বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন পূর্বপরিকল্পিত: তদন্ত কমিটি

গত ৫ মার্চ বালুখালী ক্যাম্প ১১-তে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ২২০০ ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের উখিয়ায় বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।

আজ রোববার বিকেলে তদন্ত কমিটির প্রধান কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ান এক প্রেস বিফ্রিংয়ে এ কথা জানান।

গত ৫ মার্চ বালুখালী ক্যাম্প ১১-তে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এর আগে ২০২১ সালের ২২ মার্চ একই ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। সেসময় ১১ জনের মৃত্যু ও ৫ শতাধিক আহত হয়। পুড়ে গিয়েছিল ৯ হাজারের বেশি ঘর। আগুনের ঘটনাকে শুরু থেকেই 'পরিকল্পিত' বলে দাবি করে আসছিলেন রোহিঙ্গা নেতারা।

আজ আগুনের ঘটনায় ৭৮ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের কাছে হস্তান্তরের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছে তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটির প্রধান আবু সুফিয়ান বলেন, কারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে তাদের নাম পরিচয় শনাক্ত যায়নি। তাই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রচলিত ফৌজদারী আইনে মামলা দায়ের, তদন্ত করে জড়িতদের শনাক্ত ও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের মতো নাশকতা বা দুর্যোগ ঠেকাতে ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে।

আবু সুফিয়ান বলেন, '৪ পৃষ্ঠার মূল তদন্ত প্রতিবেদনে ৭৪ পৃষ্ঠার সম্পূরক প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়েছে। তদন্তকালে তদন্ত কমিটি অন্তত ৫০ জন রোহিঙ্গাসহ ৭৫ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। এর মধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় জনগোষ্ঠী, ক্যাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, রোহিঙ্গা মাঝি এবং এনজিও কর্মীরা ও রয়েছেন।'

'রোহিঙ্গারা তদন্ত কমিটির কাছে এটিকে পরিকল্পিত নাশকতা বলে দাবি করেছেন। তারা বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তাই অভিযুক্তদের শনাক্ত করা কঠিন,' বলেন তিনি।

তদন্ত কমিটির প্রধান আরও জানান, বেলা আড়াইটায় আগুনের সূত্রপাত হয়, যা নিয়ন্ত্রণে আনতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় লাগে। অল্প সময়ের মধ্যে অন্তত পাঁচ স্থানে আগুন লাগে। এটি নাশকতার প্রমাণ করে।

'অগ্নিকাণ্ডের আগের দিন ওই ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনাও প্রমাণ করে যে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি নাশকতামূলক। রোহিঙ্গারা আগুন নেভাতে গেলে অনেকেই তাদের নিষেধ করেছে এটা সত্য। তবে এটি কৌশলে হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বলা হয়েছে, "আগুন নেভানোর চেয়ে নিজের জীবন বাঁচানো জরুরি",' বলেন তিনি।

এডিএম আবু সুফিয়ান আরও জানান, অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ২২০০ ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। তা ছাড়া ৮৮৫টি বিভিন্ন স্থাপনাও ভস্মিভূত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। এ ছাড়া নানাভাবে ২ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। তবে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

প্রতিবেদনে যে সব সুপারিশ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকের রাস্তা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যাতে সহজে চলাচল করতে পারে সে উপযোগী করে প্রশস্ত করা,  প্রতিটি ব্লকের রাস্তার প্রবেশমুখে পানির চৌবাচ্চা তৈরি, শেল্টার বা ঘরে ত্রিপলের পরিবর্তে ভিন্ন কিছু যা অপেক্ষাকৃত কম অদাহ্য পদার্থের তৈরি এমন কিছু ব্যবহার করা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য পৃথক ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যত্রতত্র মার্কেট নির্মাণ বন্ধ করা, নিরাপদ স্থানে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের আউটলেট করা, প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলাদা করে নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন, প্রতিটি ক্যাম্পে একাধিক পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং আগুন নেভানোর কাজে রোহিঙ্গাদের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা তৈরি।

আজ বিকাল সাড়ে ৪টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে এই প্রেস ব্রিফিং হয়। এসময় তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

গত ৫ মার্চ বালুখালী ক্যাম্প ১১-তে আগুনের ঘটনা তদন্তে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্যান্য সদ্যস্যরা হলেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) উপ পরিচালক, কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারি পরিচালক, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

Comments

The Daily Star  | English

Iran says it will not violate ceasefire deal unless Israel does

Israeli Prime Minister Benjamin Netanyahu said Israel had agreed to Trump's ceasefire proposal

2d ago