জালাল মিয়া: দিনমজুর থেকে ‘বিত্তবান’ মাদক চোরাকারবারি

আশির দশকের কথা। মা মারা যাওয়ার পর বাড়ি থেকে বিতাড়িত কিশোরটি একসময় অন্যের বাড়িতে আশ্রিত ছিল। সেসময় মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। এভাবে প্রায় ৩ বছর কাটার পর চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সেই কিশোর।
মাদক-চোরাকারবারি-জালাল
জালাল মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

আশির দশকের কথা। মা মারা যাওয়ার পর বাড়ি থেকে বিতাড়িত কিশোরটি একসময় অন্যের বাড়িতে আশ্রিত ছিল। সেসময় মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। এভাবে প্রায় ৩ বছর কাটার পর চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সেই কিশোর।

প্রথমে চিনি ও শাড়ি চোরাচালানের কাজ করে। পরবর্তীতে জড়িয়ে পড়ে মাদক চোরাকারবারে। এখন তিনি  একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি, একটি একতলা বাড়ি, জমি-দোকানসহ বিপুল সম্পদের মালিক।

সেই মাদক চোরাকারবারি জালাল মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পাশে হবিগঞ্জের‌ মাধবপুর উপজেলার মনতলা গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে। নিজের বাড়ি থেকে বের হয়ে বিজয়নগরের কালাছড়া গ্রামে আশ্রয় নেওয়া জালাল এখন সেই উপজেলার বাসিন্দা।

গত ৩০ জুলাই রাতে বিজয়নগরের শীর্ষ এই মাদক চোরাকারবারি ও তার ৪ অংশীদারকে মাদকসহ আটক করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মাদকবিরোধী টাস্কফোর্সের সদস্যরা।

মাদক-চোরাকারবারির-বাড়ি
জালাল মিয়ার ডুপ্লেক্স বাড়ি। ছবি: স্টার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, মাদক চোরাকারবারি করে বাড়ি-গাড়ি ও বিপুল সম্পত্তির মালিক জালাল এক সময় দিনমজুর ছিলেন। আনুমানিক ৮ বছর বয়সে জালালের মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

তিনি আরও জানান, জালাল রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিজয়নগরের কালাছড়া গ্রামে আশ্রয় নেয়। সেখানে মানুষের বাড়িতে কাজ করে। প্রায় ৩ বছর পর সে চোরাকারবারে জড়িয়ে পড়ে।

জালালের বরাত দিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একেবারে ভারত সীমান্তঘেঁষা গ্রাম কালাছড়ার অনেকেই বহু বছর আগে থেকে চোরাকারবারে জড়িত। আশির দশকে ওই গ্রামের এক চোরাকারবারি চিনি ও শাড়ি পাচার করতে শ্রমিক হিসেবে জালালকে নেয়। কয়েক বছর পর বেশি মুনাফার লোভে জালাল মাদক পাচারে জড়িয়ে পড়ে।'

'এরই মধ্যে যুবক হয়ে ওঠা জালাল ওই এলাকার প্রভাবশালী ইউপি সদস্য ও চোরাকারবারি হানিফ মিয়ার শ্যালিকাকে বিয়ে করেন। তারপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি,' যোগ করেন মো. মিজানুর রহমান।

তিনি আরও বলেন, 'সেই জালাল এখন কালাছড়ার পার্শ্ববর্তী বিষ্ণুপুর রানওয়ে বাজারের কাছে জমি কিনে দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল ভবন গড়ে তুলেছেন। এ ছাড়াও, কালাছড়া গ্রামে পাকা ভবন তৈরি করেছেন। বিষ্ণুপুরের বাড়ির কাছে বাজারে তার কয়েকটি দোকান আছে।'

মাদকবিরোধী টাস্কফোর্সের অভিযানে জালালের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া ৫ জনসহ পলাতক আরও ৫ জনের নামে বিজয়নগর থানায় মামলা হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রেজাউল করিম বাদী হয়ে করা মামলায় বলা হয়, কালাছড়া গ্রামের হান্নান মিয়ার দোকানের পশ্চিম পাশের কাঁচা রাস্তার ওপর থেকে ১০০ কেজি গাঁজা, ১ হাজার ৬৯৭ পিস ইয়াবা ও ৭১০ বোতল ফেনসিডিল ও স্কফ উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে জালাল মিয়ার সঙ্গে কথা বলেছে ডেইলি স্টার। তিনি বলেন, 'ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করায় রাগ করে কালাছড়া চলে আসি। যতদূর মনে আছে প্রথমে কালাছড়া গ্রামের কাশু মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম।'

'১৯৮৮ বন্যার পর বিডিআর ক্যাম্পে কাজ করতাম। তাদেরকে লাকড়ি ও সবজি এনে দিতাম। ক্যাম্পের লাইনম্যান রকিবের সঙ্গে সীমান্তে যাওয়া-আসার এক পর্যায়ে চোরাচালান শুরু করি', বলেন তিনি।

জালালের বিষয়ে স্থানীয় বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জালাল তার বাবার আত্মীয়তার সূত্রে ছোটবেলায় কালাছড়ায় আশ্রয় নিয়েছিল। এরপর সে মাদক চোরাকারবারে জড়িয়ে পড়ে এবং এই এলাকায় বিয়ে করে।'

'এক সময় যার কিছুই ছিল না পরবর্তীতে সে বিষ্ণুপুরে জমি কিনে। ৪-৫ বছর আগে দোতলা বাড়ি করে। এলাকার সবাই জানে, সে মাদক চোরাকারবারি,' যোগ করেন তিনি।

বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশের পক্ষ থেকে উপজেলার মাদক চোরাকারবারিদের তালিকা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।'

Comments