‘স্পর্শ করার অপরাধে’ হরিজন তরুণের হাত ঝলসে দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১

বগুড়া আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার বাজারে খাবার কিনতে গিয়ে হোটেল কর্মচারীর মারধরের শিকার হন হরিজন সম্প্রদায়ের এক যুবক। এ সময় তার একটি হাত গরম তেলে ঝলসে যায়।
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বগুড়া আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার বাজারে খাবার কিনতে গিয়ে হোটেল কর্মচারীর মারধরের শিকার হন হরিজন সম্প্রদায়ের এক যুবক। এ সময় তার একটি হাত গরম তেলে ঝলসে যায়।

গত ১০ ডিসেম্বরের এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রোববার মামলা করা হয়। আসামিকে গতকাল রাতে গ্রেপ্তারের পর আজ আদালতের প্রেরণ করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত মাসুদ রানা (৩০) নওগাঁর খালিপাড়ার রমজান আলীর ছেলে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১০ ডিসেম্বর নওগাঁর আত্রাই উপজেলার যাত্রামূল (সুইপার কলোনির) এলাকার যুবক মিঠুন বাঁশফোর (৩০) তার ২ আত্মীয়কে নিয়ে সান্তাহার রেলওয়ে বাজারের এশিয়া হোটেলে খাবার কিনতে যান। খাবার কেনার সময় একটু বেশি করে মাংসের ঝোল চাইলে হোটেলের কর্মচারী মাসুদ রানার সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মাসুদ রানা ধাক্কা দিলে কড়াইয়ের গরম তেলে ঝলসে যায় মিঠুনের ডান হাতের কনুই থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত। এ সময় প্রতিবাদ করায় মাসুদ রানাসহ হোটেলের আরও ৪-৫ জন কর্মচারী মিঠুনের আত্মীয়দেরও মারধর করে।

আহত মিঠুন বর্তমানে নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানিয়েছেন তার ভাই কালুয়া বাঁশফোর।

এ ঘটনায় কালুয়া বাঁশফোর আদমদীঘি থানায় মাসুদ রানাসহ অজ্ঞাত ৪-৫ জনের নাম মামলা করেন।

কালুয়া বাঁশফোর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সান্তাহার বাজারের কোনো হোটেল আমাদের বসতে দেয় না। খাবার কিনতে গেলেও খারাপ ব্যবহার করে। সেই কারণে হোটেল থেকে আমরা পার্সেল নিয়ে বাসায় এসে খাই। আমরা পেশায় সুইপার বলে তারা এই আচরণ করে।'

তিনি আরও বলেন, 'ঘটনার দিন আমার ভাই মিঠুন হোটেলের কর্মচারীকে ১০০ টাকা দিয়ে মাংসের অর্ডার দেন। এ সময় সেই কর্মচারীর গা স্পর্শ করে অনুরোধ করেছিল যেন একটু ঝোল বেশি দেয়। কিন্তু আমার ভাই হোটেলের সেই কর্মচারীর গা কেন স্পর্শ করেছে— এটাই তার অপরাধ। পরে মাসুদ রানাসহ অন্য কর্মচারীরা আমার ভাইসহ আরও ২ জনকে মারধর করে।'

'আমরা তো অন্যদের সমান টাকা দেই, কম দেই না। তাও হোটেল মালিক, কর্মচারীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। মাঝে মাঝে খাবারও দেয় না। বলে, কেন এসেছিস, অন্য কোথাও থেকে খাবার নিয়ে যা', যোগ করেন কালুয়া বাঁশফোর।

এ ঘটনার পর এশিয়া হোটেল বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন হোটেলের মালিক ও অন্য কর্মচারীরা।

হরিজনদের হোটেলে বসে কেন খেতে দেওয়া হয় না, জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সান্তাহারের অন্য একটি হোটেলের মালিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হোটেলে হরিজনদের খেতে দেওয়া হয় না, কথাটা ঠিক নয়। তাদের জন্য হোটেলে আলাদা টেবিল-চেয়ার, গ্লাস-প্লেট দেওয়া আছে। তারা সেখানে বসে খান।'

১০ ডিসেম্বরের ঘটনাটিকে 'আকস্মিক' বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আদমদীঘি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই ঘটনায় ভুক্তভোগীরা গতকাল থানায় অভিযোগ করলে আমরা গতকালই মামলা নেই এবং প্রধান আসামি মাসুদ রানাকে তারা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আজ আদালতে পাঠাই।'

Comments