আগাম জাতের আলু চাষে লাভবান নীলফামারীর কৃষক

মধ্য নভেম্বর থেকেই নীলফামারী জেলার গ্রামে গ্রামে আগাম জাতের নতুন আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। উৎপাদিত আলুর চাহিদা থাকায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী গ্রামের একটি কৃষক পরিবার নতুন আলু উত্তোলনের পর বস্তায় ভরছেন। ছবি: আসাদুজ্জামান টিপু/ স্টার

মধ্য নভেম্বর থেকেই নীলফামারী জেলার গ্রামে গ্রামে আগাম জাতের নতুন আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। উৎপাদিত আলুর চাহিদা থাকায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

আমন ধানের নবান্নের মতো করে 'নতুন আলু উৎসব' ছড়িয়ে পড়েছে কৃষকের ঘরে ঘরে।

উত্তোলন শুরু হওয়ার পরপরই রাজধানীসহ অন্যান্য জায়গা থেকে আলু ব্যবসায়ীরা এলাকার কৃষকের বাড়িতে ভিড় করছেন।

তারা একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে দাম হাঁকিয়ে ৬৫-৭০ টাকা কেজিতে কৃষকদের কাছ থেকে নতুন আলু কিনছেন। এই আলু ট্রাকে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহরে যাচ্ছে।

কৃষক ও সরকারি কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা যায়, নীলফামারী জেলার কোনো কোনো অংশের মাটিতে বিশেষ গুনাগুণ থাকায় এখানে আগে ভাগেই জন্মায় আলু। এটি এমন একটি সময় যখন দেশের অন্য এলাকার চাষিরা আমন ধান কাটার পর আলু আবাদের জমি প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকে।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তুষার কান্তি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দোআঁশ ও পাললিক জমি যেখান থেকে বর্ষার পানি সহজেই নিষ্কাসিত হয়, সেখানে আগাম জাতের আলু উৎপাদিত হয়।'

কিশোরগঞ্জের পুটিমারী, বাহাগলী, চান্দখানা, নিতাই, মাগুরা, গাড়াগ্রাম এবং সদরের পঞ্চপুকুর, কচুকাটা ও চাপড়া ইউনিয়গুলোতে এ বিশেষ গুনাগুণ সম্পন্ন জমি রয়েছে। একমাত্র এসব গ্রামগুলোতেই আগাম জাতের আলু উৎপাদিত হয়, তিনি যোগ করেন।

কিশোরগঞ্জ উপজেলার দূরাকুটি গ্রামের ক্ষেত থেকে নতুন আলু উত্তোলন করা হচ্ছে। ছবি: আসাদুজ্জামান টিপু/ স্টার

এই ধরনের আলু বীজ বপনের পর থেকে ৫০ থেকে ৫৫ দিন পরেই উত্তোলন করা যায়। অথচ সারা দেশে প্রচলিত আলুর জাত ১১০ দিনের পূর্বে কখনই উত্তোলন করা সম্ভব হয় না।

আগাম জাতের নতুন আলু উৎপাদন করে এমন কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে ব্যবসায়ীরা আলুর জমির পার্শ্বে ট্রাক দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। কৃষকেরা জমি থেকে উত্তোলন করছেন নতুন আলু। উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদেরকে মূল্য পরিশোধ করে আলু নেওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা গ্রামের কৃষক হাতেম আলী (৫০) বলেন, 'আমি সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ৩০ শতাংশ জমিতে নতুন আলু লাগিয়েছিলাম। আমার সর্বসাকুল্যে উৎপাদন ব্যয় ৩৫ হাজার টাকা। ঠিক ৫৫ দিন পর নভেম্বরের মাঝামাঝি উত্তোলন করে ১ হাজার ৬০০ কেজি আলু পাই। সরাসরি জমি থেকে ঢাকার ব্যবসায়ীর কাছে তা প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয়েছে ৬১ হাজার টাকা।

নীলফামারী সদর উপজেলার কচুকাটা গ্রামের কৃষক সোহরাব হোসেন (৬২) ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি ৩ বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু লাগিয়েছেন। আর এক সপ্তাহ পর তা উত্তোলনের উপযোগী হবে। সপ্তাহ পরে আলুর দাম কিছুটা কমে গেলেও ৫০ টাকার টাকার নীচে বিক্রি হবে না। তার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৫০০ কেজি।

সদরের চাপড়া ও পঞ্চপুকুর গ্রামের সাদেকুল (২৮), কিবরিয়া (৩০), জ্যিতেন বর্মনসহ একাধিক নতুন আলু চাষি মুখে চওড়া হাসি দিয়ে জানান, তারা আলু বিক্রির লাভ দিয়ে সন্তানদের নতুন পোশাক ও জুতা কিনে দেবেন। স্থানীয় বিনোদন কেন্দ্র নীলসাগরে বা রংপুর চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাবেন আনন্দ উদযাপন করতে। যা সচরাচর তাদের হয়ে উঠে না অর্থাভাবে।

কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটীমারি গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম (৪৫) জানান, তিনি তার আবাদকৃত ১২ বিঘা জমির নতুন আলু বিক্রি করে এবার বাড়ি পাকা করবেন।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেরে উপপরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, 'আগাম জাতের আলু চাষিরা ৫৫ থেকে ৬০ দিনে ফসল উত্তোলনের পর পর্যায়ক্রমে ৪টি ফসল চাষে যথেষ্ট সময় পান। ফলে তারা ধীরে ধীরে গতানুগতিক ৩ ফসল চাষ থেকে সরে আসছেন এবং অধিক লাভবান হচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৮ হাজার ৫ হাজার মেট্রিক টন আগাম জাতের।

Comments

The Daily Star  | English
Dhakeshwari Temple Yunus speech

Want to build a Bangladesh where everyone's rights are ensured: Yunus

Seeking law enforcement's support during celebration a 'collective failure', he added

1h ago