কবি আল মাহমুদের ৮৮তম জন্মদিন 

ছবি: সংগৃহীত

আম্মা বলেন পড়রে সোনা আব্বা বলেন মন দে/ পাঠে আমার মন বসে না কাঁঠালচাঁপার গন্ধে। /আমার কেবল ইচ্ছে করে নদীর ধারে থাকতে/বকুল ডালে লুকিয়ে থেকে পাখির মতো ডাকতে। অথবা- আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেলো শেষে/হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে। নদীর কাছে গিয়েছিলাম আছে তোমার কাছে/ হাত দিও না আমার শরীর ভরা বোয়াল মাছে/ ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ/ দুপুর বেলার অক্ত/ বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায়?  বরকতেরই রক্ত।

এমন অসংখ্য কালজয়ী কবিতার স্রষ্টা আল মাহমুদ। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এই কবির ৮৮তম জন্মদিন আজ। তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন ১১ জুলাই ১৯৩৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বাবা মীর আবদুর রব। মা রওশন আরা মীর। স্ত্রী সৈয়দা নাদিরা বেগম। পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ের জনক তিনি।

কুমিল্লার দাউকান্দির সাধনা হাই স্কুল এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। কাজ করেছেন শীর্ষস্থানীয় অনেকগুলো দৈনিক পত্রিকায়। তারপর কাজ করেন শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগে। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর তিনি পরিচালক হন। পরিচালক হিসেবে ১৯৯৩ সালে অবসর নেন।

সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকা এবং কলকাতার নতুন সাহিত্য, চতুষ্কোণ, ময়ূখ ও কৃত্তিবাস ও বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত 'কবিতা' পত্রিকায় লেখালেখির সূত্রে ঢাকা-কলকাতার পাঠকদের কাছে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে এবং তাকে নিয়ে আলোচনার শুরু। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'লোক লোকান্তর' প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে এবং কবিতার বই 'সোনালী কাবিন'র মাধ্যমে সাহিত্য প্রেমীদের মনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন এই কবি। এক জীবনে কবিতা লিখে পেয়েছেন মানুষের ভালোবাসা, খ্যাতি ও সম্মাননা। 

বাংলা সাহিত্যে আধুনিক কবিতায় লোকজ উপাদান ছড়িয়ে দেওয়া কবি আল মাহমুদ। তিরিশের আধুনিক কবিরা যখন পাশ্চাত্যের প্রভাবে নাগরিক, নৈর্ব্যক্তিক ও খানিক নিরাশাবাদিতার দ্বারা প্রভাবিত আল মাহমুদ তখন দেশজাত, মানবিকতা, সাম্যবাদে থাকার কলম ধরেছেন কবিতায়। পাঠকও সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, আত্মজীবনীসহ বিভিন্ন বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন।

তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে 'সোনালী কাবিন', 'অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না', 'একচক্ষু হরিণ', 'মিথ্যাবাদী রাখাল', 'আমি দূরগামী', 'দ্বিতীয় ভাঙন', 'উড়ালকাব্য' ইত্যাদি। 'কাবিলের বোন', 'উপমহাদেশ', 'ডাহুকি', 'আগুনের মেয়ে', 'চতুরঙ্গ' ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। তাঁর গল্পগ্রন্থ পানকৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত ও গন্ধবণিক পাঠকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।। কবির আত্মবিশ্বাস ও 'বিচূর্ণ আয়নায় কবির মুখ' ছাড়াও রয়েছে 'যেভাবে বেড়ে উঠি' তার আত্মজীবনী গ্রন্থ। দেখা যায়, শুধু কবিতা নয়, অনন্য সব গল্প-গদ্যের অসাধারণ রূপকার আল মাহমুদ।

সাহিত্যে অবদানের জন্য অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন আল মাহমুদ। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, শিশু একাডেমি (অগ্রণী ব্যাংক) পুরস্কার, কলকাতার ভানু সিংহ সম্মাননা উল্লেখযোগ্য।

২০১৯ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রয়াত হন।

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

2h ago