পদ্মায় ডুবে যাওয়া ফেরির সহকারী মাস্টার এখনো নিখোঁজ, দুটি ট্রাক উদ্ধার

২৫০ টন ওজনের ওই ফেরি উদ্ধারের ক্ষমতা নেই উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার।
বিকেল ৫টার দিকে একটি কাভার্ডভ্যান এবং রাত ৮টার দিকে একটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়েছে। ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ/স্টার

পদ্মায় ডুবে যাওয়া ফেরির যানবাহন উদ্ধারের কাজ শুরু করেছ উদ্ধারকারী জাহাজ 'হামজা'। তবে ফেরি 'রজনীগন্ধা' উদ্ধারের কাজ এখনো শুরু হয়নি।

এখনো নিখোঁজ আছেন ফেরির সহকারী মাস্টার হুমায়ুন কবির (৩৯)।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স ঢাকা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনোয়ারুল হক আজ বুধবার রাত ৮টার দিকে দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, 'আমরা বিকেল ৫টার দিকে একটি কাভার্ডভ্যান এবং রাত ৮টার দিকে একটি ট্রাক উদ্ধার করেছি। ২৫০ টন ওজনের ওই ফেরি উদ্ধারের ক্ষমতা নেই উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার।'

'নারায়ণগঞ্জ থেকে পাটুরিয়ার উদ্দেশে রওনা দেওয়া আরেক উদ্ধারকারী জাহাজ "প্রত্যয়ের" জন্য অপেক্ষা করছি,' বলেন তিনি।

আজ সকাল সোয়া ৮টার দিকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে চলাচলকারী রজনীগন্ধা ফেরিটি টার্মিনাল-৫ এর কাছে ডুবে যায়। 

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল জানান, ডুবে যাওয়া ফেরিটিতে ট্রাকের চালক, সহকারী ও ফেরির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ২১ জন ছিলেন। ফেরির সহকারী মাস্টার হুমায়ুন কবির ছাড়া বাকি সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফেরিটি ঘন কুয়াশার কারণে মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের ৫ নম্বর পন্টুনের কাছে পদ্মা নদীতে আটকা পড়ে। সকাল সোয়া ৮টার দিকে এটি ডুবে যায়।'

তিনি বলেন, 'ঘন কুয়াশার কারণে রাত দেড়টা থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল ৭ ঘণ্টার বেশি সময় বন্ধ থাকে। এ সময় ৭টি ফেরি পাটুরিয়ায়, ৪টি দৌলতদিয়ায় ও রজনীগন্ধাসহ ৪টি ফেরি মাঝনদীতে আটকা পড়ে।'

'ফেরি "রজনীগন্ধা" কাভার্ডভ্যান, ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানসহ নয়টি পণ্যবোঝাই যানবাহন নিয়ে ডুবে যায়,' বলেন তিনি।

বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা এবং কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী প্রাথমিকভাবে জানান, বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ফেরিটি ডুবে যায়।

তবে ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন ফেরিতে থাকা অন্তত পাঁচজন। তারা বলছেন, ফেরিটিকে কোনো বাল্কহেড আঘাত করেনি। ফেরির তলায় ছিদ্র ছিল। সেই ছিদ্র দিয়ে পানি প্রবেশের কারণে ফেরিটি পদ্মায় ডুবে গেছে।

কুষ্টিয়া থেকে গাজীপুরগামী একটি তুলাবোঝাই ট্রাকের চালক আশিক শেখ বলেন, 'কুয়াশার কারণে ফেরিটি নদীর মাঝখানে আটকা পড়ে। সকালে ফেরির এক লোক ফেরিতে পানি ঢুকছে বলে আমাদের ফেরি থেকে নেমে যেতে বলে। আমাদের জীবন বাঁচানোর জন্য কোনো লাইফ জ্যাকেট বা অন্যান্য সরঞ্জামও দেয়নি। আমি জীবন বাঁচাতে পানিতে ঝাঁপ দেই। পরে স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে।'

আরেক ট্রাকচালক সাজ্জাদ আলীও একই অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি বলেন, 'আমরা ফেরিতে ছিলাম। এক ক্রু আমাদের জানান যে ফেরিটি ডুবে যাচ্ছে। কোনো সংঘর্ষ হয়নি। ধীরে ধীরে ডুবে যায়।'

ফেরি ডুবির ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিসি দুটি কমিটি গঠন করেছে।

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রেহেনা আক্তার জানান, ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা জেসমিনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মতিউর রহমান জানান, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

Comments