যে কারণে গ্রেপ্তার ভোরের পাতার সম্পাদক এরতেজা হাসান

ভোরের পাতা পত্রিকার সম্পাদক এরতেজা হাসান গ্রেপ্তার
ড. কাজী এরতেজা হাসান। ছবি: সংগৃহীত

জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ভূইয়ার ভাই সাইফুল ইসলাম ভূইয়ার দায়ের করা মামলায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে গুলশান-২ এর কার্যালয় থেকে এরতেজা হাসানকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। মামলার বাদী সাইফুল ইসলাম ভুঁইয়া আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লি. এর উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

জমির দলিল জালিয়াতির অভিযোগে গত ১০ জানুয়ারি ঢাকার খিলখেত থানায় ওই মামলায় তিন জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন, আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ, রিয়াজুল আলম ও সেলিম মুন্সী। জালিয়াতিতে সহযোগিতা করার অভিযোগে এরতেজা হাসানকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা নর্দান ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য জমি কেনার উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালের প্রথম দিকে বাদীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করে আলাপ আলোচনা করেন। আসামিরা বাদীর ভাই মো. নজরুল ইসলাম ভূইয়ার মালিকানাধীন দক্ষিণখান মৌজায় ৫ বিঘা জমি পছন্দ করেন। উভয় পক্ষের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে জমির মোট দাম ৫০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে একটি চুক্তিপত্র দলিল তৈরি করে অগ্রিম ১২ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। পরে আসামিপক্ষ আরও ১৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। বাকি ২০ কোটি টাকা ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করে জমি রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার জন্য সময় নিয়ে আসামিপক্ষ তাদের ক্যাম্পাস তৈরির কাজ শুরু করেন। নির্ধারিত তারিখে আসামিগণ বাকি টাকা পরিশোধ না করে আবারও সময় নিয়ে বাদীকে জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু বাদীপক্ষ আসামিদের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে অবশিষ্ট টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার জন্য বলেন।

এরতেজা হাসানের রিমান্ড চেয়ে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া পুলিশের ফরোয়ার্ডিং রিপোর্টে বলা হয়েছে, আসামিগণ জমির মূল্য বাবদ বাকি ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার জন্য কাজী এরতেজা হাসানের সঙ্গে যোগসাজশে বাড্ডা রেজিস্ট্রি অফিসের সাবরেজিস্ট্রার বরাবর দলিলটি কমিশনিংয়ের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করার আবেদন করেন। কমিশনিংয়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-রেজিস্ট্রার সরকার লুৎফুল কবির ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর কমিশনিংয়ের জন্য তারিখ নির্ধারণ করে মোহরার মো. হানিফ মিয়াকে এবং তার সহযোগী মো. আলী আজগরকে দায়িত্ব দেন। এরপর ১৫ ডিসেম্বর নির্ধারিত দিনে দলিল কমিশনিংয়ের জন্য কাজী এরতেজা হাসান বাড্ডা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে তাদের গাড়িতে করে কারওয়ান বাজারে 'ভোরের পাতা' পত্রিকার অফিসে নিয়ে যান। সেখানে মো. আলী আজগরকে অফিসের নিচে বসিয়ে রেখে মোহরার মো. হানিফ মিয়াকে নিয়ে উপরে যান। সেখানে থাম্প ইমপ্রেশন বই ও বিতর্কিত দলিলে কথিত মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া নামে একজনকে দিয়ে সই করিয়ে নেয়। সেখানে আরও ৪-৫ জন উপস্থিত ছিলেন। মো. হানিফ মিয়া দলিল দাতাকে দলিলে থাকা ছবির সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়ার সময় আসামি কাজী এরতেজা হাসান ধমক দিয়ে বলেন যে, তিনি দলিলদাতার শনাক্তকারী ও নজরুল ইসলাম ভূইয়া নিজে উপস্থিত আছেন অতএব দলিলের সঙ্গে থাকা ছবির সঙ্গে দাতাকে মিলিয়ে নেওয়ার দরকার নেই। এমনকি দলিল রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে থাম্প ইম্প্রেশন (টিআই) বইয়ে কথিত দাতাকে টিপ দিতে দেননি। আসামি কাজী এরতেজা হাসান দাবি করেন যে, কোম্পানির দলিল করতে টিপ সইয়ের প্রয়োজন হয় না। গ্রেপ্তার আসামি প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে দলিলটি কৌশলে সম্পাদন করিয়ে নেন।

আজ বুধবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান ২ দিনের রিমান্ড আবেদন করে এরতেজা হাসানকে আদালতে হাজির করেন। পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোশাররফ হোসেন ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ড. কাজী এরতেজা সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এবং এফবিসিসিআই পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত।

Comments

The Daily Star  | English

Familiar Dhaka in an unfamiliar mood

The familiar city now appears in an unfamiliar form—no traffic jams, no honking, no packed footpaths

14m ago