নারায়ণগঞ্জে জমি দখলে সন্ত্রাসীদের গুলি, ২ মোটরসাইকেলে আগুন

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে জমি দখলে আসা সন্ত্রাসীদের ২টি মোটরসাইকেলে আগুন দেন এলাকাবাসী। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে জমি দখলে বাধা দেওয়ায় সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলি চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় একজনের পায়ে গুলিবিদ্ধসহ ৪ জন আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুর সোয়া একটার দিকে উপজেলার ফরাজিকান্দা এলাকায় তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর পাশে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জাতীয় পার্টির প্রয়াত সংসদ সদস্য এ কে এম নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের সহযোগী আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীমের নেতৃত্বে নাসির, মুকিত, ডালিম, সিজারসহ ৪০-৫০ জন সন্ত্রাসী হামলায় অংশ নেয়। তারা অন্তত ১৫-২০ রাউন্ড গুলি ছোড়েন। ঘটনার সময় পুলিশও সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান।

এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ফরাজিকান্দা এলাকার প্রয়াত চেয়ারম্যান রাইসুল হকের ছেলে মঈনুল হক পারভেজ (৪২)। আহত হয়েছেন তার স্ত্রী সোমা আক্তার (৩২), মা মাহফুজা হক (৬৫) এবং বিল্লাল হোসেন (৪৫) নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি।

গোলাগুলির ঘটনার পর এলাকাবাসী ২টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। মোটরসাইকেলগুলো হামলাকারীদের বলে জানান স্থানীয়রা।

তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর টোল সুপারভাইজার জহিরুল আলম বলেন, 'পাশের মসজিদে জহুরের নামাজ পড়তে গেছিলাম। তখনই ঘটনা ঘটে। পাশের বাজারের জমি নিয়ে ঝামেলা হয়। ১৫-২০ রাউন্ড গুলির আওয়াজ পাইছি। প্রচুর হোন্ডা ছিল। কয়েকজন রাম দা, চাপাতি হাতে ঘোরাঘুরি করতেও দেখছি। মাসখানেক আগেও এই জমি নিয়ে ঝামেলা হইছে।'

গুলিবিদ্ধ পারভেজের ছোটভাই তানভীর আহমেদ বলেন, 'একমাস আগে পিজা শামীমের নেতৃত্বে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরে কে বা কারা সাইনবোর্ডটি খুলে ফেলে। দুইদিন আগে রাত ১টায় পিজা শামীম ও তার হোন্ডা বাহিনী আমাদের বাড়িতে এসে সাইনবোর্ড খুলেছি কেন জানতে চেয়ে হুমকি-ধমকি দেয়। এক কোটি টাকা চাঁদাও দাবি করে।'

'আজকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এসে তারা বাজারের চারদিকে বাঁশের বেড়া দিকে থাকে। চারদিকে তাদের হোন্ডা-বাহিনী। পরে আমার ভাই ৯৯৯ এ পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে আইসাও তাদের থামাতে পারেনি। পুলিশের সামনেই সোয়া ১টার দিকে তারা হামলা করে। গুলি লাগে আমার ভাইয়ের বা পায়ে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন ভাবীসহ আরও কয়েকজন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।'

পারভেজের চাচা আবু তালেব বলেন, তার ভাই প্রয়াত রাইসুল হক ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। সেতুর উত্তর পাশের জমিতে এখন ফরাজিকান্দা বাজার। এই জমিটির মালিক ছিলেন হাজী জহুরা বেগম। নিঃসন্তান এই নারী তার দুই সন্তানের নামে জমি লিখে দেন। জমিটি ৩০-৪০ বছর আগে তাদের কাছ থেকে কেনেন রাইসুল হক।

'এ জমিটি ক্রয়সূত্রে মালিক বলে দাবি করছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান ও তার মেয়ে। তাদের পক্ষ হয়ে আজমেরী ওসমানের সহযোগী আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীম সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জমিটি দখল নিতে আসেন।'

ক্রয় করার সময় জমির পরিমাণ ৬৬ শতাংশ থাকলেও পরে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু ও সড়ক নির্মাণের জন্য সাড়ে নয় শতাংশ অধিগ্রহণ করা হয়। বাকি সাড়ে ৫৬ শতাংশ জমি দীর্ঘদিন ধরে রাইসুল হকের পরিবার ভোগদখল করে আসছেন বলেও জানান আবু তালেব।

তিনি বলেন, 'জমির কাগজপত্র নিয়া বসুক। তারা যদি তাদের নামে কিছু দেখাতে পারে তাহলে নিবে, আমরা দেখাতে পারলে আমরা নেব। হিসাব তো ক্লিয়ার। কিন্তু এভাবে সন্ত্রাস করে কোন সমাধান হয় না।'

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) তসলিম উদ্দিন বলেন, 'জমি সংক্রান্ত বিরোধে ২ পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। সেখানে গোলাগুলির মতো ঘটনা ঘটেছে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। একজন এখন পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে তথ্য পেয়েছি। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, '৯৯৯ এ ২ পক্ষের ঝামেলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। প্রথমে অল্পসংখ্যক পুলিশ সেখানে ছিল, পরে আরও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে।'

জানতে চাইলে প্রয়াত নাসিম ওসমানের স্ত্রী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পারভীন ওসমান বলেন, 'বন্দরের ওই জমির ব্যাপারে আমি এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। আমাদের নামে আছে কিনা খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। আর জমি নিয়ে কোন মারামারি হয়েছে কিনা তাও জানি না।'

Comments

The Daily Star  | English

‘We knew nothing about any open letter’

Journalist Bibhuranjan’s son says after identifying his body

2h ago