ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা: ২ দিনেও মামলা হয়নি, আটক ২
নরসিংদীর রায়পুরায় দুর্বৃত্তের গুলিতে মির্জাচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জাফর ইকবাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ২ দিন পার হলেও এখনো মামলা হয়নি।
এ ঘটনায় ২ জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে, আটককৃতদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
নিহত চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, রাজনৈতিক সহকর্মী ও পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দেবেন তারা।
গত শনিবার বিকেল ৪টার দিকে রায়পুরার মির্জাচর ইউনিয়নের শান্তিপুর বাজার এলাকার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন মো. জাফর ইকবাল।
রায়পুরার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল মির্জাচর ইউনিয়ন পরিষদের পরপর ২ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ছিলেন তিনি।
জানতে চাইলে নিহতের স্ত্রী মাহফুজা আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পূর্ব শত্রুতার জেরে ও আধিপত্য বিস্তারের জন্যই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজ মিয়ার নির্দেশে তার কর্মী আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করে। গত ৬-৭ বছর ধরে আমার স্বামীর সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব চলছিল। দ্বন্দ্বের জেরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।'
মাহফুজা আক্তার আরও বলেন, 'হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আরও যারা জড়িত থাকতে পারে, তাদের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা করছি। চিহ্নিত জড়িতদের আসামি করে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।'
'দুয়েকদিনের মধ্যেই লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় যাব আমরা,' যোগ করেন তিনি।
স্থানীয়রা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের দিন দুপুরে চেয়ারম্যান মো. জাফর ইকবাল ইউনিয়নটির গ্রামরক্ষা বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত ঝামেলা নিষ্পত্তি করতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে শান্তিপুর বাজারে বৈঠকে বসেছিলেন।
বৈঠক শেষ করে বিকেল ৪টার দিকে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ সংলগ্ন স্থানে অবস্থান করছিলেন তিনি। সে সময় কে বা কারা তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে স্পিডবোটে করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে বিকেল ৫টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে মির্জারচর ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মিয়ার ছেলে মো. ফারুকুল ইসলাম। ওই নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. জাফর ইকবাল।
পরের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান ফিরোজ মিয়া নিজেই। তিনিও জাফর ইকবালের সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে হেরে যান। এরপর থেকে দুজন স্থানীয়ভাবে প্রতিপক্ষ হয়েছেন। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
জানতে চাইলে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চেয়ারম্যান মো. জাফর ইকবাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার পরিবারের কাছ থেকে আমরা এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তারা জানিয়েছেন, দ্রুতই থানায় মামলা করতে আসবেন।'
'লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুততম সময়ে সেটি মামলা হিসেবে নেওয়া হবে। এ ঘটনায় আমরা ২ জনকে আটক করেছি। অধিকতর তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে,' বলেন ওসি।
Comments