অপরাধ ও বিচার

চনপাড়ায় মাদক চোরাকারবারিদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৩

পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, মাদক চোরাকারবারি শাহাবউদ্দিন ও শমসের তাদের বাহিনী নিয়ে আরেক মাদক কারবারি জয়নাল আবেদীনের বাহিনীর সঙ্গে কয়েক দফায় সংঘর্ষে জড়ায়৷
রূপগঞ্জের চনপাড়া। স্টার ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে মাদক চোরাকারবারিদের মধ্যে সংঘর্ষে ৩ জন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলে৷

পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, মাদক চোরাকারবারি শাহাবউদ্দিন ও শমসের তাদের বাহিনী নিয়ে আরেক মাদক কারবারি জয়নাল আবেদীনের বাহিনীর সঙ্গে কয়েক দফায় সংঘর্ষে জড়ায়৷

এ ঘটনায় সানি (১৭), সম্রাট পারভেজ (২১) ও রোমান (১৮) নামে ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানান হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া৷ তার ভাষ্য, আহত ৩ জনেরই পায়ে গুলি লেগেছে।

চনপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গুলিবিদ্ধ ৩ জনেই জয়নালের সহযোগী৷ জয়নাল একটি হত্যা মামলায় গত বছরের জুনে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন৷ সম্প্রতি জামিনে জেল থেকে বের হয়ে বাহিনী নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন৷

বিষয়টি নিয়ে চনপাড়ার স্থানীয় ৪ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ইফতারের পর জয়নাল গ্রুপ এবং শমসের ও শাহাবউদ্দিন গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়৷ এরপর গভীর রাত পর্যন্ত কয়েক দফায় তাদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে৷ এই সময় উভয়পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও গুলতি নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়৷ ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনাও ঘটে৷ সকালে আরেক দফায় সংঘর্ষ হয় তাদের মধ্যে৷

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চনপাড়ার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক ছিলেন ইউপি সদস্য বজলুর রহমান৷ গত ৩১ মার্চ কারাগারে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মারা যান বজলুর৷ তার মৃত্যুর পর চনপাড়ার নিয়ন্ত্রন নেওয়ার চেষ্টায় আছেন অন্য মাদক ব্যবসায়ীরা৷ এরই ধারাবাহিকতায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ এতে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে আছেন৷'

গত বছরের নভেম্বরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর ওরফে পরশের মৃত্যুর ঘটনায় মাদক প্রসঙ্গ উঠলে 'মাদক ও অপরাধীদের অভয়ারণ্য' হিসেবে পরিচিত চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের পাশাপাশি বজলুরও ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন। ১৮ নভেম্বর বিকেলে র‍্যাব-১–এর একটি দলের অভিযানে চনপাড়ার পূর্বগ্রাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন তিনি। ওই রাতেই র‍্যাব তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকা রাখার অভিযোগে ৩টি মামলা করে। ওই ৩ মামলার বাইরেও বজলুরের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদকসহ অন্তত ২৩টি মামলা ছিল বলে তখন জানিয়েছিল র‍্যাব।

সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদের সরকারি নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি৷

তবে জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (রূপগঞ্জ-আড়াইহাজার সার্কেল) আবির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জয়নাল আবেদীন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ছিলেন৷ দেড় মাস আগে সে জামিনে ছাড়া পায়৷ এতদিন এলাকায় আসেনি৷ এলাকায় আসার পরপরই তার বাহিনী নিয়ে শমসের ও শাহাবউদ্দিন গ্রুপের সাথে সংঘর্ষে জড়ায়৷'

তিনি আরও বলেন, 'মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিক থেকেই উত্তেজনা ছিল৷ পরে রাত ২টার দিকে তারা সংঘর্ষে জড়ায়৷ উভয়পক্ষেরই কয়েকজন আহত হয়েছেন৷ ৩ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে বলে জানতে পেরেছি৷ বর্তমানে ওই এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।'

Comments