পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ বেড়ে দ্বিগুণ

ছবি: সংগৃহীত

পেঁয়াজের ঝাঁজ বাজার ছাড়িয়ে পৌঁছেছে আবাদের মাঠে। দেশের মানুষ যখন পেঁয়াজের অতিরিক্ত দামে দিশেহারা, তখন চাষিদেরও পেঁয়াজ আবাদে প্রায় দ্বিগুণ খরচ গুনতে হচ্ছে।

পেঁয়াজের বাল্বের মাত্রাতিরিক্ত দাম, পেঁয়াজ চাষের জমির অতিরিক্ত খাজনা আর শ্রমিকের মজুরি বাড়ার কারণে মূলকাটা পেঁয়াজের আবাদের খরচ প্রায় দ্বিগুণে পৌঁছেছে।

তবে আবাদের খরচ বাড়লেও বসে নেই কৃষকরা। ইতোমধ্যে মাঠে রোপণ করা হচ্ছে মূলকাটা পেঁয়াজ। পাশাপাশি শীত মৌসুমে রোপণের জন্য চলছে পেঁয়াজের বীজতলা তৈরি।

কৃষকরা জানান, চলতি বছর মূলকাটা পেঁয়াজ আবাদের খরচ দ্বিগুণে পৌঁছেছে। গত বছর এক বিঘা মূলকাটা পেঁয়াজ আবাদ করতে খরচ হয়েছিল ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। আর এই বছর খরচ পড়ছে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

শীতকালীন পেঁয়াজ আবাদের শুরুতেই মূলকাটা পেঁয়াজ ঘরে তোলা হয়। ফলে শীতকালীন পেঁয়াজের ফলন পাওয়ার আগে পর্যন্ত মূলকাটা পেঁয়াজ চাহিদা পূরণ করে।

সাধারণত অক্টোবরের শুরু থেকে মূলকাটা পেঁয়াজের আবাদ শুরু হলেও কয়েক দফা বৃষ্টির কারণে চলতি বছরে দেরি হয়েছে।

মূলকাটা পেঁয়াজ আবাদের শুরুতেই বাজারে পেঁয়াজের মাত্রাতিরিক্ত দাম বাড়ার কারণে পেঁয়াজের বাল্বের দামও বেড়ে যায়। ফলে বিপাকে পড়তে হয় কৃষককে।

পাবনার সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক কামরুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গত বছর এক মণ পেঁয়াজের বাল্বের দাম ছিল সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা। এ বছর সাত থেকে আট হাজার টাকা মণ পেঁয়াজের বাল্ব। এক বিঘা জমিতে মূলকাটা পেঁয়াজের আবাদের জন্য কমপক্ষে ১৩ থেকে ১৪ মণ পেঁয়াজের বাল্ব লাগে। ফলে পেঁয়াজের বাল্বের জন্য বড় অঙ্কের টাকা অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে।

পেঁয়াজ আবাদের জমির খাজনাও বেড়েছে দ্বিগুণ। গত বছর এক বিঘা জমির জন্য আট থেকে ১০ হাজার টাকা খাজনা দিতে হয়েছে। এ বছর এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খাজনা দিতে হচ্ছে।

চলতি বছর এক বিঘা জমিতে মূলকাটা পেঁয়াজ আবাদ করতে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।

সুজানগর উপজেলার খারাপাড়া গ্রামের কৃষক শামসুল আলম বলেন, এ বছর জুনেই পেঁয়াজের বাজার অনেক চড়া থাকায় বেশিরভাগ কৃষক বেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। ফলে কৃষকের ঘরে পেঁয়াজের বাল্বের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ বছর প্রতি কেজি মূলকাটা পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ৫০ টাকার বেশি পড়বে। গত বছর এক কেজি মূলকাটা পেঁয়াজ আবাদের খরচ হয়েছে ২৮ টাকা।

উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলেও দাম খুব একটা কমার সম্ভাবনা দেখছেন না কৃষকরা।

এদিকে কৃষকরা যখন অতিরিক্ত ব্যয়ে মূলকাটা পেঁয়াজ আবাদ করছে, একই সময় অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজের বীজ কিনে বীজতলা তৈরি করছেন শীতকালীন পেঁয়াজ চাষিরা।

এক কেজি পেঁয়াজের বীজের দামও বেড়েছে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা।

পেঁয়াজ চাষিরা জানান, বছরজুড়েই পেঁয়াজের বাজার চড়া থাকায় বেশিরভাগ কৃষক পেঁয়াজের বীজ তৈরি করার চেয়ে দানাদার পেঁয়াজ বিক্রিতে জোর দিয়েছেন। যে কারণে বীজের সংকট দেখা দিয়েছে। পেঁয়াজ চাষের ভরা মৌসুমেও কৃষকরা এখন কেনা বীজের ওপর নির্ভরশীল।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, এ বছর দেশে দুই দশমিক ৬৬ লাখ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. আবু জাফর আল মনসুর ডেইলি স্টারকে বলেন, এ বছর পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ বেশি হলেও কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। যে কারণে পেঁয়াজ-চাষিদের লোকসানের ভয় নেই। এ বছর পেঁয়াজের ফলন গত বছরের তুলনায় ভালো হবে বলে আশা করছি।

গত বছর প্রতি হেক্টর জমিতে ১৪ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন পেঁয়াজের উৎপাদন হলেও এ বছর প্রতি হেক্টরে ১৫ দশমিক ২৪ মেট্রিক টন ফলন পাওয়ার আশা করা হচ্ছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।

Comments