সরবরাহ সংকটে বাড়ছে দেশি পেঁয়াজের ঝাঁজ

পেঁয়াজ
ছবি: স্টার ফাইল ফটো

সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় কম ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের সংকট আরও গভীর হচ্ছে।

রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ সংকটের কারণে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

মিরপুরের পল্লবী সম্প্রসারণ এলাকার খুচরা বিক্রেতা নুরুল আলম শিকদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত এক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে।'

গত ছয় মাস ধরে ক্রমাগত উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতির মধ্যে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়লো। গত এপ্রিল থেকে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা। এখন তা ১১৫ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির তথ্য অনুসারে, আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে তা ছিল ৯০ থেকে ১০৫ টাকা।

সংস্থাটির তথ্যে আরও জানা যায়, গত এক বছরে দেশি পেঁয়াজের দাম ২৫ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেড়েছে।

পেঁয়াজ বিক্রির অন্যতম কেন্দ্র পুরান ঢাকার শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল মাজেদ বলেন, 'খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজের ঘাটতি আছে। আমরা চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ পাচ্ছি। এ কারণেই দাম এত বেড়েছে। আগামী তিন মাস পর নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কমে আসবে।'

তিনি আরও বলেন, 'কোনো কারণে আমদানি করা পেঁয়াজের চাহিদা কমে যাওয়ায় গত এক সপ্তাহে বিদেশি পেঁয়াজের দাম কমেছে।'

কৃষি মন্ত্রণালয়ের দাবি, এ বছর দেশে ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। তা দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট। মন্ত্রণালয় আরও বলছে, হিমাগারের অভাবে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় ছয় থেকে সাত লাখ টন আমদানি করতে হবে।

তবে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে বৈরী আবহাওয়ার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম।

শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক সপ্তাহ আগে ১০৩ থেকে ১০৫ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়।'

তার দাবি, বন্যার কারণে ভারতীয় পেঁয়াজের গুণমানও কমেছে। তাই প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের চাহিদা বাংলাদেশে কম।

গতকাল শনিবার দেশের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা পাবনায় পেঁয়াজের দাম মণপ্রতি (প্রায় ৩৭ কেজি) বেড়ে পাঁচ হাজার ৬০০ টাকা হয়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে প্রায় এক হাজার ২০০ টাকা।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে যে পরিমাণ পেঁয়াজ মজুদ আছে তাতে পাইকারদের চাহিদা এক মাসের বেশি মেটানো সম্ভব। আশা করছি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাজারে নতুন পেঁয়াজ পাওয়া যাবে।'

বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নূর আলম চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন অনেক চাষি শীতের আগাম জাতের পেঁয়াজ রোপণ করছেন। আগামী ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারিতে এই পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'এ সময় অনেকে পুরোনো পেঁয়াজ থেকে বীজ উৎপাদন করেন। যারা বড় আকারে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করেন তারাও কৃষকদের কাছ থেকে পুরোনো পেঁয়াজ কেনেন। এ কারণে অক্টোবরে পুরোনো পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যায়। এটা প্রতি বছরই হয়ে থাকে।'

এ সময়ে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বাড়ে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি জানান, সাধারণত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে পেঁয়াজ চাষ হয়। পরের বছর মার্চ বা এপ্রিলের মধ্যে সেই পেঁয়াজ বাজারে আসে।

Comments

The Daily Star  | English

In coffins, from faraway lands

Kazi Salauddin, a 44-year-old man from Cumilla, migrated to Saudi Arabia in October 2022, hoping to secure a bright future for his family. But barely a year later, Salauddin, the father of two daughters and a son, died suddenly.

8h ago