৩ শতাধিক শিশু অপহরণ-মুক্তিপণ আদায় চক্রের ৩ সদস্য আটক

৩ শতাধিক শিশু অপহরণ-মুক্তিপণ আদায় চক্রের ৩ সদস্য আটক
গ্রেপ্তার সাহিনুর রহমান, সুফিয়া বেগম ও মিল্টন মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত

আট থেকে ১৬ বছর বয়সের ছেলে-মেয়েদের খোঁজে তারা স্কুল, মার্কেট, কোচিং সেন্টার ও মাদ্রাসার সামনে অপেক্ষা করতো। 

কোনো শিশুকে একা পেলে ওই চক্রের সদস্যরা নিজেদের শিশুটির বাবা-মায়ের আত্মীয় বা বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করতো। কথাবার্তার মাধ্যমে ওই চক্রের সদস্যরাও কৌশলে শিশুর পারিবারিক অবস্থা এবং যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতো।

এরপর তারা সেই শিশুটিকে ফল কিনে দেওয়া বা তার বাবা-মার কাছ থেকে নেওয়া ধারের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে দূরে কোথাও ডেকে দিয়ে যেত। 

শিশুটি তাদের কথায় বিশ্বাস করে ওই চক্রের সদস্যদের সঙ্গে গেলে তারা অভিভাবকদের কাছে ফোন করে বলতো, 'আপনার সন্তান আমাদের হেফাজতে আছে, টাকা দেন, না হলে আমরা তাকে আটকে রাখবো।'

এমন কৌশলে গত ৬-৭ বছরে ওই চক্রটি ৩ শতাধিক শিশুকে অপহরণ করেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আজ শনিবার শিশু অপহরণ সিন্ডিকেটের ৩ সদস্যকে তারা গ্রেপ্তার করেছে। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মূল পরিকল্পনাকারী মিল্টন মাসুদ (৪৫) ও তার সহযোগী সাহিনুর রহমান (৩৮) ও সুফিয়া বেগম (৪৮)।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোরশেদ আলম বলেন, ওই চক্র শুধু সেই শিশুদের টার্গেট করতো যারা তাদের পিতামাতার মোবাইল নম্বর মুখস্থ রেখেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, কোনো শিশু যদি তাদের মা-বাবার মোবাইল নম্বর বলতে না পারতো, তাহলে অপহরণকারীরা মুক্তিপণ না নিয়ে তাদের ছেড়ে দিতো।

তিনি আরও বলেন, 'তবে মজার ব্যাপার হলো, অপহরণকারীরা অপহরণের পর শিশুটিকে মারধর বা নির্যাতন করেনি। তারা তাদের খাওয়াত, বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতো এবং এরপর মুক্তিপণ পাওয়া পর শিশুটিকে ছেড়ে দিত।'

গ্রেপ্তার আসামিদের বরাতে ওই কর্মকর্তা বলেন, 'ওই চক্রের সদস্যরা মুক্তিপণ হিসেবে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করতো। অভিযুক্তরা কখনো কখনো শিশুর পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার ভিত্তিতে ৫০০ টাকা নিয়েও ছেড়ে দিয়েছে।'

মোরশেদ বলেন, 'হতে পারে এসব কারণে হয়তো ভুক্তভোগীরা থানায় কোনো অভিযোগ করেননি।'

পুলিশ জানিয়েছে, ২৪ মার্চ উত্তরা পূর্ব থানায় নিখোঁজ হওয়া ৬ বছরের শিশুর বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করার পর তারা সিন্ডিকেটটির খোঁজ পেয়েছে।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন ও ৫টি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করেছে যে তারা মোবাইল ফাইন্যান্সিং সার্ভিসের মাধ্যমে মুক্তিপণের টাকা আদায় করতো।

চক্রের একজন সদস্য শিশুর দেখাশোনা করতেন এবং বাকিরা মুক্তিপণ আদায় করতেন।

মাদক ব্যবসায়ী মাসুদ প্রধানত এই চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী, অন্যদিকে  একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের তথাকথিত সাংবাদিক শাহিনুর মোবাইল ফাইনান্সিং থেকে মুক্তিপণের টাকা সংগ্রহ করতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মিল্টনের বিরুদ্ধে ৫টি এবং শাহিনুরের বিরুদ্ধে ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন থানায় ৩টি মামলা রয়েছে।

কোনো শিশুকে আটকে রাখা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ডিসি মোরশেদ বলেন, 'টাকা না পাওয়া পর্যন্ত চক্রটি শুধু শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করতো।'

তিনি বলেন, 'এমন উদাহরণ রয়েছে যে কখনো কখনো তারা অপহরণের ৩ বা ৪ ঘণ্টা পরে কোনো টাকা না নিয়েও বাচ্চাদের ছেড়ে দিয়েছে।'

তবে এগুলো সবই অভিযুক্তদের দাবি এবং আমরা তা যাচাই করছি বলেও জানান তিনি।

মোরশেদ এ বিষয়ে অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, কোনো শিশুকে যেন একা একা রাস্তায় ঘোরাফেরা করতে দেবেন না।

Comments

The Daily Star  | English

Eid morning in 6 pictures

The morning of Eid-ul-Azha follows old, well maintained patterns

1h ago