নারায়ণগঞ্জ

‘ডিবি পুলিশ সেজে’ ছিনতাই: নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সহসভাপতি

‘ডিবি পুলিশ সেজে’ ছিনতাই: নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সহসভাপতি
ভুয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে গ্রেপ্তার তপু ও তার সহযোগীরা। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তপু চন্দ্র ঘোষ। ২৯ বছর বয়সী এ তরুণের বাড়ি সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের অর্জুনদি গ্রাম। গত ১৩ মে তপু চন্দ্র ঘোষ তার আরও ৩ সহযোগীর সঙ্গে গ্রেপ্তার হন।

পুলিশ বলছে, তপু তার সহযোগীদের নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের পরিচয় দিয়ে এক সৌদি আরব প্রবাসীর ১৭ লাখ টাকা লুট করেছেন। গ্রেপ্তার হবার পর গতকাল রোববার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন আসামিরা।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) রেজাউল করিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তপু চন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বে ডিবি পরিচয়ে আসামিরা ছিনতাই করে। এর আগেও তারা এই কাজ করেছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। নেতৃত্ব দেবার কারণে টাকা ভাগাভাগির সময় তপু বেশি ভাগ নিতেন বলে জানিয়েছেন অপর আসামিরা।'

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৪ এপ্রিল বন্দর উপজেলার বন্দর ইউনিয়নের হাজী সাহেবের মোড় এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন সৌদি প্রবাসী উজ্জ্বল হোসেন। ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আসামিরা তার কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। ২ দিন পর বন্দর থানায় ছিনতাইয়ের অভিযোগে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী ওই সৌদি প্রবাসী।

মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান পুলিশ পরিদর্শক রেজাউল করিম। তিনি জানান, তদন্তে তপু চন্দ্র ঘোষসহ তার সহযোগীদের সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। অধিকতর তদন্তের পর আসামিদের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গত শনিবার রাতে সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা তপু ও তার ৩ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ৪ জন সরাসরি এ ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারা দিনের বেলা ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে সৌদি প্রবাসীর টাকা ও মোবাইল লুট করে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন।

গ্রেপ্তার অন্য ৩ আসামি হলেন- সোনারগাঁ উপজেলার ছোট অর্জুনদি গ্রামের এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে রোহান (২১), একই উপজেলার বড়নগর এলাকার শুভঙ্কর চন্দ্র রাজবংশীর ছেলে কৃষ্ণচন্দ্র রাজবংশী (৩২) ও বগুড়া জেলার শেরপুরের খাজা আশ্রমপাড়া এলাকার চাঁন শেখ মিয়ার ছেলে এরশাদ (২৪)।

স্থানীয়রা জানান, তপুর অপর সহযোগী গ্রেপ্তার রোহান সোনারগাঁয়ে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী বলে পরিচিত।

পুলিশ জানায়, ছিনতাইকারী এ চক্রটির নেতা তপু চন্দ্র ঘোষেরও বাড়ি সোনাগাঁয়ের মোগরাপাড়া ইউনিয়নের অর্জুনদি গ্রামে। সে ওই গ্রামের সাধন চন্দ্র ঘোষের ছেলে।

সোনারগাঁয়ের স্থানীয় লোকজন ও ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তপু চন্দ্র ঘোষের বাবা সাধন চন্দ্র ঘোষের মিষ্টির দোকান ছিল। স্থানীয়ভাবে তপু সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। পরে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সোহাগ রনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেন। এক পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়নের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কোন পদে না থাকলেও সংগঠনের দুটো কমিটির নেতাদের নিয়ন্ত্রণ করেন অয়ন ওসমান। অয়ন ওসমানের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ২০১৯ সালের জুলাইতে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হলে ওই কমিটিতে ছাত্রলীগের সহসভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়ে যান তপু চন্দ্র ঘোষ।

স্থানীয়রা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মোগরাপাড়ায় 'লন্ডন জুস বার অ্যান্ড ক্যাফ' নামে তপুর একটি ফাস্টফুডের দোকান রয়েছে। গতমাসে দোকানটির কার্যক্রম শুরু করেন তপু।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তপুর গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগ বিব্রত। তপুর শক্ত কোনো রাজনৈতিক ব্যাকরাউন্ড নেই। এমপি সাহেবের ছেলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় আগে-পরে ছাত্রলীগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা না থাকলেও সহসভাপতির পদ বাগিয়ে নেয়। পদ দেবার সময় ব্যাকরাউন্ড চেক করে নিলে দলের এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয় না।'

জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা তপু চন্দ্র ঘোষের গ্রেপ্তার হবার বিষয়টি শুনেছি। সে জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি পদে আছেন। তবে এ বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে সংগঠন সিদ্ধান্ত নেবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

4h ago