পাকিস্তানে সরকার গঠন করবে মুসলিম লিগ-পিপলস পার্টি
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কয়েক দফা আলোচনার পর পাকিস্তানের পিএমএল-এন ও পিপিপির মধ্যে সরকার গঠন বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। পিটিআই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও নতুন সরকারে থাকছে না ইমরান খান বা তার দলের কোনো সদস্য।
আজ পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন জানিয়েছে, ক্ষমতা ভাগাভাগির মাধ্যমে নওয়াজ শরীফের মুসলিম লিগ ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পিপিপি দেশটিতে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে।
রাত ১২টায় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত জারদারি হাউসে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি জানান, এই দুই দলের কাছে কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট আসন রয়েছে। পিএমএল-এন প্রধানমন্ত্রীর পদে শেহবাজ শরীফকে মনোনয়ন দেয়।
একইভাবে পিপিপি নেতা আসিফ আলি জারদারি জোটের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হবেন। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার ও সিনেট চেয়ারম্যান সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কিন্তু এ সংক্রান্ত ঘোষণা পরে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
পিটিআইর প্রতিক্রিয়া
এই সমঝোতার খবরে পিটিআই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা আবারও নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে পিটিআই জানায়, 'পিএমএল-এন ও পিপলস পার্টি দীর্ঘ ৩০ বছর একসঙ্গে চলেছে, যার জন্য তারা প্রশংসার দাবিদার। এ পুরো সময়টা তারা যৌথভাবে করদাতাদের অর্থ ও নির্বাচনের ফল চুরি করেছে।'
এর আগে পিটিআই এই দুই দলকে 'ইশতেহার চোর' বলে অভিহিত করেছিল।
সমঝোতার বিস্তারিত
সংবাদ সম্মেলনের আগে পিপিপি প্রধান বিলাওয়াল মুসলিম লিগের নেতা ইসহাক দারের বাসায় যান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন শেহবাজ শরীফ। ৩০ মিনিটের আলোচনার পর তারা একত্রে জারদারি হাউসের উদ্দেশে যাত্রা করেন। সেখানে গণমাধ্যমের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন তারা।
অভ্যন্তরীণ সূত্ররা ডনকে জানান, দুই দলের সমঝোতা অনুযায়ী পিপিপি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগ দেবে না এবং স্পিকারের পদটি পাবেন পিএমএল-এন এর একজন নেতা।
তারা দাবি করেন, সিনেটের পরবর্তী চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন পিপিপির নেতা ইউসুফ রাজা জিলানি। খাইবার পাখতুনখোয়া ও পাঞ্জাবের গভর্নরও পিপিপি থেকে নির্বাচন করা হবে।
সূত্ররা আরও জানান, বেলুচিস্তানে যৌথভাবে সরকার গঠন করবে এই দুই দল এবং সরফরাজ বুগতি হবেন মুখ্যমন্ত্রী।
সিনেটে পিএমএল-এন ডেপুটি চেয়ারম্যানের পদ পাবে এবং নিম্নকক্ষে ডেপুটি স্পিকারের পদ পাবেন পিপিপির একজন সদস্য।
পাকিস্তানের সংবিধানের ৯১(২) ধারা অনুযায়ী ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রথম অধিবেশনের দিনটি ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঘোষণা করতে হবে। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশনের প্রথম দিন শপথ নেওয়ার পর সদস্যরা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করবেন। এরপর নতুন স্পিকার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের দিনটি ঘোষণা করবেন। ৩৩৬ সদস্যের অ্যাসেম্বলিতে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য অন্তত ১৬৯ ভোট প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পর একই ধারায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও আয়োজিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিলাওয়াল আশাবাদ প্রকাশ করেন, 'আমরা প্রার্থনা করি এই জোট সরকার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবে।'
পিএমএল-এন দলের সভাপতি শেহবাজ শরীফ সাংবাদিকদের জানান, তারা কেন্দ্রে ইমরান খানের পিটিআইকে সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন, কিন্তু সাবেক ক্ষমতাসীন দলটি প্রয়োজনীয় ১৬৯ আসন জোগাড় করতে পারেনি।
তিনি দাবি করেন, পিটিআই সরকার গঠন করতে পারলে তারা খুশি মনে বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করতেন।
তিনি জানান, সবাইকে সঙ্গে নিয়েই দেশকে সংকট থেকে বের করে আনতে চান তিনি। যদিও দুই দলের ঐক্যমত্য একটি ইতিবাচক ঘটনা, তবুও দেশ এখনো বিপদমুক্ত নয় বলে শেহবাজ মন্তব্য করেন।
পাঞ্জাব সরকার নিয়ে এই বৈঠকে কিছু জানানো হয়নি। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, পিপিপি এই প্রাদেশিক মন্ত্রিসভায় তাদের সদস্যদের রাখতে আগ্রহী এবং এ বিষয়টির কারণেই আলোচনা এতো দীর্ঘায়িত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শেহবাজ শরীফকে প্রশ্ন করা হয়, পরবর্তীতে যদি তার সরকারের বিরুদ্ধে পিটিআই অনাস্থা প্রস্তাব আনে এবং পিপিপি তাতে সমর্থন জানায়, তাহলে পিএমএল-এন এর ভবিষ্যৎ কি হবে।
এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি।
Comments