বোরো মৌসুম

রেকর্ড পরিমাণ জমিতে হাইব্রিড ধান চাষ

রেকর্ড পরিমাণ জমিতে হাইব্রিড ধান চাষ
ছবি: স্টার গ্রাফিক্স

উচ্চ ফলন এবং অধিক লাভের আশায় চলতি বোরো মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে হাইব্রিড ধান চাষ করছেন কৃষক। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) প্রাথমিক তথ্যে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে। এ বছর মোট ৪৯ দশমিক ৯৯ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। 

এর মধ্যে ১৪ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। যেটি রেকর্ড পরিমাণ এবং মোট বোরো ধানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১ দশমিক ৩৬ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধানের আবাদ করা হয়। চলতি মৌসুমে সেটা ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেশের অন্যতম বীজ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান সুপ্রিম সিড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের জন্য এ বছরটা খুবই ভালো। বেশিরভাগ কোম্পানিই এ বছর ভালো ব্যবসা করেছে।'

ধারাবাহিকভাবে সপ্তম বছরের মতো কৃষক হাইব্রিড ধান চাষে আগ্রহ দেখিয়ে যাচ্ছে, সঙ্গে চাষের জমির পরিমাণও বাড়ছে। তুলনামূলকভাবে কম জমিতে উচ্চ ফলন পেতে হাইব্রিড জাতের ধানের চাষ করছেন কৃষক।

বিবিএসের তথ্য অনুসারে, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর থেকে এ দৃশ্যপটে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। ওই বছর ৬ দশমিক ৮১ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করা হয়েছিল।

২০২১-২০২২ অর্থবছরের বোরো মৌসুমে কৃষকরা হাইব্রিড জাতের আবাদ থেকে ৫৩ লাখ টন ধান সংগ্রহ করেছে। এপ্রিল-জুন সময়কালে এসব ধান সংগ্রহ করা হয়।

সংগৃহীত ধানের পরিমাণ ছিল ওই অর্থবছরের বোরো মৌসুমে সংগৃহীত ২ কোটি টনের এক চতুর্থাংশেরও বেশি। তবে জমির পরিমাণের দিক থেকে বোরো মৌসুমে আবাদ হওয়া মোট জমির এক-পঞ্চমাংশের বেশি জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করা হয়েছিল।

সুপ্রিম সিডের কবির বলেন, 'কৃষক সঠিকভাবে চাষাবাদের পদ্ধতি অনুসরণ করলে হাইব্রিড ধান ইনব্রিড জাতের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি ফলন দেয়। হাইব্রিড জাতের আবাদ বৃদ্ধির পেছনে এটি একটি বড় কারণ।'

এ ছাড়া হাইব্রিড ধানের সরু চাল বাজারে ভালো দামে বিক্রি হওয়ার কারণে কৃষক চাষের প্রতি বেশি আগ্রহী হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কবির বলেন, 'মধ্যম আয়ের মানুষ মোটা চালের চেয়ে সরু চাল পছন্দ করেন এবং কোম্পানিগুলো গত ৫-৬ বছর ধরে এ জাতটি প্রবর্তন করেছে।'

হাইব্রিড ধান চাষের প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশে চীনা জাতের প্রবর্তন করা হয়। সিদ্ধ হওয়ার পর সেটা আঠালো হয়ে যেত।

তিনি বলেন, 'এখন হাইব্রিড ধানের মান ভালো। আঠালো হয় অনেক কম। এ সব কারণে কৃষক হাইব্রিড ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছে।' 

কবির বলেন, 'উচ্চ ফলনশীল জাতের তুলনায় হাইব্রিড চাষে খরচ বেশি না। বীজের দাম বেশি, তবে সেটা মোট খরচের ১০ শতাংশ।'

কৃষকদের বেশি সার প্রয়োগ করতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তবে চাষ পদ্ধতি, মাটি ব্যবস্থাপনা এবং ফসল উৎপাদন ব্যবস্থা হাইব্রিড ধান চাষের ক্ষেত্রে প্রায় একই রকমের।'

তিনি বলেন, 'তবে ফলন ভালো হওয়ায় তারা সেটা পুষিয়ে নিতে পারেন।'

এসিআই এগ্রিবিজনেস ডিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফ এইচ আনসারী বলেন, 'ধানের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষক হাইব্রিড চাষে আরও বেশি বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছেন।' 

খাদ্য ও কৃষি সংস্থার দেওয়া মূল্য তালিকা থেকে দেখা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক কুইন্টাল বা ১০০ কেজি মোটা চালের পাইকারি দাম ছিল ৪ হাজার ৩২৬ টাকা। গত বছর যার মূল্য ছিল ৪ হাজার ১৫৫ টাকা।

তিনি বলেন, 'আগামী আমন মৌসুমেও আমরা ভালো বিক্রি হওয়ার আশা করছি।'

সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক জানান, বীজ ব্যবসায় কোম্পানির সংখ্যা বেড়েছে।

তিনি বলেন, 'এতে তাদের প্রচার-প্রচারণারও একটা প্রভাব পড়েছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English
Unhealthy election controversy must be resolved

Unhealthy election controversy must be resolved

Just as the fundamental reforms are necessary for the country, so is an elected government.

7h ago