‘অতিরিক্ত গতিতে রেলিংয়ে ধাক্কা খেয়ে নিয়ন্ত্রণ হারান চালক’
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় গত শনিবার অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, অতিরিক্ত গতিতে উড়াল সড়কের ডান দিকের রেলিংয়ে ধাক্কা লেগে চাকা ফেটে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত কমিটির একাধিক সদস্যের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
আজ রোববার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গার মালিগ্রাম উড়াল সড়কে দুর্ঘটনাকবলিত জায়গা পরিদর্শন ও উপাত্ত সংগ্রহ করেন কমিটির সদস্যরা।
তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্যর পর্যবেক্ষণ থেকে জানা গেছে, উড়াল সড়কে ওঠার সময় বেশি গতি থাকায় এবং বাকের কারণে অ্যাম্বুলেন্সটি সড়কের বাম পাশের রেলিংয়ে আঘাত করে। এর ফলে ওই রেলিংয়ে অ্যাম্বুলেন্সের চাকা ৬ ইঞ্চির মতো উপরে উঠে গেলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এর ফলে গাড়িটি এলোমেলো অবস্থায় প্রায় ১৫০ মিটার পথ অতিক্রম করে উড়াল সড়কের ডান পাশের ডিভাইডারে আঘাত করে। এতে গাড়ির সামনের দিকের একটি চাকা ফেটে যায় ও ইঞ্জিনের তার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরবর্তীতে চাকার ঘর্ষণ কিংবা ইঞ্জিনের থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
অ্যাম্বুলেন্সটি গ্যাসচালিত এবং সেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডারও ছিল। এগুলো বিস্ফোরণ না হলেও গ্যাস থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে আগুন ধরেছে। অ্যাম্বুলেন্সের দরজা আটকে যাওয়ায় কোনো যাত্রী বের হতে পারেনি। আঘাতের কারণে অ্যাম্বুলেন্সের সামনে দিকে ডানপাশে চালকের দরজা খুলে গেলে চালক সড়কে পড়ে যান। তবে, তার পা গাড়ির ভেতরে থাকায় তা দগ্ধ হয়।
ফিটনেস ঠিক ছিল
ফরিদপুর বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক এনামুল হক ইমন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, দুর্ঘটনাকবলিত অ্যাম্বুলেন্সটি ফরিদপুরের লামিয়া অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, হাসরা, হাবেলী গোপালপুর, ফরিদপুর সদর নামে নিবন্ধিত। অ্যাম্বুলেন্সের ফিটনেস ও ট্যাক্সের মেয়াদ হালনাগাদ ছিল। এক বছর মেয়াদে নবায়নকৃত ফিটনেস ও ট্যাক্সের মেয়াদ আগামী ২৩ অক্টোবর শেষ হবে।
মামলা হয়নি
মাদারীপুর হাইওয়ে পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এই দুর্ঘটনা নিয়ে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত মামলা হয়নি শিবচর হাইওয়ে থানায়। অ্যাম্বুলেন্সের ফিটনেস ও নিবন্ধন এবং চালকের লাইসেন্স হালনাগাদ রয়েছে। তবে, এ ঘটনায় মামলা অবশ্যই হবে। মামলা দু-একদিন পরে হলেও কোনো সমস্যা নেই।
দাফন সম্পন্ন
দুর্ঘটনায় নিহত তাসলিমা বেগমকে (৫০) গত শনিবার রাত ১০টার দিকে বোয়ামারীর গুনবাহা ইউনিয়নের ফেরান নগর গ্রামের কবরস্থানে, তার মেয়ে কমলা বেগম (৩০) ও ৩ সন্তান আরিফ (১২), হাসিব (১০) ও হাফসাকে (০১) রাত ১১টার দিকে বোয়ালমারীর শেখর ইউনিয়নের মাইট কুমড়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে এবং বিউটি (২৬) ও তার ছেলে মেহেদীকে (১০) রোববার সকাল ৮টার দিকে আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কুচিয়াগ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
রোববার দুপুর ১২টায় অম্বিকাপুর পৌর শ্মশান ঘাটে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় নিহত অ্যাম্বুলেন্স চালক মৃদুল চন্দ্র মালোর (২৬)। ফরিদপুর পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর আফরোজা সুলতানা জানান, মৃদুল ফরিদপুর শহরের গুহলক্ষীপুর মহল্লার সুবাষ চন্দ্র মালোর ছেলে। ৩ ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
Comments