গুলিতে আহত উপজেলা চেয়ারম্যানের মৃত্যু, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
নরসিংদীতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশীদ খান মারা গেছেন।
আজ বুধবার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
হারুনুর রশীদের ভাতিজা ও শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ফজলে রাব্বি খান দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, 'গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আমার চাচাকে বাসায় ঢুকে গুলি করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার পিঠে বিদ্ধ দুটি গুলি বের করা হয়। দীর্ঘ ১ মাস চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৩ এপ্রিল আমরা ভারতের দিল্লিতে একটি হাসপাতালে ভর্তি করাই। সেখানে একটি অস্ত্রোপচার শেষে ১ মে দেশে ফিরে আসেন তিনি।'
'এরপর ৭ মে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত ১৯ মে রাতে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বিকেল ৫টা ১৪ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন,' বলেন তিনি।
ফজলে রাব্বি খান আরও বলেন, 'আমার বাবা সাবেক সাংসদ রবিউল আউয়াল খান কিরনকেও দুর্বৃত্তরা ১৯৮৬ সালের ২৮ এপ্রিল আওয়ামী লীগের দলীয় সমাবেশ করে ফেরার পথে গুলি করে হত্যা করে,' বলেন তিনি।
এদিকে হারুনুর রশীদ খানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার কর্মী সমর্থক ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
রাত ৮টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ইটাখলা মোড়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ চলছে। বিক্ষোভকারীরা আসামী গ্রেপ্তারে পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন।
অভিযোগ করে ফজলে রাব্বি খান বলেন, 'হত্যার উদ্দেশ্যে যারা তাকে গুলি করেছে তাদের গ্রেপ্তারে কোনো অগ্রগতি আমার জানা নেই। এমনকি যাদের মদদে এ ঘটনা ঘটেছে তারাও প্রকাশ্যে এমপি জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহনের সঙ্গে মিটিংসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে বেড়াচ্ছে। এই ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার অনুরোধ জানাই।'
শিবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূঁইয়া রাখিল বলেন, 'হারুনুর রশিদ গত ২৫ বছর ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে জনপ্রিয়। তার মৃত্যুর খবরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লোকজন রাস্তাঘাটে নেমে শান্তিপূর্ণ অবরোধ করছে। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবরোধ চলবে।'
উল্লেখ্য, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সোয়া ছয়টার দিকে শিবপুর পৌর এলাকার বাজার সড়কে নিজের বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হন উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ খান।
সে রাতেই নরসিংদী জেলা পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে ৪ জনকে আটক করে। ঘটনায় ব্যবহৃত একটি অনিবন্ধিত মোটরসাইকেল ও একটি সাদা মাইক্রোবাসও জব্দ করা হয়।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আহত উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে মো. আমিনুর রশীদ খান তাপস বাদী হয়ে শিবপুর থানায় মামলা করেন।
মামলায় আরিফ সরকার (৪০), মো. মহসীন মিয়া (৪২), ইরান মোল্লা (৩০), শাকিল (৩৫), হুমায়ুন (৩২) ও গাড়ি চালক নূর মোহাম্মদকে (৪৮) আসামি করা হয়।
আসামিরা স্থানীয় সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঞা মোহন ও তার ছোট ভাই জেলা যুবলীগের সহসভাপতি জোনায়েদুল হক ভূঞার ঘনিষ্ট বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় গত ৭ মার্চ মো. ফরহাদ হোসেন ওরফে মোফাজ্জল হোসেন সরকার (৩৪) ও আরিফুল ইসলাম আরিফকে (২৮) মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মতিঝিল জোনের বিশেষ টিম।
এসময় তাদের কাছ থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত ২টি রিভলবার ও ৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশের কাছে তাদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান আসাদের সম্পৃক্ততার তথ্য দেন।
শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার বলেন, 'উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলির ঘটনায় করা মামলায় মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলায় দুই আসামির নাম আছে। তার মধ্যে নূর মোহাম্মদ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন এবং শাকিল কারাগারে আছেন। এ মামলার প্রধান আসামিসহ ৪ জন দুবাইয়ে আছেন। তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।'
Comments