নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যা

‘রাত দখলের’ রাতে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ, আর জি কর হাসপাতালে ভাঙচুর

মধ্যরাতের বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি

এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে রাজপথে বিক্ষোভের মধ্যে কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে।

এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও বিচারের দাবিতে গত রাতে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় 'রাতের দখল নাও কর্মসূচি পালন করেন নারীরা। এই কর্মসূচির আওতায় রাত ১২টার আগেই হাজার হাজার মানুষ কলকাতার রাস্তায় নেমে আসে।

এর ভেতর বিক্ষোভকারীদের ভেতর থেকে একটি দল আর জি কর হাসপাতালে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।

বিক্ষোভে উপস্থিত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তারা চিকিৎসকসহ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায় এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে।

ভাঙচুরের পর আর জি কর হাসপাতালের চিত্র। ছবি: ডয়েচে ভেলে

নিহত ওই চিকিৎসকের বাড়ি উত্তর চব্বিশ পরগনার সোদপুরে। তার মা-বাবা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালে তাদের মেয়ের ডিউটি ছিল। দিবাগত রাত দুইটায় নৈশভোজ সেরে জরুরি বিভাগের চারতলায় একটি সম্মেলনকক্ষে বিশ্রাম নিতে যান। গত শুক্রবার সকালে সেখানে তার মরদেহ পাওয়া যায়।

এই ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে রাস্তার বিক্ষোভ গতকাল রাত ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শুরু হয়; যা কলকাতার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গাসহ অন্যান্য ছোট ও বড় শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী, পেশাজীবী ও নারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ 'আমরা বিচার চাই' ও নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের দাবিতে শহর প্রকম্পিত করে তোলেন। এসব বিক্ষোভে রাজনৈতিক দলের পতাকা প্রদর্শন আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

বিক্ষোভকারীদের একজন রিমঝিম সিনহা এই ঘটনাটিকে নারীদের জন্য 'নতুন স্বাধীনতা সংগ্রাম' হিসেবে বর্ণনা করেন।

বিক্ষোভের খণ্ডচিত্র। ছবি: এএফপি

কলকাতার কলেজ স্ট্রিট, অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস এবং যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডে প্রাথমিক জমায়েতের পরিকল্পনা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে প্রতিবাদ আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহর ও জেলায় ছড়িয়ে পড়ে।

নিউ টাউনের বিশ্ব বাংলা গেটে গত রাতে প্রায় আট হাজার মানুষ মোমবাতি ও মর্মস্পর্শী বার্তা সম্বলিত পোস্টার হাতে আলোর সমুদ্র তৈরি করেন।

যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ড থেকে কলেজ স্কয়ার, নাকতলা নবপল্লী থেকে নিউ টাউন ও বিশ্ব বাংলা গেট, বেহালা শাখের বাজার থেকে শ্যামবাজার ফাইভ পয়েন্ট ক্রসিং, অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস থেকে নাগেরবাজার পর্যন্ত বিক্ষোভরত মানুষের ভিড় চোখে পড়ে।

একই দৃশ্য দেখা গেছে শ্রীরামপুর, চুনচুড়া, শান্তিনিকেতন, কৃষ্ণনগর, বর্ধমান, ডায়মন্ড হারবার, শিলিগুড়ি, বারাসত, ব্যারাকপুর, রাজারহাট-নিউটাউন, কোচবিহার ও জলপাইগুড়িতেও।

শিয়ালদহ স্টেশনে প্রতিবাদে এক ব্যাতিক্রমী ঘটনা ঘটে। সেখানকার ফুটপাথবাসীরা তাতে শামিল হন। কিছু নারী প্রতিরোধের শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে শাঁখ বাজান।

ডায়মন্ড হারবারে হাজার হাজার নারী মোবাইল টর্চ জ্বালিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'আগুনের পরশমণি' গেয়ে ওঠেন।

তাদের মধ্যে প্রবীণ একজন নারী স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে তার মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, 'ওই নারী চিকিৎসকের ওপর ভয়াবহ হামলার খবর শুনে আমি ঘুমাতে পারিনি। আমার মেয়ে প্রায় একই বয়সের এবং পুনেতে কাজ করে। আমি প্রতিদিন তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি।'

অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এক ভিডিও বার্তায় এই আন্দোলনের প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেন। বলেন, 'এটা দুঃখজনক যে আমরা এখনো এই সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি। এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য আমাদের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

গতরাতের বিক্ষোভে পরিবর্তন ও ন্যায়বিচারের জন্য নারীদের পাশাপাশি অজস্র পুরুষকেও গলা মেলাতে দেখা যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Air purifiers for Dhaka: hope or hype?

DNCC to set up 25-30 such industrial devices in public places to curb pollution; experts skeptical

18h ago