ট্রেনের ধাক্কায় ৩ পুলিশ নিহত

‘গেটম্যান না থাকায় বার ওঠানো ছিল রেলক্রসিংয়ের’

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পুলিশ ভ্যানে যাত্রীবাহী ট্রেনের ধাক্কায় ৩ পুলিশ কনস্টেবল নিহত ও ২ পুলিশের আহতের ঘটনায় গেটম্যানের অবহেলাকে দায়ী করছেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
সীতাকুণ্ডের ফকিরপাড়া রেলক্রসিংয়ে ট্রেন যাওয়ার সময় গেটম্যান না থাকায় বার ওঠানো ছিল বলে প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান। ছবি: স্টার

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পুলিশ ভ্যানে যাত্রীবাহী ট্রেনের ধাক্কায় ৩ পুলিশ কনস্টেবল নিহত ও ২ পুলিশের আহতের ঘটনায় গেটম্যানের অবহেলাকে দায়ী করছেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা।

গেটম্যান দীপু ওরফে টিপু দুর্ঘটনার পর থেকে পলাতক আছেন। স্থানীয়রা বলছেন, আজ সকাল থেকে তিনি রেলগেটেই ছিলেন না। 

আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে সীতাকুণ্ডের ফকিরপাড়া রেলক্রসিংয়ে পুলিশের টহলগাড়িতে ধাক্কা দেয় চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা ট্রেন। 

এ দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন-পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ হোসাইন, এসকান্দার আলী মোল্লা ও মিজানুর রহমান। আহতরা হলেন-এস আই সুজন শর্মা এবং চালক কনস্টেবল সমর চন্দ্র।

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৬ নম্বর ওয়ার্ডে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় এক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীকে ধরতে ফকিরপাড়া এলাকায় যান সুজনের নেতৃত্বে একটি দল। স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার শাহাদাতকে তার বাড়ি থেকে সঙ্গে নিয়ে আসামীর বাড়ির দিকে যাচ্ছিল পুলিশের গাড়িটি।'

গেটম্যান দীপুকে দুর্ঘটনার পর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না জানান ওসি।

দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দোকানদার মো. তারেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সে সময় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। পুলিশের গাড়িটি ধীরে ধীরে রেলক্রসিং পার হচ্ছিল। গাড়ির ২ পাশের গ্লাস উঠানো ছিল। ট্রেন যখন ৫০ গজ দূরে এবং হুইসেল বাজিয়ে যাচ্ছিল তখন আমরা ট্রেন দেখে সবাই চিৎকার করি।'

'রেললাইন থেকে পার হওয়ার সময় গাড়ির পেছনের অংশে ধাক্কা দেয় ট্রেনটি। এতে ছিটকে পাশের লোহার ব্যারিকেড দেওয়া অংশে পড়ে গাড়িটি। পেছনে বসা ৩ পুলিশ সদস্য ছিটকে এদিক-ওদিক পড়ে যান। ট্রেন পার হলে আমরা দৌড়ে তাদের উদ্ধার করতে যাই।'

তারেক আরও বলেন, 'এসআইকে উদ্ধার করে তাকে একটি অটোরিকশায় তুলে দেই। আরেক পুলিশকে দেখি মাটিতে কাতরাচ্ছেন। তাকে পানি পান করানোর পর তিনি নিস্তেজ হয়ে যান। ড্রাইভারকে উদ্ধার করে থানায় জানাতে বলি।'

গেটম্যান না থাকায় স্থানীয় একজনকে রেলগেটের বার নামাতে দেখা যায় স্থানীয় একজনকে। ছবি: স্টার

রেললাইনের পাশে প্রায় ৪০ ফিট দুরত্বে মুরগি ও কাঁচাবাজারের দোকান আছে তারেকের। তিনি জানান, রেলক্রসিংয়ের বার দুর্ঘটনার সময় ওঠানো ছিল।

দুপুরে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলের আশপাশে অবস্থান করছে। স্থানীয়রা সেখানে ভিড় করে আছে, গেটম্যানের রুমে তালা।

বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে অবস্থানকালে ঢাকামুখী ২টি ট্রেন ও চট্টগ্রামমুখী ১টি ট্রেন ক্রসিং দিয়ে চলে যায়। তখনো ক্রসিংয়ের বার ওঠানো ছিল। একপর্যায়ে স্থানীয় একজন গিয়ে গেটবার নামিয়ে দেন। 

স্থানীয় অটোরিকশা চালক সৈয়দ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুর্ঘটনার আগে ট্রেন অনেক হুইসেল দিয়েছে। আমরা হাত দিয়ে ইশারা করেছি চালককে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।'

তবে, দুর্ঘটনার পর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে রেলের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি। 

দোকানদার তারেক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার দোকানের পাশেই মাঝে মাঝে চা খেতে আসতেন গেটম্যান দিপু। তিনি বলেছেন যে প্রায় ৩ মাস ধরে বিনা বেতনে কাজ করছেন।'

'দীপু বলতেন যে আউটসোর্সিংয়ে তিনি কাজ করেন। ৩ মাস ধরে বেতন হয় না। ঊর্ধ্বতনদের জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি। প্রতিদিন সকালে তিনি কাজে এলেও, গতকাল আর আজকে আসেননি।,' বলেন তারেক।

ট্রেন আসার সময় গেটম্যান না থাকলে স্থানীয়রাই হাতের ইশারায় বা আওয়াজ দিয়ে সতর্ক করেন বলে জানান তিনি।

টমটম চালক সৈয়দ হোসেন বলেন, 'আমরা নিজেরাই হাতের ইশারায় চলাচল করি এবং অন্যদের সাবধান করি।'

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম রেলের বিভাগীয় (পূর্বাঞ্চল) ট্রাফিক অফিসার আনিসুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুর্ঘটনার খবর আমাদের কেউ জানায়নি। তাই ঘটনাস্থলে কাউকে পাঠানো হয়নি।'

দুর্ঘটনার সময় গেটম্যানের দীপুর না থাকা এবং তার বেতন না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ বিষয়গুলো আমার জানা নেই।'

Comments