লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম

খড়ের দাম বাড়ায় গরু পালনে হিমশিম খাচ্ছেন চরাঞ্চলের কৃষক

লালমনিরহাট খড়
ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

এক সপ্তাহ আগেও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের বুকে চর পার্বতীর চাষি মফিদুল ইসলামের (৫৮) ৫টি গরু ছিল। খড়ের দাম বাড়ায় তিনি ২টি গরু বিক্রি করেছেন। বাকি ৩ গরু লালনপালনে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

মফিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যায় সংরক্ষিত খড় নষ্ট হয়ে গেছে। চরের তৃণভূমিগুলোর ঘাস নষ্ট হয়েছে। পানি নেমে গেলেও এখনো ঘাস জন্মায়নি। বেশি দামে খড় কিনে গরুকে খাওয়াতে হচ্ছে।'

৪৫০-৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি খড়ের আঁটি ৮-১০ টাকায় কিনতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'প্রতিটি গরুর জন্য প্রতিদিন ৬-৭টি খড়ের আঁটি প্রয়োজন হয়। গরু পালন করে আগের মতো লাভবান হওয়া যাচ্ছে না।'

লালমনিরহাট খড়
ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

ব্রহ্মপুত্রের বুকে পোড়ারচরের কৃষক নজির আলী (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, '৭টি গরু ছিল। গোখাদ্য সংকটের কারণে ৩টি গরু বিক্রি করেছি। বাকি ৪ গরুর জন্য প্রতিদিন ২৫০ টাকার খড় কিনতে হচ্ছে। মূল ভূখণ্ড থেকে খড় কিনে আনতে হচ্ছে।'

'বেশি দামে খড় কিনে গরুকে খাওয়াতে পারছি না। ৪ গরুর মধ্যে ২টি বিক্রি করার প্রস্তুতি নিয়েছি। গরু পালন আমাদের আয়ের প্রধান উৎস। সারা বছর গরু পালন শেষে তা বিক্রি করে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চালাই,' যোগ করেন তিনি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তার বুকে চর গোকুন্ডার কৃষক সেকেন্দার মন্ডল (৫০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খড়ের দাম অনেকে বেড়েছে। বন্যার আগে যে খড় ২০০ টাকায় কিনেছিলাম এখন তা কিনতে হচ্ছে ৩২০-৩৫০ টাকায়। গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছি।'

একই চরের কৃষক নিজাম উদ্দিন (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গরুকে খড় খাওয়ালে বেশি দুধ পাওয়া যায়। চরের অনেক কৃষক খড় কিনে সংরক্ষণ করলেও এ বছর বন্যায় তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোখাদ্য সংকটের কারণে ৬ গরুর মধ্যে ৩টি বিক্রি করে দিয়েছি।'

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর হাটে খড় বিক্রেতা মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিভিন্ন স্থান থেকে খড় কিনে ট্রাকে পরিবহন করে আনি। পরিবহন খরচ বেড়েছে। এ কারণে খড়ের দামও বেড়েছে। খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরাও খড় বিক্রি করে আগের মতো লাভবান হতে পারছি না।'

তিনি জানান, পরিবহন খরচসহ প্রতি আঁটি খড় কিনতে হচ্ছে ৭-৮ টাকায়। তা বিক্রি করা হচ্ছে ৮-১০ টাকায়।

প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, গঙ্গাধর ও দুধকুমার নদীর বুকে ৪ শতাধিক চর রয়েছে। প্রতিটি চরে ২০০-২৫০ পরিবার বাস করে। প্রত্যেক পরিবারে ৪-১০টি গরু রয়েছে।

গরু পালন চরের মানুষের আয়ের প্রধান উৎস। বন্যায় তৃণভূমি ডুবে গেলে চরের কৃষকদের খড়ের ওপর নির্ভর করতে হয়।

লালমনিরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় চরের কৃষকরা গরু পালনে অসুবিধা হচ্ছে। তারপরও তারা গরু পালনে লাভবান। কারণ, আগের তুলনায় প্রতিটি গরুর দাম ১০-১৫ হাজার টাকা বেড়েছে।'

তিনি জানান, আগামী অক্টোবর থেকে কৃষকরা চরে নতুন ঘাস পাবেন। তখন গোখাদ্য সংকট থাকবে না।

'বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের গোখাদ্য কিনতে সরকারিভাবে সহায়তা করা হয়েছে,' বলে উল্লেখ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Professor Rehman Sobhan

Prof Yunus should have invested his authority in reforms: Rehman Sobhan

Reforms not yet initiated are unlikely to be implemented, says Sobhan

24m ago