সাক্ষাৎকার

ক্ষমতাকে যিনি প্রশ্ন করছেন না, তাকে কীভাবে বুদ্ধিজীবী বলব?

দেশের গণমাধ্যমের প্রায় সবগুলোর মালিকানা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট আলী রীয়াজের জন্ম ঢাকায়। থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩ সালে তিনি বাংলাদেশের বেসামরিক সামরিক সম্পর্কের ওপর গবেষণা করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। 

আলী রীয়াজের উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে ভয়ের সংস্কৃতি, নিখোঁজ গণতন্ত্র, বাংলাদেশের শাসক শ্রেণীর সংকট, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঐক্য, লেখকের দায় ও সম্পাদিত গ্রন্থলুণ্ঠিত ভবিষ্যৎ। দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখেন তিনি। সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশের বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা, সংবিধান, স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতার মতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।

সমাজের কোনো সমস্যা একদিনে তৈরি হয় না। ধীরে ধীরেই তা তৈরি হয়ে জটিল আকার ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকাকে কীভাবে দেখেন? 

আলী রীয়াজ : দেশের গণমাধ্যমের প্রায় সবগুলোর মালিকানা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান এবং আমি ২০২১ সালে প্রকাশিত গবেষণায় তথ্য-উপাত্ত দিয়েই দেখিয়েছি। ফলে গণমাধ্যমের একটা বড় অংশের কাজ হচ্ছে একটা ন্যারেটিভকে টিকিয়ে রাখা যাতে তাদের লাভ হয়। সমস্যা তৈরিতে তাদের ভূমিকা কী সেটা বুঝতে পারছেন। এই নেক্সাসটা হচ্ছে রাজনৈতিক। এবার বুদ্ধিজীবীদের প্রসঙ্গে আসি। কাকে আমরা 'বুদ্ধিজীবী' বলব তা নির্ভর করছে তাদের ভূমিকার ওপর। ১৯৬৭ সালে নোয়াম চমস্কি একটা প্রবন্ধে লিখেছিলেন, 'বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব সত্য বলা এবং মিথ্যা উন্মোচন করা।' এই ভূমিকা যিনি পালন করছেন না, ক্ষমতাকে যিনি প্রশ্ন করছেন না, তাকে কীভাবে বুদ্ধিজীবী বলব? 

এক নিবন্ধে আপনি লিখছেন 'সাংবাদিকতা তথ্য-উপাত্ত ও ঘটনার বিবরণের পেশা নয়'। এখনকার সাংবাদিকতা নিয়ে কী বলবেন?

আলী রীয়াজ: সাংবাদিকতা অর্থ তো কেবল কী ঘটছে সেটা বলা নয়। সত্য খুঁজে বের করা সাংবাদিকতার কাজ। সত্য বলতে কী বুঝব? বিল কোভাচ ও টম রোসেন্টিয়েল দ্য এলিমেন্টস অব জার্নালিজম গ্রন্থে একে বলেছেন, 'অ্যা প্র্যাকটিক্যাল অ্যান্ড ফাংশনাল ফর্ম অব ট্রুথ'—বাস্তব এবং কার্যকর সত্য। 

সেটা বের করার কোনো স্বতঃসিদ্ধ পথ নেই, কিন্তু বিভিন্ন পথ আছে। ভেরিফাই বা যাচাই করা যাকে বলে। ধরুন আমি একটা কথা বললাম, আপনি একটা কথা বললেন—এগুলো তুলে ধরলেই কী সাংবাদিকতার কাজ শেষ হয়ে যায়? এটা তো এখন সকলের কাছেই স্পষ্ট যে তাতে দায়িত্ব শেষ হয় না। আপনার শ্রোতা-দর্শক-পাঠকের কাছে আপনার একটা জবাবদিহিতার দায় আছে। সেটা কীভাবে সাংবাদিকতা পেশা হিসেবে, প্রতিষ্ঠান হিসেবে পালন করবে সেটাই প্রশ্ন। তা ছাড়া সাংবাদিকতার একটা কাজ হচ্ছে ব্যাখ্যা করা। আর যেটা জরুরি সেটা হচ্ছে বস্তুনিষ্ঠ থাকা।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৫০ বছর পার হয়েছে। এর মধ্যে পরিবর্তন এসেছে অনেকবার। এই পরিবর্তনে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন কতটা ঘটেছে?

আলী রীয়াজ: সংবিধান সংশোধন দোষের বিষয় নয়। সংবিধান তো ঐশ্বরিক কোনো গ্রন্থ নয়, নাগরিকদের প্রয়োজনে এটা বদলাবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধনীগুলোর কিছু করা হয়েছে ব্যক্তির প্রয়োজনে, আর কিছু করা হয়েছে ক্ষমতাসীনদের প্রয়োজনে। ফলে সেগুলো জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকেনি। 

একসময় বাংলাদেশের সংবিধানে গণভোটের ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছিল, তার কিছু অপব্যবহার হয়েছে। কিন্তু ১৯৯১ সালের পরে একমাত্র দ্বাদশ সংশোধনীর ক্ষেত্রেই আমরা গণভোটের ব্যবহার দেখলাম। পরে গণভোটের ব্যবস্থাই বাতিল করা হলো। জনগণের কাছে ক্ষমতাসীনরা ব্যাখ্যাও করেন না কেন সংবিধানের মৌলিক বিষয় বদলে দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণের জায়গা এতটাই সীমিত যে এগুলো নিয়ে কেউ প্রশ্নও তোলেন না।  

বর্তমানে দেশের অনেক তরুণ বিদেশে চলে যাচ্ছেন বা যেতে বাধ্য হচ্ছেন। তরুণদের দেশ ছাড়ার এই প্রবণতার কারণ কী বলে মনে করেন?

আলী রীয়াজ : তরুণদের দেশের বাইরে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে সুযোগের অভাব। দেশে যদি উঁচু মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকত, সেখানে মেধাবীদের সহজে প্রবেশের সুযোগ থাকত, সহজে পড়ার সুযোগ থাকত, ভালো মানের গবেষণাগার থাকত, তাহলে উচ্চশিক্ষার জন্যে তরুণরা এত বেশি সংখ্যায় দেশের বাইরে যেতেন বলে আমার মনে হয় না। আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে চাকরি, ব্যবসা এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগের অভাব। সেটা বোঝার জন্যে বিসিএস নিয়ে তরুণদের যে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা—সেটার দিকে তাকালেই হয়।

বিসিএসকে কেন্দ্র করে মেধার ভয়াবহ অপচয় হচ্ছে বছরের পর বছর। তবে বিদেশে যাওয়াকে একেবারে নেতিবাচকভাবে না দেখাই ভালো। যারা যাচ্ছেন তাদের একটা অংশ এমন সব কাজে, জ্ঞানচর্চার এমন সব ধারায়, এমন সব গবেষণায় যুক্ত হন, যার ফল ভোগ করে সারা বিশ্বের মানুষ; বাংলাদেশও। অভিবাসন মানব ইতিহাসের অংশ, এইভাবেই সভ্যতা এগিয়েছে। ফলে এটা অস্বাভাবিক বলে মনে করার কারণ নেই। দরকার হচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠান ও পরিবেশ তৈরি করা যাতে প্রত্যেকের অবদান রাখার সুযোগ থাকে। অভিবাসনই যেন একমাত্র পথ না হয়।

এক জায়গায় বলেছিলেন—এ কালের বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ কর্তৃত্ববাদের পথরেখা আঁকেন। এমন হলে দেশের ভবিষ্যৎ কাদের চোখে দেখব আমরা?

আলী রীয়াজ: কর্তৃত্ববাদের পথরেখা চিহ্নিত করার প্রাথমিক দায়িত্ব সমাজবিজ্ঞানীর। সঙ্গে যুক্ত হবেন রাজনীতিবিদরা। তার অর্থ এই নয় যে এটা লেখকের কাজ না। লেখকরাও সেটা করেন, করছেন, করবেন। সাংবাদিকতায় যারা যুক্ত তাদেরও কাজ এটা। যদি কেউ প্রশ্ন রাখেন যে, বাংলাদেশে এখন কেউ কি এই কাজ করছেন? আমি বলব করছেন কেউ কেউ। তারা সংখ্যায় কম। অনেকে করছেন না। বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার ক্রিটিক্যাল ধারাটি যে শক্তিশালীভাবে গড়ে উঠল না সেটা নিয়ে আমি অনেক বেশি চিন্তিত। রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং সমাজে ক্রিটিক্যাল চিন্তার জায়গা সীমিত। এর একটা কারণ শিক্ষাব্যবস্থা। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অনুকরণ চর্চাকে উৎসাহিত করে, প্রশ্ন করতে শেখায় না। উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোও স্বাধীন নয়। স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ফলে এই ধারাটা শক্তিশালী হচ্ছে না। হলে আগামীর পথরেখা বের করা সহজ হতো।

দেখা যায় কালজয়ী সাহিত্যকর্মগুলো ভয়কে জয় করেই লেখা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের লেখকরা এখন গোড়াতেই স্বআরোপিত এক ধরনের সেন্সরশিপের আওতায় পড়ে যান। এটা কিসের ইঙ্গিত দেয়?

আলী রীয়াজ: সাহিত্য চিরায়ত হয়ে ওঠার অনেক কারণ আছে। ভয়কে জয় করা তার একটি। তবে আজকের বাংলাদেশের সমাজে লেখককে যে কাবু হতে দেখেন তার কারণ সমাজে একটা ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেটা দীর্ঘমেয়াদে কর্তৃত্ববাদী শাসনের ফল। 

এই ভয়ের সংস্কৃতি রাজনীতির ফসল, একে মোকাবিলা করাও রাজনীতির কাজ। দেশের সমসাময়িক লেখকদের একটি বড় অংশই রাজনীতিকে এড়িয়ে যাবার কথা ভাবেন। কিন্তু সেটাও এক ধরণের রাজনীতিই।  স্থিতাবস্থার রাজনীতি। তাতে কর্তৃত্ববাদ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, ভয় দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। কিন্তু তার মধ্যেও কেউ কেউ কথা বলছেন, লিখছেন। তবে সবচেয়ে বড় যে ইঙ্গিত সেটা হচ্ছে তারা আগামী দিনের কথা ভাবছেন না। ব্যক্তি হিসেবে, সমাজের অংশ হিসেবে, লেখক হিসেবে ভাবা দরকার—আগামীতে এই সমাজের অবস্থা কী দাঁড়াবে। সেই বিবেচনাতাড়িত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা কম দেখি। নিজের যাপিতজীবন নিয়েই অধিকাংশ লেখক ব্যস্ত থাকেন।

একটা সমাজে ভয়ের সংস্কৃতি কী রাতারাতি তৈরি হয়? কারা এটা তৈরি করেন?

আলী রীয়াজ: এইভাবে বলা যাবে না যে ভয়ের সংস্কৃতি কত দিনে তৈরি হয়। কোথাও তা তৈরি হয় ধীরে ধীরে, কোথাও সেটা দ্রুত হয়। আবার হঠাৎ এর প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। অনেকের মনে আছে, বাংলাদেশ ভয়ের সংস্কৃতির বিষয়ে আমি প্রথমে ইঙ্গিত করেছিলাম ১৯৯৪ সালে। ২০১৩ সালে বইয়ের নতুন ভাষ্যে আমি বলেছিলাম এর সূচনা হয়েছে; সামনে এটা ভয়াবহ রূপ নেবে। সেই সময়ে কেউ মনোযোগ না দিলেও এখন কমবেশি সকলেই চলমান পরিস্থিতি বর্ণনা করতে প্রসঙ্গটি আনছেন। নতুন সংস্করণে ভয়ের সংস্কৃতি নিয়ে একটা ব্যাখ্যা দিয়েছি।

ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয় যখন উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করা হয়। এটি করে রাষ্ট্রযন্ত্র। রাষ্ট্র করে মানে তার হয়ে সরকার করে, ক্ষমতাসীনরা করে। যখন ভয় বা উদ্বেগ নাগরিকের জীবনাচারনকে নিয়ন্ত্রণ করে, যখন সম্পর্কের নির্ণায়ক হয়ে ওঠে ভয়, সেটাই ভয়ের সংস্কৃতি। এটা থেকে লাভবান হন তারাই, সমাজে যাদের ক্ষমতা আছে, যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন।

বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি কি যথাযথভাবে দাঁড়িয়েছে? মূল সমস্যাটা কোথায়? 

আলী রীয়াজ: রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়া একটি চলমান বিষয়। কয়েকশ বছর আগে যেগুলো রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়িয়েছে সেগুলোও এখনো গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। যুক্তরাষ্ট্রে বলা হয় 'পারফেক্ট ইউনিয়ন' তৈরির চেষ্টা চলছে। রাষ্ট্র গঠনের এই প্রক্রিয়ায় উত্থান-পতন আছে। সেটা যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল ওয়ার থেকেই বোঝা যায়। কিন্তু রাষ্ট্রের কিছু মৌলিক বিষয়ে, রিপাবলিকের কিছু মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য হতেই হয়। কিছু প্রতিষ্ঠান তৈরি করা ছাড়া আপনি রিপাবলিক গড়ে তুলতে পারবেন না। 

আমি প্রকারান্তরে সেই দিকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছি। সমাজে, রাষ্ট্রে ভিন্নমত থাকবে। সেটাই বহুত্ববাদী সমাজের লক্ষণ। কিন্তু একটা সমাজে এমন প্রবণতা থাকা ঠিক নয় যে, ভিন্নমত, ভিন্ন চিন্তা, ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন বর্ণকে নির্মূল করে দেওয়া হবে। সেটা বিনাশের লক্ষণ। বাংলাদেশ ক্রমাগতভাবে সেই দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে হয়। দেশ হিসেবে বাংলাদেশ থাকবেই। কিন্তু কোন ধরণের রাষ্ট্র থাকবে সেটাই প্রশ্ন।     

'শিল্পের জন্য শিল্প, না জীবনের জন্য শিল্প'—এ নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক আছে? এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?

আলী রীয়াজ: শিল্পের জন্যে শিল্প—এই ধারণার সঙ্গে আমি একমত হতে পারি না। কারণ শিল্পের ফর্মটা যাই হোক, সেটা আসলে জীবনেরই একটা ছবি। সেটা আজকের, না গতকালের, না আগামীর—সেটা বড় প্রশ্ন নয়। আমরা যা কল্পনা করি তাও আমাদের অভিজ্ঞতায় সীমিত। ফলে সেখানেও জীবনের কথাই বলা হচ্ছে। আমাদের যে অভিজ্ঞতা তা এককভাবে তৈরি হয় না। আমাদের চারপাশ, চারপাশের মানুষ দিয়ে, সমাজ দিয়ে তা প্রভাবিত হয়, আকার নেয়। আমরা কেউ একা তৈরি হই না। প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা আলাদা। সেই আলাদা অভিজ্ঞতাকে বাঙময় করাই হচ্ছে শিল্প। ফলে আমার কাছে শিল্প এবং জীবন অবিচ্ছিন্ন।

রাষ্ট্রের সংকট নিয়ে চলতি বছর সম্পাদনা করেছেন 'লুণ্ঠিত ভবিষ্যৎ' সংকলন। কাদের মাধ্যমে আশা দেখেন আপনি?

আলী রীয়াজ: 'লুণ্ঠিত ভবিষ্যৎ' গ্রন্থে আমি এবং আমার সহযোগী লেখকরা দেশের অর্থনীতির সংকটের গভীরতা বোঝাতে চেষ্টা করেছি। সংকট তৈরি হয়েছে রাজনীতির কারণে, ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের কারণে। আর এই ক্রোনি ক্যাপিটালিজম তৈরি হয়েছে জবাবাদিহিহীন শাসনের ফলে। এর সমাধান হচ্ছে জবাবদিহিমূলক একটা শাসনব্যবস্থা তৈরি করা। সেটা না তৈরি করা গেলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। সেই বিবেচনায় আমার আস্থা নাগরিকদের ওপরে, যারা ক্রমাগতভাবে এই ব্যবস্থার চাপে পিষ্ট হচ্ছেন। তারা নিশ্চয় প্রশ্ন তুলবেন, 'ক্ষমতাসীনদের প্রশ্ন করার অধিকার নেই কেন?', 'সম্পদে আমার হিস্যা কোথায়?'। 

আপনার লেখালেখি ও ভাবনা অনুসরণ করেন অনেকে। এক্ষেত্রে আপনাদের মতো ব্যক্তিদের অবস্থান ঘটনার কাছাকাছি থাকলে পর্যবেক্ষণ কী আরও বেশি শক্তিশালী হতো?

আলী রীয়াজ: অনুসরণকারীদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। যা সহজে দেখা যায় না তা উপলব্ধি করা যায়। তবে এটা সত্য যে, কোনো সময় দেশে ঘটনার কাছাকাছি থাকলে সেখানকার প্রাণের স্পন্দনটা বুঝতে সহজ হয়। কিন্তু এর একটা নেতিবাচক দিকও আছে।এতে করে ঘটনার অংশীদার হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ইংরেজিতে যাকে বলে ইমারসড হওয়া। তাতে দূর থেকে দেখার সুযোগ থাকে না। 

আবার প্রযুক্তি যে জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তাতে খুব একটা দূরে থাকার উপায় আছে কি? তবু দূরে থাকায় সবার সঙ্গে থেকে অভিজ্ঞতা অর্জনে বঞ্চিত আমি। ফলে যে সীমাবদ্ধতা এখানে তৈরি হয়েছে তা কাটানোর চেষ্টা করব।

Comments

The Daily Star  | English

Love road at Mirpur: A youthful street

Certain neighbourhoods in Dhaka have that one spot where people gather to just sit back and relax. For Mirpur, it’s the frequently discussed street referred to as “Love Road”.

2h ago