গুমাই বিল

বোরোর বাম্পার ফলনেও শ্রমিকের উচ্চ মজুরিতে কৃষকের অস্বস্তি 

কথিত আছে যে, রাঙ্গুনিয়ায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর আয়তনের গুমাই বিলে এক মৌসুমে উৎপাদিত ধান দিয়ে সারা দেশের আড়াই দিনের খাদ্যের চাহিদা মেটানো যায়।
গুমাই বিলে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। ছবি: রাজিব রায়হান/স্টার

চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম গুমাই বিলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।

এখন বোরো ধান কাটার মৌসুম। তাই প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান কাটার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার চাষিরা।

কথিত আছে যে, রাঙ্গুনিয়ায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর আয়তনের এই বিলে এক মৌসুমে উৎপাদিত ধান দিয়ে সারা দেশের আড়াই দিনের খাদ্যের চাহিদা মেটানো যায়। বিলটি উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, চন্দ্রঘোনা, মরিয়মনগর, হোসনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া এবং রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।

স্থানীয় কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এপ্রিলের শেষ দিকে গুমাই বিলে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। তবে ধান কাটার জন্য এবার দক্ষ শ্রমিক সংকটের কারণে মজুরি অনেক বেশি, যা কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে ফেলেছে কৃষকদের।

বাম্পার ফলনেও শ্রমিকের উচ্চ মজুরি অস্বস্তিতে ফেলেছে কৃষকদের। ছবি: রাজিব রায়হান/স্টার

এ মৌসুমে গুমাই বিলের ৩ একর জমিতে বিআরআরআই-৮৮ জাতের ধান চাষ করেছেন কৃষক অমিত। ফলনও সন্তোষজনক। এই ধান কাটার জন্য ৬ জন শ্রমিক নিয়োগের কথা জানিয়ে এ কৃষক বলেন, 'আগে আমরা দৈনিক ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিক নিতাম। এবার তারা এক দিনের জন্য ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা চাচ্ছে।'

একই কথা জানিয়ে কৃষক মো. এনাম বলেন, 'ফসল কাটার মৌসুমে রাঙ্গুনিয়ায় আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমিকরা কাজ করতে আসে। এ বছর তারা যে পরিমাণ মজুরি চাচ্ছে তাতে ফসলের লাভ কতখানি ঘরে তোলা যাবে সেটা একটা প্রশ্ন।'

এবার ২ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন এনাম। ফলনও খুব ভালো হয়েছে বলে জানান তিনি।

আরেক কৃষক মো. সালাম জানান, তিনি এ দফায় আড়াই একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। ফলন ভালো। গত এক সপ্তাহে প্রায় ২৫ শতাংশ ধান কাটা শেষ করেছেন তিনি।

কথিত আছে যে, প্রায় ৩ হাজার হেক্টর আয়তনের এই বিলে এক মৌসুমে উৎপাদিত ধান দিয়ে সারা দেশের আড়াই দিনের খাদ্যের চাহিদা মেটানো যায়। ছবি: রাজিব রায়হান/স্টার

বোরোর বাম্পার ফলনের কথা জানিয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রমিজ উদ্দিন বলেন, 'আমরা কয়েকদিন আগে বিআরআরআই-৮৮ জাতের ধানের নমুনা সংগ্রহের জন্য গিয়েছিলাম। দেখেছি, হেক্টরপ্রতি এর গড় ফলন ৬ মেট্রিক টনের বেশি।'

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েসের ভাষ্য, বোরো চাষের শুরু থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস।

ভালো ফলনের কারণ জানতে চাইলে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, 'গুমাই বিলের জমি উর্বর। এবার আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। এখানকার কৃষকদের দক্ষতাও ভালো। সবমিলিয়ে ভালো ফলন এসেছে।'

Comments