হার্ড-ফুয়েল চালিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাল উত্তর কোরিয়া
উত্তর কোরিয়া ১টি 'নতুন ধরনের' হার্ড-ফুয়েল চালিত ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে, যা কোরীয় উপদ্বীপ ও জাপানের মধ্যবর্তী সাগরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। টোকিও এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে দেশটির উত্তরাঞ্চলের দ্বীপ হোক্কাইডোর বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ (জেসিএস) জানিয়েছে, উত্তর কোরীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি স্থানীয় সময় সকাল ৭টা বেজে ২৩ মিনিটে পিয়ংইয়ংইয়ের কাছাকাছি কোনো অবস্থান থেকে 'উঁচু কোণে' নিক্ষেপ করা হয়।
সম্ভবত মধ্যম পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কোরীয় উপদ্বীপ ও জাপানের মাঝামাঝি জায়গায় সাগরে নিক্ষিপ্ত হয়। জেসিএস এ ঘটনাকে 'উদ্বেগজনক ও উসকানিমূলক' হিসেবে অভিহিত করেছে।
জাপানও ক্ষেপণাস্ত্র সাগরে নিক্ষিপ্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। তবে তারা বিস্তারিত তথ্য দেয়নি।
দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ মাধ্যম ওইয়াইটিএন এক সামরিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, খুব সম্ভবত এটি ১টি নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা ছিল, যেটি সাম্প্রতিক সামরিক মহড়ায় প্রদর্শন করা হয়েছে। এটি সলিড-ফুয়েল ক্ষেপণাস্ত্রও হতে পারে বলে তিনি মত দেন। সলিড-ফুয়েল প্রযুক্তির রকেটগুলো খুব সহজে পরিবহণ করা যায় এবং এগুলো প্রথাগত তরল জ্বালানিতে (লিকুইড ফুয়েল) পরিচালিত ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে দ্রুত নিক্ষেপ করা যায়।
১ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, টোকিও উত্তর কোরিয়ার এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে 'তীব্র প্রতিবাদ' জানিয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রটি হোক্কাইডো দ্বীপের দিকে ধাবিত হচ্ছে, এই আশংকায় জাপান কর্তৃপক্ষ দ্বীপ থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। গত অক্টোবরেও একই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল দেশটি। সেবার উত্তর কোরিয়ার নিক্ষেপ করার মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রশান্ত মহাসাগরে পড়েছিল।
বৃহস্পতিবারের এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর সিউলের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল জরুরি বৈঠক করে। বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার এই উদ্যোগের প্রতি নিন্দা জানানো হয়।
ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজও এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার প্রতি নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি 'জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের সনদের একাধিক ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন'। তারা সারা বিশ্বকে পিয়ংইয়ংয়ের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানানোর আহ্বান জানায়।
২০২২ সালে রেকর্ড সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া এবং এ বছরও সে ধারা অব্যাহত আছে। উত্তর কোরিয়ার দাবি, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া দেশটিতে আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতির অংশ। প্রত্যুত্তরে তারা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা অব্যাহত রেখেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে আসা হুমকির কারণেই তারা মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে এসব মহড়ার আয়োজন করছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা জানান, প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে উত্তর কোরিয়া ২ দেশের মাঝে যেকোনো অনিচ্ছাকৃত
উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচী বন্ধের বিষয়ে আলোচনা ২০১৯ সাল থেকে স্থগিত আছে। সে সময় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের আলোচনা ভেস্তে যায়।
আজ বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজ আবারো উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার টেবিলে ফেরার আহ্বান জানায়।
হোয়াইট হাউজ জানায়, 'কূটনীতির দরজা বন্ধ হয়নি, তবে পিয়ংইয়ংকে তাৎক্ষণিকভাবে এসব অস্থিতিশীল উদ্যোগ থামাতে হবে এবং এর পরিবর্তে কূটনৈতিক আলোচনার পথে আসতে হবে'।
Comments