ফেসবুক যেন জাল নোটের বাজার

ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

'আমাদের কাছে পাবেন অরিজিনাল গ্লেজিং প্রিন্টের, সুতা জলছাপসহ নিখুঁত কাজের মাল, যা ব্যাংকের মেশিন ছাড়া খালি চোখে বোঝা কঠিন...।'

জাল নোট বিক্রি করতে সম্প্রতি ফেসবুকের একটি আইডি থেকে দেওয়া বিজ্ঞাপনে এভাবেই লেখা হয়েছে।

'জাল টাকার ডিলার' নামের সেই আইডি থেকে দেওয়া পোস্টে আরও বলা হয়েছে, কুরিয়ারের মাধ্যমে সারা দেশে তারা জাল টাকা সরবরাহ করে থাকেন।

তবে এই আইডির ডিলারই একা নন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, তারা অন্তত ৫০টি ফেসবুক ব্যবহারকারী, পেজ বা গ্রুপ চিহ্নিত করেছে, যেখানে ঘন ঘন এই ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। যেমন: জাল টাকা, জাল টাকা বিক্রির ডিলার, জল টাকা আসল ডিলার, অ্যা গ্রেট—(জাল টাকা), জাল টাকা বিক্রি করি, জাল টাকার ব্যবসা।

৪ জুন জাল নোটের একজন সম্ভাব্য ক্রেতা মোহাম্মদ রকিবুল আহমেদ রাকিব (ফেসবুক আইডির নাম) ওই পোস্টে মন্তব্য করেন এবং যোগাযোগ নম্বর চান। উত্তরে ডিলার একটি নম্বর দেন।

রোববার রাতে ওই নম্বরে কল করলে বিক্রেতা দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদককে জানান, কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই তিনি ঢাকা বা অন্যান্য জেলার যেকোনো জায়গায় জাল নোট সরবরাহ করতে পারবেন।

'আপনি ক্যাশ অন ডেলিভারি দিতে পারেন। এর জন্য আপনাকে অগ্রিম কোনো টাকাও দিতে হবে না। শুধু ডেলিভারি চার্জ হবে দিতে হবে, ঢাকার ভেতরে ১৮০ টাকা এবং অন্য জায়গায় ৩০০ টাকা', বলেন তিনি।

তবে অন্য বিজ্ঞাপনদাতারা সাধারণত এসব ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ অর্থ অগ্রিম নিয়ে থাকে। তারা সম্ভাব্য ক্রেতাদের ফেসবুক মেসেঞ্জারে বা তাদের পোস্টের সঙ্গে শেয়ার করা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলে।

এসব অ্যাকাউন্টের কয়েকটির বন্ধু তালিকায় যুক্ত আছেন কয়েক হাজার ব্যবহারকারী। জাল নোট বিক্রির একটি পেজে ২ হাজারের বেশি ফলোয়ার রয়েছে, আর গ্রুপে ৩ হাজারের বেশি সদস্য রয়েছে।

বিক্রেতারা তাদের পোস্টে জাল নোটের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে থাকেন। আবার ক্রেতারা কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই পণ্য ডেলিভারি পেয়ে তাদের ধন্যবাদ দিয়েছে—এমন স্ক্রিনশটও তারা ফেসবুকে পোস্ট করেন।

মেসেঞ্জার অ্যাপে এই ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের একজন দাবি করেন, তার বানানো জাল নোট মেশিন ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব না।

এই বিক্রেতা অন্য এক গ্রাহকের সঙ্গে তার কথোপকথনের একটি স্ক্রিনশটও দেখিয়েছেন। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে জাল নোট পাঠানোর আগে ৫০ শতাংশ অগ্রিম অর্থও দাবি করেন তিনি।

এসব বিক্রেতারা ১ লাখ টাকার জাল নোট মানভেদে ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি করার বিজ্ঞাপন দেন। একই পরিমাণ ৫০০ টাকার নোট ১৪ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে। বেশ কয়েকজনকে ২০ টাকার জাল নোটের বিজ্ঞাপন দিতে দেখা গেছে। তাদের ভাষ্য, ২০ টাকার নোট বাজারে প্রবেশ করানো সহজ। কারণ মানুষ সাধারণত তা খুঁটিয়ে দেখে না।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, অনলাইনে জাল নোট বিক্রেতাদের বেশিরভাগই প্রতারক। কারণ ডেলিভারি চার্জ বা আংশিক অর্থ প্রদানের পরে তারা সম্ভাব্য ক্রেতার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

অনলাইনে জাল নোট বিক্রির সঙ্গে জড়িত অন্তত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এক কর্মকর্তা বলেন, 'যারা অফলাইনে জাল নোট বিক্রি করছেন, তারা যদি অনলাইনের বিক্রেতাদের সঙ্গে এক হয়ে কাজ শুরু করে, তাহলে পুরো পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠতে পারে।'

ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (লালবাগ) উপকমিশনার মশিউর রহমান জাল নোট উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযানে নেতৃত্ব দেন। অভিযানের সময় জাল নোট বানানো অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি জাল নোটের কারখানা ধ্বংস করা হয়।

মশিউর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিছু মানুষ অফলাইনে জাল নোট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তবে, অনলাইন জাল নোট বিক্রেতাদের বেশিরভাগই প্রতারক।'

'এই নোটের ক্রেতারাও অপরাধী এবং জাল নোট বিক্রেতাদের সঙ্গে চুক্তি করার পর প্রতারিত হয়েও তাই তারা থানায় অভিযোগ করছে না', বলেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান মশিউর রহমান।

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

7h ago