মানিকগঞ্জ

স্কুল কমিটির নির্বাচনে হামলা: এবার উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা আনন্দমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি পদে নির্বাচন ঘিরে হামলা-মারধরের ঘটনায় এবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এর আগে ২ অভিভাবককে মারধরের ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলাম ও হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আজিম খানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা আনন্দমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি পদে নির্বাচন ঘিরে হামলা-মারধরের ঘটনায় এবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

বুধবার মানিকগঞ্জের আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আদালতে এই মামলা করেন হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল হাসান রাজিব।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে,  'গত ২৪ জুলাই ঝিটকা আনন্দমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি পদে নির্বাচনের তারিখ ছিল। ওই পদে প্রার্থী ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান। নির্বাচনে মমতাজ বেগমের জয় নিশ্চিত মনে করে আসামিরা মমতাজ বেগমের সমর্থকদের মারধর এবং বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।'

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, 'লেবু হাসান নামের একজন ভোটারকে প্রকাশ্যে ভোট দিতে বলেন দেওয়ান সাইদুর রহমান। প্রকাশ্যে ভোট দিতে অস্বীকার করলে আসামিরা লেবু হাসানসহ কয়েকজনকে মারধর করেন। তারা অস্ত্র নিয়ে লেবু হাসানসহ অন্যান্যদের হত্যার হুমকি দেন এবং বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। এক পর্যায়ে দেওয়ান সাইদুর রহমান তার হাতে থাকা লাইসেন্স করা শটগান দিয়ে ফরিদ মোল্লাকে গুলি করেন। আরেক আসামি সুমন মোল্লা লাঠি দিয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আজিম খানকে আঘাত করেন। অন্য আসামিরা চালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল মজিদ, সেলিম মোল্লা, রাজিবুল হাসান রাজিবসহ ১২ জনকে মারধর করেন এবং তাদের কাছে থাকা টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেন।'

এই মামলার সব আসামিই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানের সমর্থক।

জানতে চাইলে হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, 'গত ২৪ তারিখের ঘটনা সম্পর্কে দেশের মানুষ আগেই জেনে গেছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা ২ জন অভিভাবক সদস্যসহ আমাদের বেশ কয়েকজন সমর্থককে মমতাজ এমপির লোকজন মারধর করেছে। ওই ঘটনায় আগেই মামলা হয়েছে এবং তদন্ত কাজ চলছে। তাদের অপকর্ম ঢাকতেই আমাদেরকে আসামি করে একটি মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে। আশা করি, আদালত তা বুঝতে পারবেন।'

এর আগে, সভাপতি পদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২ নির্বাচিত অভিভাবক সদস্যকে মারধরের ঘটনায় ২৭ জুলাই আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আদালতে মামলা করেন অভিভাবক সদস্য মো. মহিউদ্দিন মঞ্জু।

ওই মামলায় আসামি করা হয় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলাম, হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আজিম খান, হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান ওরফে ফিরোজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সহ-সভাপতি সেলিম মোল্লা ও যুবলীগ নেতা ফরিদ মোল্লাসহ ৩৮ জনকে।

ওই মামলার সব আসামি মানিকগঞ্জ-২ (হরিরামপুর-সিঙ্গাইর) আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের অনুসারী।

ওই মামলায় বলা হয়, গত ২৪ জুলাই স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা হয়। নির্বাচনে সভাপতি পদে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান প্রার্থী হন। মামলার বাদী মহিউদ্দিন খান ও সাক্ষী (স্থানীয় গোপীনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) মিজানুর রহমান অভিভাবক সদস্য ও ভোটার। তারা দেওয়ান সাইদুর রহমানের সমর্থক।

নির্বাচন উপলক্ষে সেদিন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ উপস্থিত হন। ওই দুই ভোটার নির্বাচন শুরু হওয়ার আগে ভোট দিতে বিদ্যালয় কেন্দ্রে উপস্থিত হলে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের সমর্থক ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করে তাদেরকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সামনে মারধর করেন।

সেসময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সমর্থকদের কয়েকজনের কাছ থেকে নগদ অর্থ, স্বর্ণের চেইন ও মূল্যবান মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

পরে নির্বাচনী ব্যালট পেপার ছিনতাই ও আইনশৃঙ্খলা অবনতির কারণে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন।

 

Comments