রাজশাহীতে জলাবদ্ধতায় ভেসে গেছে মাছ, তলিয়ে গেছে সবজি খেত

ছবি: স্টার

গত বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিতে রাজশাহীর ছয়টি উপজেলার প্রায় ৭৭৩টি পুকুর প্লাবিত হয়ে ৩৮ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে মৎস্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'নিম্নাঞ্চলের বিলগুলোতে অপরিকল্পিত পুকুর খনন করায় তুলনামূলক উঁচু জমির পুকুর প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টির পানি স্বাভাবিকভাবে নামতে পারেনি। এ কারণে মাছ ভেসে গেছে।'

আজ রোববার দুর্গাপুর উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, মাছচাষিরা উপচে পড়া পুকুর থেকে পানি বের করছেন।

হাটগোদাগাড়ী কাপাসমোল গ্রামের মাছচাষি রবিউল ইসলাম জানান, তার ১৩ বিঘা জমির একটি পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। ৬০ লাখ টাকা মূল্যের আট থেকে ১০ কেজি ওজনের মাছ হারিয়েছেন তিনি।

রবিউল ইসলাম বলেন, 'স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকারি খাল দখল করে মাছ চাষ করছেন। এতে পুরো গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।'

একই গ্রামের মরিয়ম বেগম বলেন, 'অনেক গ্রামবাসী খাল এবং গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ভেসে যাওয়া মাছ ধরেছে। তাদের প্রত্যেকেই ১০ থেকে ২০ কেজি করে মাছ পেয়েছে।'

দুর্গাপুরের খালে আজও কিছু স্থানীয়কে মাছ ধরতে দেখা গেছে।

মাছচাষিদের ক্ষতিপূরণের জন্য ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম।

এ ছাড়া, বৃষ্টিতে জেলার কৃষকরাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, পবা, মোহনপুর, দুর্গাপুর, গোদাগাড়ী, তানোর ও বাগমারা উপজেলায় জলাবদ্ধতার কারণে ২৩৩ হেক্টর জমির আমন ধান ও ১১০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আজ এই প্রতিবেদক সরেজমিনে দেখেছেন, ফসলি জমির পানি নেমে গেলেও চুনিয়াপাড়া, জয়নগর ও বড় ভালাম গ্রামে ফুলকপি ও মূলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত খেতে চাষি। ছবি: স্টার

বড় ভালাম গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, 'মূলা তোলার জন্য আমার আর মাত্র ১০ দিন দরকার ছিল। কিন্তু সব সবজি নষ্ট হয়ে গেছে।'

সবজি খেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেক কৃষকই হতাশ ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

চুনিয়াপাড়ায় লতিফুর রহমান মন্ডল জানান, তার ছোট ভাই মাহাবুর রহমান মন্ডল প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করে ফুলকপি চাষ করেছিলেন জমিতে। এই টাকার অর্ধেক ধারের টাকা ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে ফুলকপির জমি পানিতে তলিয়ে যেতে দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে মারা যান।

দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কুন্তলা ঘোষ ওই দিনই ওই পরিবারকে দেখতে যান।

যোগাযোগ করা হলে কুন্তলা ঘোষ বলেন, গ্রামটির আরও এক কৃষক তার সবজির জমি পানির নিচে দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।'

Comments

The Daily Star  | English
education in Bangladesh

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

13h ago