‘আব্বু তুমি ভুল পথে আছো, ফিরে আসো’

ঢাকার কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে কথা বলেন আম্বিয়া সুলতানা এমিলি। ছবি: সংগৃহীত

'আব্বু, যদি আমার মেসেজ পেয়ে থাকো তোমাকে বলতে চাই, তুমি চরম একটা ভুল পথে আছো। তুমি তোমার মাকে বিশ্বাস করতে পারো। তোমার কাছে আমার অনুরোধ, তুমি যদি কখনো তোমার মাকে ভালোবেসে থাকো, তাহলে তুমি দেশের জন্য কোনো ধরনের হুমকির কাজ করবে না, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা, নৃশংসতা, অন্যায় কাজে সামিল হবে না। আমি অনুরোধ করছি, তুমি আত্মসমর্পণ করো। প্রশাসন সদয় হবে।'

কথাগুলো বলছিলেন আম্বিয়া সুলতানা এমিলি। তার ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র আবু বক্কর রিয়াসাদ রাইয়ান ৮ মাস আগে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে সে বান্দরবানে পাহাড়ে আছে বলে জানান তিনি।

গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আম্বিয়া সুলতানা এমিলি বলেন, 'আমি মাস্টার্স কমপ্লিট করা মেয়ে। আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, চরম ভুল একটা পথকে সঠিক মনে করে সন্তানকে দিয়েছিলাম। এ কারণে আজকে আমার আদরের সন্তান বান্দরবানের পাহাড়ে আছে। আমি জানি না আমার সন্তান বেঁচে আছে কি না। জানি না আমি কখনো দেখতে পাবো কি না। এটা মা হিসেবে আমার চরম ব্যর্থতা। শিক্ষিত মেয়ে হয়েও আমি বুঝতে পারিনি। আমি বুঝতে পারিনি সঠিক কোনটা, ভুল কোনটা।'

একমাত্র সন্তান আবু বক্কর রিয়াসাদ রাইয়ানের ব্যাপারে তার মা বলেন, 'ও আমার কলিজার টুকরা। মেধাবী ছাত্র, বিনয়ী ছিল। বিপথে নেওয়ার জন্য এমন ছেলেদেরই টার্গেট করা হচ্ছে। গত ৫ নভেম্বর র‌্যাবের যারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তারা খুবই সাবলীলভাবে আমাকে বুঝিয়েছেন। জঙ্গিদের উদ্দেশ্য কী, দেশের জন্য তারা কতোটা ভয়ঙ্কর, দেশে যে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, এসব কিছু এখন আমার কাছে পরিষ্কার। একজন মা কখনো চায় না তার আদরের সন্তান বিপথে চলে যাক। কিন্তু সন্তানসহ আমি প্ররোচিত হয়ে গিয়েছিলাম।'

জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'ছেলের শিক্ষক আল আমিন আমাদের খুবই বিশ্বস্ত ছিল। ভদ্র বিনয়ী আল আমিন খুব ভালো পড়াতো বলে আমরা তাকে খুবই পছন্দ করতাম। সে আমাদের প্ররোচিত করেছে। আমাদের কোরআন হাদিসের রেফান্সে দিয়ে গাজওয়াতুল হিন্দ সম্পর্কে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। সে বলেছিল যে, প্রস্তুতি নিতে হবে, গাজওয়াতুল হিন্দ সম্পর্কে তৈরি হয়ে থাকতে হবে। আমি প্রথমে সন্তানকে বলতাম তোমার এসব শুনতে হবে না, তুমি পড়াশুনা করো।'

এমিলি জানান, রিয়াসাদ রাইয়ান বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিল। সে ছোটবেলা থেকেই বৃত্তি পাওয়া ছাত্র। শিশু একাডেমি থেকে পুরস্কার পেয়েছে। আল আমিন খুবই অল্প সময়ে তাকে আয়ত্তে নিয়েছে।

আম্বিয়া সুলতানা এমিলি বলেন, 'আমিও ভুল বুঝে মেনে নিয়েছিলাম। আমাকে বলা হয়েছিল, আমার সন্তানকে প্রশিক্ষণে নিয়ে যাওয়া হবে, ভালো প্রশিক্ষণ। সে সব কিছু জানবে। সে দেখা করতে পারবে, সে যোগাযোগ করতে পারবে। সে বাসায় আসতে পারবে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছে।'

এই মা বলেন, 'আমি দেশবাসীর উদ্দেশে বলতে চাই, আমি যে ভুল করেছি, আমার বুকটা যেভাবে খালি হয়েছে, সেই একই ভুল যেন কোনো বাবা-মা না করেন। আমার পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ। আমার খাওয়া ঘুম সব হারাম হয়ে গেছে।'

ছেলের উদ্দেশে মা বলেন, 'তোমার বাবা অনেক অসুস্থ হয়ে গেছে। আমি খুব ভয় পেয়ে গেছি, যদি তার কিছু হয়ে যায়। তোমার নানা-নানী সবার অবস্থা খারাপ। তোমার কাকু, আত্মীয়-স্বজন সবাই পাগল প্রায়। আমার মা হিসেবে, তোমার বাবার জন্য চরম ব্যর্থতা হবে যদি তুমি বিশৃঙ্খলা করো, নৃশংস কিছু করো। তুমি তোমার বাবা-মাকে অপমানিত কোরো না। এই দেশে জন্ম নিয়ে তুমি অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছো।'

নিজের ব্যর্থতার ব্যাপারে এমিলি বলেন, 'আমি শিক্ষিত মা হিসেবে অনুরোধ করছি, বাবা-মা হিসেবে সন্তানকে সময় দেবেন, বুকে জড়িয়ে ধরবেন, ভেতরটা জানার চেষ্টা করবেন। ভালবাসবেন। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য, অবহেলা করবেন না। সন্তানের মনটা বুঝুন। মা-বাবা যখন সত্যিকারের বন্ধু হতে পারে তখন সব কিছু শেয়ার করে, কাছে যেতে পারে। সন্তান হিসেবে অসহায় বোধ করবে না। বিপথে চলে যাবে না। সকল বাবা-মাকে বলছি, সংশোধন হন, নইলে নিজেও ধ্বংস হয়ে যাবেন, জাতিও ধ্বংস হয়ে যাবে।'

ছেলেকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ করছি, আমাদের ছোট ছোট সন্তানেরা পাহাড়ে না খেয়ে আছে। ওরা ওখানে কীভাবে বাঁচবে। ওরা নিজেও জানে না কোথায় তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওদের ফিরিয়ে আনুন, ওদের সুযোগ দিন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার, মায়ের বুকে ফিরে আসার। ওদের উদ্ধার করুন।'

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

2h ago