ঝালকাঠিতে সড়ক দুর্ঘটনা

বহুল প্রতীক্ষিত সন্তানের মুখ দেখা হলো না শাহীনের

শাহীন মোল্লা ও তার বাবা সালাম মোল্লার মৃত্যুতে নির্বাক পুরো পরিবার। পিছনে দুর্ঘটনায় আহত শাহীনের ছোট ভাই রাসেল মোল্লা। ছবি: সংগৃহীত

দাম্পত্য জীবনের প্রায় ১০ বছর পর শাহীন মোল্লা ও নাজমার ঘর আলো করে আসতে চলেছে সন্তান। কিন্তু, বহুল প্রতীক্ষিত সেই সন্তানের মুখ দেখার আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন শাহীন।

দীর্ঘদিন পর সন্তানের আগমনের খবরে পরিবারটিতে যখন আনন্দের বন্যা, তখন শাহীন ও তার বাবা সালাম মোল্লার মৃত্যুতে নির্বাক সবাই। স্বামী ও শ্বশুরের মৃত্যুর খবর শুনে রাতেই চট্টগ্রাম থেকে বাড়ি এসেছেন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নাজমা।

গতকাল শনিবার সকালে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় বাস দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন শাহীন ও সালাম।

গত ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত ভান্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম থেকে বাড়িতে এসেছিল শাহীন। তিনি পেশায় গাড়ি চালক। একই উদ্দেশ্যে পাবনা থেকে বাড়ি এসেছিলেন শাহীনের ছোট ভাই রাসেল মোল্লাও।

বাবার চিকিৎসার জন্য শনিবার ২ ভাই ভান্ডারিয়া থেকে বরিশাল যাচ্ছিল। খুলনা-বরিশাল সড়কে ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের পাশে ছত্রাকান্দা গ্রামে তাদের বহনকারী বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে একটি পুকুরে পড়ে যায়।

এই দুর্ঘটনায় শাহীন ও সালাম নিহত হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান রাসেল। তবে তিনিও গুরুতর আহত হয়েছেন।

রাসেল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি ও তার বাবা চালকের ঠিক পিছনেই বসে ছিলেন। শাহীন বসেছিলেন তাদের থেকে ৩ সিট পিছনে। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, ওই রাস্তা সম্পূর্ণ ফাঁকা ছিল।

তিনি বলেন, 'বাসে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা নিয়ে হট্টগোল তৈরি হয়। বাসের যাত্রীরা, বিশেষ করে নারীরা আর কোনো যাত্রী তুলতে নিষেধ করলেও সুপারভাইজার ও হেলপারকে চালক বলেন যে বরিশালের কোনো যাত্রী রেখে যাওয়া যাবে না। এভাবে পিছনের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে বলতেই চালক গাড়িটা চালাচ্ছিল। এরপরই চোখের পলকে বাসটি রাস্তার পাশে নেমে যায় এবং চালক জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়। তখন গাড়িটি ২ বার উল্টে পুকুরে পড়ে।'

'শুধুমাত্র চালকের খামখেয়ালীর কারণেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে' বলে দাবি তার।

এই দুর্ঘটনায় নিহত দক্ষিণ ভান্ডারিয়া গ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী তারেক মাহমুদের বাড়িতেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

৭ বছর বয়সী ছেলে মাহাদিকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বরিশাল যাচ্ছিলেন তারেক। যাত্রা পথে বাস দুর্ঘটনা থেকে ছেলেকে বাঁচাতে পারলেও নিহত হন তারেক। মাহাদি ছাড়াও ৭ মাস বয়সী আরও একটি সন্তান রয়েছে তার।

শনিবার সকালে ভান্ডারিয়া থেকে বাশার স্মৃতি নামের বাসটি অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বরিশাল যাচ্ছিল। বাসটি ছত্রাকান্দায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি পুকুরে পড়ে যায়। এ ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন। নিহত ১৭ জনের মধ্যে ৮ জনের বাড়ি ভান্ডারিয়া উপজেলা বিভিন্ন এলাকায়।

 

Comments

The Daily Star  | English

Expatriates' remittance helps Bangladesh make turnaround: Yunus

It is the expatriates who help sustain the country, says the chief adviser

2h ago