিজেকে খ্রিষ্টান ও বিশপস কলেজের ছাত্র পরিচয় দিয়ে, নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে শিক্ষক হয়েছিলেন। সেখানে কেনেটের যদি কোনো অবদান থাকে, তা নিতান্তই গৌণ।
১৮৪৮ সালের প্রথম ভাগে মধুসূদন যখন অ্যাসাইলাম স্কুলের শিক্ষক নিযুক্ত হন, তখন স্কুল থেকে বিদায় নিচ্ছেন সেখানকার একমাত্র শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক জে সি রে নেইলর। তার বিদায়ে শূন্যপদে অভিষিক্ত হন মধুসূদন। তবে মধুসূদনকে তারা প্রধান শিক্ষক হিসেবে নয়, নিয়োগ দিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে। বেতন নির্ধারিত হলো মাত্র ৪৬ টাকা, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুব বেশি নয় বলে জানিয়েছেন মধুসূদনের জীবনীকারগণ। মধুসূদন নিজেই জানিয়েছেন 'গরীব স্কুলের সামান্য একজন শিক্ষক।' তারপরও সেই সময়ের তুলনায় এ বেতন একদম কম নয়। জীবন ধারণের জন্য যথেষ্ট হলেও মধুসূদনের মতো উদারহস্ত মানুষের কাছে প্রয়োজনের তুলনায় খুব বেশি নয়। বেতন সামান্য হলেও মধুসূদনকে চাকচিক্যময় ইউরোপীয় পোশাক পরতে হতো। মধুসূদন বলেছেন 'তাকে একজন ট্যাঁশ ফিরিঙ্গি বলে চালিয়ে দেওয়া যায়।'
সুরেশচন্দ্র মৈত্র তার 'মাইকেল মধুসূদন দত্ত : জীবন ও সাহিত্য' গ্রন্থে জানিয়েছেন, অ্যাসাইলামে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা আলাদা স্কুল ছিল। মধুসূদন মেল অ্যাসাইলামের শিক্ষক ছিলেন। এর পাশেই ছিল লেডিস ইনস্টিটিউট। মধুসূদনের প্রেমিকা, পরবর্তী সময়ে স্ত্রী রেবেকা ম্যাকটাভিস এই ইন্সটিটিউটের ছাত্রী ছিলেন। গোলাম মুরশিদ তার 'আশার ছলনে ভুলি' গ্রন্থে জানিয়েছেন- বয়েজ স্কুল হলেও এই স্কুলে মেয়েদের পড়ানো হতো। ফিমেল অরফান অ্যাসাইলামের পরিচালকরা ভিন্ন স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিলেও ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দের আগে মেয়েদের জন্য ভিন্ন স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়নি।
১৮৫০ সালের যে পাঠ্যক্রম আমরা পাই তা দেখে অবাক হই। ইংরেজি ভাষার এসব পাঠদান পণ্ডিত মধুসূদনের পক্ষে কঠিন কিছু ছিল না। কঠিন ছিল এতগুলো বিষয় পড়াতে সময়ে কুলিয়ে ওঠা। তারপরও সংবাদপত্রের জন্য লেখালেখি, প্রুফ দেখা এসবের পাশাপাশি মধুসূদনকে কত না পরিশ্রমই করতে হতো!
স্কুলের পাঠদানের সময় ছিল সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছেলেদের। আর মেয়েদের সময় ছিল দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এ স্কুলে ক্লাসের বাইরে নির্দিষ্ট ওয়ার্কসপে হাতেকলমে ছেলেদের বিভিন্ন কাজকর্ম শেখানো হতো। জুতো সেলাই-তৈরি থেকে চেয়ার-টেবিল তৈরির মতো সব কাজকর্ম শেখাতে হতো। আর মেয়েদের শিখতে হতো সেলাইয়ের কাজ। এসবের জন্য ছিল আলাদা প্রশিক্ষক। ইংরেজি সাহিত্য, ইংল্যান্ড-ইউরোপের ইতিহাস, ভূগোল, বানান শিক্ষা, ব্যাকরণ, তামিল-তেলেগু ভাষাসহ মধুসূদন বাইবেল পড়াতেন। আশ্চর্যের বিষয় বৈ-কি! নব্য খ্রিষ্টান মধুসূদন বাইবেলের শিক্ষক!
অ্যাসাইলাম স্কুলের চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে ১৮৫২ সালে মধুসূদন মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তবে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি হতে পারেননি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাইস্কুল বিভাগের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আপত্তির কারণে তার সাংবাদিক জীবনের ছেদ পড়ে এ সময়। স্বাধীনচেতা সাংবাদিক মধুসূদন, শিক্ষক হিসেবে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করবেন কিনা, এ ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মধুসূদন চেষ্টা করেছিলেন সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতা একই সাথে চালিয়ে যেতে কিন্তু পারেননি। সাংবাদিকতা থেকে বিদায়ের খবরে বিখ্যাত 'Athenaeum' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি মধুসূদন সাংবাদিকতা করতেন। মাদ্রাজে এসে প্রথমে তিনি 'Madras Circulator' পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। এ পত্রিকাসহ মাদ্রাজের বিভিন্ন পত্রিকায় তিনি নিয়মিত কবিতা, প্রবন্ধ, উপসম্পাদকীয় লিখতে থাকেন। ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মাদ্রাজের সাপ্তাহিক 'Eurasion' পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। মাদ্রাজ সার্কুলেটর, এথেনিয়ামসহ বিভিন্ন পত্রিকায় মধুসূদনের পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখালেখি দেখে এখানকার বিশিষ্ট সংবাদপত্রসেবী মি. অ্যাবলপেন সিমকিন্স মধুসূদনের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তাকে পত্রিকায় চাকরি দেন। ইউরেশিয়ান পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যা থেকেই ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে মধুসূদনের কাব্য নাটক 'Rezia: Empress of Inde'। তার আগে মাদ্রাজ সার্কুলেটর পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় মধুসূদনের প্রথম কাব্য ইংরেজি ভাষায় রচিত 'The Captive Ladie'. একজন যোগ্য শিক্ষকের পাশাপাশি কবি ও সাংবাদিক হিসেবে এ সময়ে মধুসূদন মাদ্রাজের সুধী-সমাজে আলোচিত ব্যক্তি হয়ে ওঠেন।
আমরা জানি, মধুসূদন মাদ্রাজ হিন্দু ক্রনিকাল পত্রিকা ছেড়ে আসার কয়েক মাসের মধ্যে এটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। সম্পাদক হিসেবে মধুসূদন যে খ্যাতি সম্মানের আসনে ছিলেন, তার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল শিক্ষক হিসেবে খ্যাতি ও সম্মান বেশি ছিল না। তার বেতন ছিল ১৫০ টাকা। আগের বেতন ৪৬ থেকে প্রায় সোয়া তিন গুণ বেশি। প্রথম শিক্ষক বা প্রথম টিউটর হলে পেতেন দুইশত পঞ্চাশ টাকা। আর কলেজের শিক্ষক বা ইন্সপেক্টর হলে বেতন হতো পাঁচশত টাকা। তবে মধুসূদন একটা বড় ধরনের আশা ও প্রত্যাশা বুকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন। তার ধারণা ছিল তিনি 'Captive Ladie' এর মতো আলোচিত কাব্যের কবি, একটা উঁচুমানের সংবাদপত্রের সম্পাদক, নামজাদা সাংবাদিক। একটা ভালো জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে রাখবেন। কারণ এ রকম একটা প্রত্যাশার কথা কয়েক বছর আগে যিনি বন্ধুকে জানিয়েছিলেন। মাদ্রাজের এডভোকেট জেনারেল নর্টন ছিলেন তার বন্ধু। যার নামে তিনি তার প্রথম কাব্য 'Captive Ladie' উৎসর্গ করেছিলেন। নর্টনের প্রতি কবির প্রত্যাশা ছিল অনেক। তার কথা নিয়ে ১৮৪৯ সালে বন্ধু গোরৗদাস বসাককে চিঠিতে জানিয়েছিলেন...
'এ কথা শুনে তুমি বিস্মিত হবে, সত্যিই বিস্মিত হবে যে, এডভোকেট জেনারেল নর্টন লোক পাঠিয়ে আমাকে খবর দিয়েছেন। আমি আশা করেছিলাম, বৃদ্ধ ভদ্রলোক তার অধিক সম্মান আমাকে দিয়েছেন এবং এখন যে কাজ করছি তার যে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং আমার সম্বন্ধে বিভিন্ন বিষয়ে তিনি জেনেছেন। আমার জন্য বর্তমান পদের চেয়ে অধিক সম্মানজনক ও আর্থিক সুবিধার কোনো সরাসরি কাজের জন্য চেষ্টা করবেন বলে কথাও দিয়েছেন। মনে হয় ঢাকা, বারানসী, হুগলী প্রভৃতি স্থানের মতো এখানে প্রভিন্সিয়াল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। খুব সম্ভাবনা রয়েছে আমাকে প্রধান শিক্ষক বা ইন্সপেক্টরের পদ দেবার।'
প্রত্যাশা অনুযায়ী মধুসূদনের ভাগ্যে খুব সম্মানজনক পদ জোটেনি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের দ্বিতীয় শিক্ষক। পদটি সরকারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই যথাযথ সম্মানজনক না হলেও মধুসূদন ক্ষীণ আশার রশিটা ধরে রেখেছিলেন। ১৮৫৬ সালে থেকে শিক্ষকতার পদ জাতীয়করণ হয়। ১৮৫৫ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন, তিন বছর চাকরি করে তা তিনি ছেড়ে দেন অথবা তিনি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার অল্প সময়ের মধ্যে তার পদবি জাতীয়করণ হল।
জানি না তিনি কেন চাকরি ছেড়েছিলেন। হয়ত ঘরে স্ত্রী-সন্তান থাকা সত্ত্বেও মাদ্রাজ স্কুলে তার সহকর্মী জজ হোয়াইটের কন্যা হেনরিয়েটার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে তাকে চাকরি ছাড়তে হয়েছিল। এমনও হতে পারে স্কুলে কোনো বৈষম্যের প্রতিবাদে মধূসূদন চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছিলেন। মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়েও বর্ণ বৈষম্য ছিল। ১৮৫১ সালে এক নিম্নবর্ণের ছাত্র ভর্তি হলে তার প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য শ্রীযুক্ত পিল্লে পদত্যাগ করেছিলেন। মাদ্রাজে এ ধরনের সমাজপতিদের পক্ষে মধুসূদনকে মেনে না নেওয়াই স্বাভাবিক। স্কুলের চাকরি ছেড়ে মধুসূদন আবার ফিরে আসেন সংবাদপত্র জগতে। 'Madras Spectator' দৈনিক পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসেবে ১৮৫৫ সালে আগস্ট মাসে তিনি যোগদান করেন। স্কুলের চাকরি ছাড়ার পর চার মাস তাকে বেকার থাকতে হয়েছিল।
পরে ১৮৫৬ সালে মথ্থুস্বামী স্কুল ইন্সপেক্টর পদে চাকরি পান। যে চাকরির জন্য মধুসূদনকেও আমরা তদবির করতে দেখি। মথ্থুস্বামী পরবর্তীকালে হাইকোর্টের জর্জ হয়েছিলেন এবং ইংরেজ সরকার কর্তৃক 'স্যার' উপাধি অর্জন করেছিলেন। মথ্থুস্বামী সারাজীবনে তার শিক্ষক মধুসূদনের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেছেন। ১৮৫৬ সালে মধুসূদন মাদ্রাজ থেকে কলকাতায় ফিরে হুগলী নর্মাল স্কুলে প্রধান শিক্ষক পদের জন্য চেষ্টা করেছিলেন, হয়নি। কিন্তু শিক্ষকতায় বরাবরই সাচ্ছন্দ্যবোধ করেছেন।
Comments