ট্রেনে কাটা পড়ে মা-মেয়ের মৃত্যু, ৪ ঘণ্টা পর মারা গেল ছেলেও

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলে মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার ৪ ঘণ্টা পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ছেলে।  
দুর্ঘটনা স্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলে মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার ৪ ঘণ্টা পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ছেলে।  

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা দিকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেল রুটের বেলতলি ঘুন্টি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

মৃতরা হলেন, পাটগ্রাম ইউনিয়নের চিলারবাজার পাইকারটারী গ্রামের রাশেদুজ্জামানের স্ত্রী সুমি বেগম ও তার মেয়ে তাসমিরা তাবাসসুম তাসিন এবং ছেলে তৌহিদ হাসান।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারীগামী ট্রেন বেলতুলি ঘুন্টি এলাকা পার হওয়ার সময় সুমি বেগম তার ২ সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেসময় ট্রেনের ধাক্কায় ৩ বছরের শিশু তৌহিদ ছিটকে পড়ে। কিন্তু মা ও ৬ বছরের মেয়ে ট্রেনে কাটা পাড়ে ঘটনাস্থলেই মার যায়।

স্থানীয়রা গুরুতর আহত শিশুকে উদ্ধার করে প্রথমে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর আড়াইটার দিকে শিশুটি মারা যায়।

পাটগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান লিটন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুমি বেগমের স্বামী রাশেদুজ্জামান পেশায় দিনমজুর। তিনি বুড়িমারী স্থলবন্দরে পাথরভাঙা শ্রমিকের কাজ করেন। তার পরিবারে অভাব-অনটন রয়েছে। দুর্ঘটনা স্থল তাদের বাড়ি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে। সুমি বেগম কেন তার সন্তানদের নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়েছেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য ‍মিলছে না।'

সুমি বেগমের স্বামী রাশেদুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিনি সকাল সাড়ে ৮টায় পাথরভাঙার কাজ করতে বুড়িমারী স্থলবন্দরে চলে যান। স্ত্রীর সঙ্গে তার কোনো ঝগড়া-বিবাদ ছিল না। সংসারে অভাব ছিল ঠিক, কিন্তু সন্তানদের নিয়ে আত্মহত্যা করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।'

তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন, নাকি রেললাইনের ওপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছেন বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত করছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুমি বেগম কেন তার সন্তানদের নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়েছেন, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ তথ্য উদঘাটনে কাজ শুরু করেছে।'

লালমনিরহাট রেলওয়ে থানা পুলিশ মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে বলেও জানান তিনি।

লালমনিরহাট রেলওয়ে থানা পুলিশের ওসি ফেরদৌস আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পাটগ্রাম থানা পুলিশের পাশাপাশি রেলওয়ে থানা পুলিশও ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে। এ ঘটনায় লালমনিরহাট রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।'

Comments