নারায়ণগঞ্জে এসিল্যান্ডের গাড়ির চাপায় ব্যবসায়ী নিহত

‘সরকারি লোকের গাড়ির চাপায় আমার চাচা মারা গেছেন, এই ঘটনায় মামলা করে তো কোনো লাভ হবে না জানি।’
স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় ওয়াহিদকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসিল্যান্ড মো. ইব্রাহিমের গাড়ির চাপায় ওয়াহিদ হোসেন দিলীপ (৪৫) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।

রোববার বিকেলে সোয়া পাঁচটার দিকে সোনারগাঁ পৌরসভার আমিনপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

নিহত ওয়াহিদ পৌরসভার রাইজদিয়া এলাকার বাসিন্দা। স্থানীয় বাজারে তার টাইলস বিক্রির দোকান রয়েছে বলে জানান স্বজনরা।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে দ্রুতগামী একটি গাড়ি রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওয়াহিদকে চাপা দিয়ে পাশের একটি টিনের বেড়ার সঙ্গে ধাক্কা লেগে থেমে যায়। পরে গাড়িটি থেকে নেমে আসেন উপজেলার এসিল্যান্ড মো. ইব্রাহিম ও তার গাড়ির চালকসহ আরও দুইজন। এসিল্যান্ডকে বহন করা সরকারি ওই গাড়িটির সামনে 'মোবাইল কোর্ট' স্টিকার সাঁটানো ছিল। ঘটনার পর গাড়ি থেকে নেমে এসিল্যান্ড ও তার গাড়ির চালক ঘটনাস্থল থেকে সরে যান। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত ব্যক্তিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এই বিষয়ে সোনারগাঁয়ের এসিল্যান্ড মো. ইব্রাহিমের নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির নির্বাচনের কার্যক্রম শেষ করে ফেরার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ওই সময় গাড়িতে এসিল্যান্ড নিজে ও কার্যালয়ের আরও কয়েকজন কর্মচারী ছিলেন। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন এসিল্যান্ড অফিসের গাড়িচালক।

সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। নিহতের পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রোববার রাত নয়টার দিকে নিহতের ভাতিজা জোবায়ের হোসেন জানান, খবর পেয়ে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে মরদেহ পান। ইউএনওর সহযোগিতার আশ্বাসে কোনো মামলা ছাড়াই বিনা-ময়নাতদন্তে সন্ধ্যায় মরদেহ দাফনের জন্য নিয়ে এসেছেন।

'ইউএনও স্যার আমাদের আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তা ছাড়া, সরকারি লোকের গাড়ির চাপায় আমার চাচা মারা গেছেন, এই ঘটনায় মামলা করে তো কোনো লাভ হবে না জানি। এজন্য মামলা বা পোস্টমর্টেমের দিকে আমরা যাচ্ছি না। লাশ দাফনের ব্যবস্থা করছি', বলেন তিনি।

ইউএনও মাহফুজ বলেন, 'এটি একটি দুর্ঘটনা। নিহতের পরিবারের লোকজনেরও এই বিষয়ে দ্বিমত নেই। তবে সরকারিভাবে দুর্ঘটনা বা দুর্যোগের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে যে সহযোগিতা প্রদান করা হয়, তা দেওয়া হবে। যেহেতু নিহত ব্যক্তি তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন, তাই ভবিষ্যতেও যদি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, নিয়ম অনুযায়ী তা দেওয়া হবে।'

গাড়ি দ্রুতগতিতে চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এসিল্যান্ড গাড়িতে থাকা অবস্থায় চালক দ্রুতগতিতে চালানোর কথা না। তারপরও এই বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখব।'

Comments