‘বিপর্যয়’ মোকাবিলায় ভারত-পাকিস্তানের উপকূলীয় এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের

সোমবার সকালে পাকিস্তানের আবহাওয়া অধিদপ্তর একটি সতর্কবার্তা প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, এর আগের ১২ ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের দিকে এগিয়ে এসেছে। 
১৩ জুন পাকিস্তানের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা বেজে ৫ মিনিটে 'বিপর্যয়ের' অবস্থান। ছবি: ডন
১৩ জুন পাকিস্তানের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা বেজে ৫ মিনিটে 'বিপর্যয়ের' অবস্থান। ছবি: ডন

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কাছাকাছি পৌঁছেছে ঘূর্ণিঝড় 'বিপর্যয়'। রাতভর উপকূলীয় অঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভারতের গুজরাটেও চলছে একই ধরনের প্রস্তুতি।

আজ মঙ্গলবার পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম ডন এই তথ্য জানিয়েছে।

সোমবার সকালে পাকিস্তানের আবহাওয়া অধিদপ্তর একটি সতর্কবার্তা প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, এর আগের ১২ ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের দিকে এগিয়ে এসেছে। 

সতর্কবাণী অনুযায়ী, বিপর্যয় এখন করাচীর ৪৭০ কিমি ও থাট্টার ৪৬০ কিমি দক্ষিণে অবস্থান করছে।

সতর্কবাণীতে আরও বলা হয়েছে, সার্বিক পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন না হলে 'খুব সম্ভবত' ঘূর্ণিঝড়টি ১৪ জুন বুধবার সকাল পর্যন্ত আরও উত্তরে এগুতে থাকবে। ১৫ জুন বৃহস্পতিবার বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে সিন্ধুর কেটি বন্দর গ্রাম ও ভারতের গুজরাটের উপকূলে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিমি গতিবেগের বাতাসসহ 'অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড়' হিসেবে আঘাত হানতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবাণীতে আরও বলা হয়, ১৩ থেকে ১৭ জুনের মধ্যে ঠাট্টা, সুজাওয়াল, বাদিন, থারপার্কার, মিরপুরখাস ও উমরকোট জেলার বিভিন্ন অংশে ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিলোমিটার গতিবেগের তীব্র বাতাস বইতে পারে এবং বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।

১৭ জুন পর্যন্ত বা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত জেলেদেরকে সমুদ্রে মাছ ধরতে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।

এক পৃথক বার্তায় আবহাওয়া বিভাগের উপপ্রধান জানান, আজ থেকে সিন্ধু ও করাচিতে কিছু পরিমাণে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব দেখা যাবে।

পাকিস্তানের জলবায়ুমন্ত্রী শেরি রেহমান টুইটারে দেশের জনগণকে কর্তৃপক্ষের সতর্কবাণীতে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় এখন বাস্তবতা। ভয় না পেয়ে উপকূলীয় এলাকার মানুষের উচিত সিন্ধু ও বেলুচিস্তানের আবহাওয়া বিভাগের উপদেশগুলোকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা।'

তিনি আরও বলেন, 'বাতাসের মাত্রা ও তীব্রতা বিবেচনায় ধারণা করা যাচ্ছে করাচির নগর এলাকাগুলোতে বন্যা হতে পারে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে যেসব জায়গা সমুদ্রের কাছাকাছি, সেখান থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। আমরা আপনাদের হালনাগাদ তথ্য জানাতে থাকব।'

সিন্ধু প্রদেশের তথ্যমন্ত্রী শারজিল ইনাম মেমন জানান, ইতোমধ্যে এই প্রদেশ থেকে ২৬ হাজার ৮৫৫ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সাময়িকভাবে বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের জন্য রিলিফ ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে, যেখানে স্বাস্থ্য বিভাগ রোগের বিস্তার ঠেকাতে ডেস্ক বসিয়েছে।

তিনি জানান, সিন্ধুর মুখ্যমন্ত্রী সব কমিশনার ও উপকমিশনারকে রিলিফ ক্যাম্পে প্রয়োজনীয় খাবার ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

তথ্যমন্ত্রী মেমন প্রদেশের জনগণকে যতক্ষণ সম্ভব ঘরের ভেতর অবস্থান করার উপদেশ দেন।

'আপনি যদি বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া ঘর ছেড়ে বের হন, তাহলে তা জরুরি সেবাদাতাদের কাজে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে', যোগ করেন তিনি।

সিন্ধুর মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলি শাহ এক বিবৃতিতে জানান, রাতভর প্রদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলেছে।

তিনি জানান, কেটি বন্দর গ্রামের ১৩ হাজার মানুষ বিপদে আছেন। ৩ হাজার মানুষকে রাতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

ঘোড়াবাড়ির গ্রামের ৫ হাজার মানুষও বিপদে আছেন, যার মধ্যে ১০০ জনকে নিরাপদ অবস্থানে নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া শহীদ ফাজিল রাহু, বাদিন, শাহ বন্দর, খারো চান, থাট্টা, বাদিন ও সাজাওয়ালসহ অন্যান্য জেলা ও শহর থেকেও মানুষদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ অব্যাহত আছে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি জানান, কিছু নাগরিক তাদের ঘর ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন না। কিন্তু তাদেরকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তিনি সবাইকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।

পাকিস্তানের জ্বালানিমন্ত্রী খুররাম দস্তগীর জানিয়েছেন, ঝড়ের সময় কয়েকটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র বন্ধ রাখা হতে পারে। উচ্চ গতির বাতাস বইতে থাকলে বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখা ঝুঁকিপূর্ণ।

ভারতের পশ্চিম উপকূলের এলাকাগুলো থেকে আজ মঙ্গলবার মানুষদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

ইতোমধ্যে মুম্বাইয়ে উন্মত্ত সমুদ্রে সাঁতার কাটতে গিয়ে ৪ যুবক নিহত হয়েছে।

মুম্বাই পুলিশের এক কর্মকর্তা জুহু বিচে সোমবার সন্ধ্যায় ৪ যুবকের ডুবে মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ পর্যন্ত ২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদের মরদেহ খুঁজে পেতে উদ্ধার অভিযান এখনো চলছে, যোগ করেন তিনি।

আরব সাগরের উচ্চ ঢেউ, তুমুল বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়া গুজরাটের উপকূলে আঘাত হেনেছে। কিছু গাছ উপড়ে গেছে এবং কুচ ও রাজকোট জেলায় দেয়াল ধসে পড়ে ৩ জন মারা গেছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

স্থানীয় সরকার জানিয়েছে, গুজরাটের ৮ জেলা ঘূর্ণিঝড়ে প্রভাবিত হতে পারে। এ অঞ্চলে শুক্রবার পর্যন্ত সব ধরনের মাছ ধরার কার্যক্রম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।

গুজরাট সরকার জানিয়েছে, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২১টি দল ও স্থানীয় সরকারের ১৩টি দল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।

গুজরাটের সরকারি কর্মকর্তা কামাল দায়ানি বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে উপকূল থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছি। ৭ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মোট ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হবে।'

গুজরাটে অবস্থিত ভারতের ২ সর্ববৃহৎ সমুদ্রবন্দর কান্ডালা ও মুন্দ্রা বন্দরের সব কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। আরও বেশ কিছু বন্দরের কাজও বন্ধ রাখা হয়েছে।

গুজরাটের জামনগরে অবস্থিত রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের তেল পরিশোধনকেন্দ্রটি বন্ধ রাখা হয়েছে। যার ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিশোধনাগার থেকে ডিজেল ও অন্যান্য তেলজাতীয় পণ্যের রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ আছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago