ডলার সংকট

কীটনাশক আমদানি কমেছে, ফসল উৎপাদন ব্যাহতের শঙ্কা

খেতে কীটনাশক দিচ্ছেন এক কৃষক। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

মার্কিন ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোতে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এর প্রভাব পড়েছে কীটনাশক আমদানিতেও।

কীটনাশক আমদানি কমে যাওয়ায় বোরো ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এমন সময়ে এই শঙ্কা দেখা দিয়েছে, যখন কৃষক বোরো ধান চাষ করছেন।

গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মোট ধান উৎপাদনের ৫৫ শতাংশ আসে বোরো আবাদ থেকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বোরো ধান শুষ্ক মৌসুমের ফসল। মোট কীটনাশকের ৬০ শতাংশই এই ধানের জন্য ব্যবহৃত হয়। আর বাকি অংশ ব্যবহৃত হয় আলু-সবজিসহ অন্যান্য ফসলের জন্য।

তাই কৃষক যেন যথাযথ সময়ে উৎপাদন করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় কীটনাশক সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

অটো ক্রপ কেয়ার লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আশফাকুল আবেদীন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যাংকগুলো সহজে এলসি খুলছে না। এলসি খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সময় নিচ্ছে এবং তারা কম মূল্যের এলসি খুলতে বলছে।'

একই কথা বলেছেন বায়ার ক্রপ সায়েন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল ইসলামও। ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে আমরা এলসি খুলতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছি।'

করোনা মহামারির রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর ব্যাপক প্রভাব আন্তর্জাতিক বাজারে পড়ায় দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে মোট প্রাপ্তির তুলনায় উচ্চ আমদানি ব্যয়ের কারণে গত ১ বছর ধরে চাপে আছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহের শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারে। এক বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ৪৫ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার।

সৈয়দ আশফাকুল আবেদীন বলেন, 'ফসল রক্ষায় যেসব সামগ্রীর প্রয়োজন হয় সেখানে ইতোমধ্যেই কিছু ঘাটতি রয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই ঘাটতি আরও বাড়তে পারে।'

এই ঘাটতির কারণে কীটনাশকের দাম আরও বাড়তে পারে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, সরবরাহ ব্যাহত ও পরিবহনের খরচ বৃদ্ধির কারণে গত ১ বছরে ইতোমধ্যে কীটনাশকের দাম ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার জ্বালানি ও সারের দাম বাড়ানোর পর গত আগস্ট থেকেই কৃষক পর্যায়ে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কৃষক কীটনাশক ব্যবহার কমাতে পারেন।

আশফাকুল আবেদীন বলেন, 'গত ১০ বছরে এত দাম বাড়তে দেখিনি। দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক কৃষক কীটনাশক ব্যবহার কমিয়ে ফেলতে পারেন।'

বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিপিএ) চেয়ারম্যান এম সায়েদুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সাম্প্রতিক দরপতন সময়মতো এলসি খোলার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

বিসিপিএ এর আগে কৃষি ও অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে কীটনাশক আমদানির সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এরপর কৃষি মন্ত্রণালয় নিকটবর্তী মেয়াদে ফসল উৎপাদন নিরাপদ করার লক্ষ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কীটনাশক আমদানির জন্য এলসি খোলার উদ্যোগ শুরু করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ করেছে।

এম সায়েদুজ্জামান বলেন, 'আমরা কিছুটা উন্নতি দেখেছি। কিন্তু কৃষকের জন্য পর্যাপ্ত আমদানি ও সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য তা যথেষ্ট নয়।'

'আমরা যদি প্রয়োজনীয় কীটনাশক আমদানি করতে না পারি, তাহলে তা খাদ্য উৎপাদনে একটি গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে', শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন এম সায়েদুজ্জামান।

কীটপতঙ্গের কারণে দেশের সম্ভাব্য ফসল ফলনের গড়ে ৩৫ শতাংশ নষ্ট হয়, যা বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য বিশাল ক্ষতি।

এম সায়েদুজ্জামান বলেন, 'আমরা যদি সময়মতো ফসলের কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, তাহলে এই ক্ষতি দ্বিগুণ হবে।'

২০২২ সালে কী পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে, সেই তথ্য এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি বিসিপিএ।

বিপিসিএ বলেছে, কৃষকরা আমদানির মাধ্যমে তাদের চাহিদা মেটাচ্ছেন। তারা ২০২১ সালে সাড়ে ৩৯ হাজার টন বা কিলো-লিটারের বেশি ফসল সুরক্ষা রাসায়নিক ব্যবহার করেছেন, যা এর আগের বছর আগের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। কৃষক সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন ছত্রাকনাশক। এরপর কীটনাশক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কীটনাশক আমদানি যাতে ব্যাহত না হয়, সেজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছে।'

দেশের কৃষক ২০২২ সালে ২ কোটি টন বোরো ধান উৎপাদন করেছে। চলতি অর্থবছরে ২ কোটি ১৫ লাখ টন ধান উৎপাদন নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ডিএই, যার সময়সীমা শেষ হবে জুনে।

সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৪ কোটি ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Trump calls for Iran's 'unconditional surrender' as Israel-Iran air war rages on

Israel and Iran attacked each other for a sixth straight day on Wednesday, and Israeli air power reigns over Iran, but needs US for deeper impact

5h ago