চুরির অভিযোগে ৩ শিশুকে বেঁধে গ্রাম ঘোরালেন পৌর মেয়র, কেটে দিলেন চুল

এমএ হালিম সিকদার
মেয়র হালিম সিকদার। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে চুরির অভিযোগে ৩ শিশুকে মারধর এবং হাত বেঁধে পুরো গ্রাম ঘোরানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হালিম সিকদারের বিরুদ্ধে। ওই ৩ শিশুর চুলও কেটে দিয়েছেন তিনি।

আজ সোমবার সকালে উপজেলার গোপালদী পৌরসভার রামচন্দ্রদী বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে কারো সঙ্গে কোনো কথা না বলার জন্য মেয়রের লোকজন হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের পরিবারের।

এমএ হালিম সিকদার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। শিশুদের বেঁধে গ্রাম ঘোরানো এবং জনসম্মুখে চুল কেটে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও এই ঘটনাকে অন্যায় মনে করছেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।

পৌর মেয়র দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওরা আমার কারখানার জিনিসপত্র চুরি করেছে। এই কারণে একটু শাস্তি দিয়েছি।'

ভুক্তভোগী ৩ শিশু মাদরাসায় পড়ে। ১১ বছর বয়সী শিশুটি একটি দাখিল মাদরাসার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী, ৯ বছর বয়সী শিশুটি একই মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং ৭ বছর বয়সী শিশুটি মক্তবের শিক্ষার্থী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিশুর অভিভাবক বলেন, 'মাদরাসায় পড়া শেষে মেয়রের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি লোহার শেকল কুড়িয়ে পায় ২ শিশু। তাদের হাতে ওই শেকল দেখে চুরির অভিযোগে শিশু ২টিকে মারধর করেন মেয়র হালিম সিকদার। পরে তাদের হাত পেছন দিক করে বেঁধে আরেক শিশুকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসেন তিনি। পরে একইভাবে ৩ জনকে বেঁধে গ্রাম ঘোরান মেয়র। তাদের মারধরও করেন। প্রায় ৩ ঘণ্টা এভাবে ঘোরানোর পর জনসম্মুখে ৩ জনেরই চুল কেটে দেন তিনি।'

ভুক্তভোগী আরেক শিশুর অভিভাবক বলেন, 'রামচন্দ্রদী বাজার এলাকায় সরকারি জায়গার ওপর মেয়র হালিম সিকদার একটি টেক্সটাইল কারখানা তৈরি করেন। সম্প্রতি কারখানাটি উচ্ছেদ করলে কিছু যন্ত্রপাতি এদিক-ওদিক ছড়ানো ছিল। বাচ্চারা হয়তো সেটাই কুড়িয়ে নিয়েছে। কিন্তু এজন্য বাচ্চাদের সঙ্গে এমন আচরণ কেউ করে না।'

তিনি আরও বলেন, 'বাচ্চারা ভুল করলে অভিভাবক ডেকে স্থানীয়ভাবে বিষয়টাকে মীমাংসা করা যেত। কিন্তু তা না করে ৩ জনের হাত বেঁধে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে নিয়ে সেলুনে নিয়ে গিয়ে জনসম্মুখে তাদের চুল কেটে দেন মেয়র। ২ ঘণ্টারও বেশি সময় বাচ্চাগুলোকে আটকে রাখা হয়। আমরা হাত-পায়ে ধরে মেয়রের কাছে মাফ চাইলেও তিনি শোনেননি।'

এই বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর মেয়র হালিম সিকদার বলেন, 'আমার কারখানার মালামাল গত ৩ মাস ধরে চুরি হচ্ছে। আজকে ২ জনকে হাতেনাতে ধরেছি। পরে আরও একটাকে ধরে আনি বাসা থেকে। হাতে না, কোমরে দড়ি বেঁধে ওইগুলোকে (শিশুদের) বাজারে নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে পরে চুল কেটে দিই। পোলাপান দেখে বেশি শাসন করিনি।'

অভিভাবকদের ডেকে বিষয়টি না জানিয়ে শিশুদের সঙ্গে এমন আচরণ করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আপনারা খালি অন্যায়ের কথা বলেন। আমার ৬০-৭০ হাজার টাকার জিনিসপত্র চুরি হয়েছে সেটিও তো অন্যায়। ওই বাচ্চাদের একজনের চাচা আমার কারখানায় কাজ করে, আরেকজনের মাকে আমি মাতৃত্বকালীন ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। ওরা আমার গ্রামে থেকে, আমার থেকে সুবিধা নিয়ে আমার জিনিস চুরি করলে ছেড়ে তো দেওয়া যায় না।'

এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করবেন বলেও জানান পৌর মেয়র।

এদিকে শিশুদের অভিভাবকদের অভিযোগ, ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে কারো সঙ্গে কথা না বলার জন্য শিশুদের বাড়িতে গিয়ে শাসিয়েছেন মেয়রের লোকজন।

এক শিশুর অভিভাবক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার বাড়িতে গিয়ে মেয়রের ছোট ভাই ও চাচাতো ভাই পরিবারের লোকজনকে শাসিয়েছেন। এই নিয়ে কারো সঙ্গে কোনো কথা বললে শিশুদেরসহ অভিভাবকদের মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা।'

ওই অভিভাবক আরও বলেন, 'তারা তো স্থানীয় মাতবর। তাদের বিরুদ্ধে তো এমনিতেই যেতে পারব না। তাদের বিরুদ্ধে কিছুই করব না, থানায়ও যাব না।' 

হুমকির অভিযোগের বিষয়ে জানতে মেয়রকে ফোন দিলে এই দফায় তিনি ফোন ধরেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক বলেন, 'এখন পর্যন্ত শিশুদের পরিবারের কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ করেননি। তবে বিষয়টি জানার পর পুলিশ খোঁজখবর করছে।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, 'প্রাথমিকভাবে বিষয়টি আমরা শুনেছি। এ বিষয়ে সঠিক তথ্য নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে উপজেলা প্রশাসন।'

Comments

The Daily Star  | English

Blockade at Shahbagh demanding AL ban

The demonstration follows a sit-in that began around 10:00pm last night in front of the Chief Adviser's residence

2h ago