ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

১৭ বছর বয়সে মামলা, ২ বছর পর কারাগারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার নামে ২০২০ সালে যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয় তখন তার বয়স ১৭ বছর। অথচ, তাকে প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে মামলাটি করা হয় এবং সেই মামলায় প্রায় এক মাস ধরে কারাবন্দি রয়েছেন তিনি।
খাদিজাতুল কুবরা। ছবিধ সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার নামে ২০২০ সালে যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয় তখন তার বয়স ১৭ বছর। অথচ, তাকে প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে মামলাটি করা হয় এবং সেই মামলায় প্রায় এক মাস ধরে কারাবন্দি রয়েছেন তিনি।

তার অপরাধ ছিল একটি ফেসবুক ওয়েবিনার হোস্ট করা, যেখানে একজন অতিথি বক্তা বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন।

ইতোমধ্যে ঢাকার একটি আদালতে ওই শিক্ষার্থীর জামিন আবেদন ৩ বার নাকচ হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ্ জগলুল হোসেন তার জামিন আবেদন নাকচ করেন।

২ বছর আগে দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র সম্প্রতি তৈরির পর গত ২৭ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১১ ও ১৯ অক্টোবর কলাবাগান ও নিউমার্কেট পুলিশ মামলা দায়ের করে।

তবে, পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করার পর আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিলে বিষয়টি সামনে আসে।

খাদিজার বোন মনিরা বলেন, 'এই খবর শুনে আমরা পুরোপুরি হতবাক হয়ে যাই। আমরা কেউই জানতাম না যে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ রাত সাড়ে ৯টায় মিরপুরে আমাদের বাসায় এসে তাকে তুলে নিয়ে যায়।'

তিনি আরও বলেন, 'মামলা যখন করা হয়েছিল তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর। সেক্ষেত্রে মামলার বিষয়টি তার বাবা-মাকে জানানো দরকার ছিল। কিন্তু পুলিশ তা করেনি।'

খাদিজাতুল কুবরার জাতীয় পরিচয়পত্র এবং অ্যাকাডেমিক নথি অনুযায়ী, ২০২০ সালে তার বয়স ছিল ১৭ বছর।

তবে, ২ থানার পুলিশই মামলায় তাকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে দেখিয়েছে। একটি মামলায় তার বয়স দেখানো হয়েছে ১৯ এবং অপরটিতে ২২ বছর।

২ মামলাতেই অপর আসামি হিসেবে রয়েছেন ওই ওয়েবিনারের অতিথি বক্তা মেজর (অব.) দেলোয়ার হোসেন।

দেলোয়ার বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে এর আগেও একই অভিযোগে মামলা হয়েছিল।

২টি ভিন্ন থানায় ২ জন ভিন্ন কর্মকর্তা এক সপ্তাহের ব্যবধানে মামলা ২টি করলেও উভয় মামলার ভাষা প্রায় অভিন্ন।

২ মামলাতেই বলা হয়েছে, খাদিজা 'বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘোলা করার চেষ্টা করছেন', 'সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ডে সাধারণ জনগণকে জড়িত করছেন' এবং 'বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন'।

এতে আরও বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা 'বাংলাদেশের বৈধ সরকারের পতনের' চেষ্টা করছিলেন এবং 'প্রধানমন্ত্রী, সরকারি সংস্থা ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অপমান করেছেন'।

মামলায় বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা তাদের বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়দের সাহায্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের এসব চিন্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া বাধ্যতামূলক।

এই মামলাটি যে ভিডিওর ভিত্তিতে করা হয়েছে সেখানে দেখা যায়, উপস্থাপক হিসেবে খাদিজা প্রশ্ন করেছেন, 'আইনশৃঙ্খলার বর্তমান অবনতি ও সামাজিক অবক্ষয় সম্পর্কে আপনার মতামত কী?', 'ছাত্র রাজনীতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ?', 'আপনি কি মনে করেন বিএনপি বিরোধী দল হিসেবে তার ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে?'।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ল্যাবরেটরি রিপোর্ট অনুসারে, তিনি তার অতিথি বক্তার বক্তব্য থেকেই প্রশ্নগুলো করছিলেন।

সিআইডি যে প্রতিক্রিয়াগুলোকে বিদ্বেষমূলক হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে রয়েছে সরকারকে 'ফ্যাসিবাদী' বলা। আলোচনায় দাবি করা হয়েছে যে একটি দেশপ্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য জনঅভ্যুত্থান প্রয়োজন।

ইউটিউবে শুধুমাত্র দেলোয়ারের হ্যান্ডেলে সম্প্রচারিত ভিডিওটি প্রায় ১১ হাজারবার দেখা হয়েছে।

খাদিজার বিরুদ্ধে মামলাকারী কলাবাগান থানার এসআই মোহাম্মদ আরিফ হোসেন মামলার কথা মনেও করতে পারেননি।

পুরো এফআইআর বাদীর নিজস্ব বয়ানে লেখা হলেও আরিফ বলেন, 'আপনি কোন ঘটনার কথা বলছেন, মনে করতে পারছি না। আমি কখনো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছি বলে মনে পড়ছে না।'

নিউমার্কেট থানার মামলার চার্জশিটে বলা হয়েছে, 'খাদিজাতুল কুবরাকে গ্রেপ্তারের জন্য একাধিক অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি পলাতক থাকায় গ্রেপ্তার করা যায়নি।'

খাদিজার বোন মনিরা বলেন, 'সে সবসময় বাড়িতেই ছিল। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেত, বাসায় বাচ্চাদের পড়াতো।'

মনিরা জানান, খাদিজার কিডনিতে পাথর ধরা পড়েছে। সেই অবস্থাতেই কোনো ধরনের ওষুধ ছাড়াই কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

তিনি বলেন, 'আমাদের বাবা কুয়েতে কাজ করেন। আমাদের পড়ালেখা করানোর জন্য তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। খাদিজা সবসময়ই ভালো শিক্ষার্থী ছিল।'

'আমার বোনের স্বপ্ন এভাবে শেষ হতে পারে না', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
World Bank’s senior official speaks on lending culture in Bangladesh

Banks mostly gave loans to their owners rather than creditworthy borrowers

Bangladesh’s banking sector was not well-managed in recent years. Banks mostly gave loans to their owners, rather than to creditworthy entities. Consequently, several banks are now in difficulty.

12h ago