সেন্ট্রাল হাসপাতাল

আঁখির অবস্থা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন চিকিৎসক: তদন্ত প্রতিবেদন

মাহবুবা রহমান আঁখি। ছবি: সংগৃহীত

ডিউটি ডাক্তার রোগীর অবস্থা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং রোগী ও তার পরিবারের সিজারিয়ান ডেলিভারির পরিবর্তে নরমাল ডেলিভারির জন্য চাপ দেওয়াই মূলত গত জুনে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে নবজাতক ও তার মায়ের মৃত্যুর কারণ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্তে এ বিষয়টি উঠে এসেছে।

মৃত মাহবুবা রহমান আঁখির (২৫) চিকিৎসায় নিয়োজিত সবার বক্তব্যের ভিত্তিতে তৈরি করা তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও কিছু 'দায়' থাকতে পারে।

গত ১০ জুন ভোরে শেষ মুহূর্তে সিজারিয়ান অপারেশনের পর আঁখির নবজাতকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার ৮ দিন পর গত ১৮ জুন অন্য একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আঁখি নিজেও মারা যান।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (লিগ্যাল উইং) হোসেন আলী খন্দকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কে কী ভূমিকা পালন করেছে তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হয়েছিল। আমরা সেটি করেছি। এখন শাস্তির বিষয়ে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।'

কমিটি গত ২ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।

এ ঘটনায় কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহজাদী মুস্তারশিদা ও আরেক চিকিৎসক মুনা সাহাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। গত মাসে তারা জামিনে মুক্তি পান।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. সংযুক্তা সাহা তার ফেসবুক পেজে সেন্ট্রাল হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারিতে তার দক্ষতা নিয়ে অসংখ্য প্রচারমূলক ভিডিও আপলোড করেছেন।

আঁখি নরমাল ডেলিভারি চাচ্ছিলেন। এই ভিডিওগুলো দেখে তিনি গর্ভাবস্থায় ২ বার ড. সংযুক্তা সাহার সঙ্গে দেখা করেন এবং তার কাছ থেকে পরামর্শ নেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৯ জুন দুপুরে প্রসববেদনা শুরু হলে আঁখিকে প্রথমে কুমিল্লার তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা জটিলতার কারণে সি-সেকশনের পরামর্শ দিলেও আঁখি ও তার স্বামী ইয়াকুব আলী তাদের পরামর্শ মানতে রাজি হননি।

পরে এই দম্পতি ডা. সংযুক্তা সাহার সহকারীর সঙ্গে কথা বলেন। সহকারী তাদের আশ্বস্ত করেন, ডা. সংযুক্তা নিজেই প্রসবের তদারকি করবেন। এই আশ্বাসের ভিত্তিতে তারা সেন্ট্রাল হাসপাতালের দিকে রওনা হন।

কিন্তু ৯ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডা. সংযুক্তা সাহা ডা. শাহজাদী মুস্তারশিদাকে এ বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। উল্লেখ্য, ড. শাহজাদীর গাইনি বিষয়ক কোনো আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি নেই।

ড. সংযুক্তা সাহা তার অনুপস্থিতির কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাননি।

১০ জুন রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই দম্পতি সেন্ট্রাল পৌঁছানোর পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও অন্যান্য চিকিৎসক বা কোনো কর্মকর্তা আঁখি ও তার স্বামীকে জানাননি যে ড. সংযুক্তা সাহা সেখানে নেই। সি সেকশন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর তারা বিষয়টি জানতে পারেন। ডা. সংযুক্তা সাহার চিকিৎসক দলের সদস্য ড. শাহজাদি মুস্তারশিদা ও ড. মুনা সাহা সি-সেকশন অপারেশন করেন, যার ফলে নবজাতক ও মায়ের মৃত্যু হয়।

তদন্ত কমিটি ড. সংযুক্তা সাহার কিছু অসদাচরণের কথা উল্লেখ করেছে, যার মধ্যে আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নরমাল ডেলিভারির ভিডিও তৈরি করা, উপস্থিত না থেকেও সহকর্মী ডাক্তারদের নিজের নাম ব্যবহার করে চিকিৎসা দিতে বলা এবং ডা. শাহজাদীকে আঁখির প্রসব প্রক্রিয়ার দেখভাল করতে বলা।

কমিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ৪টি অসঙ্গতি চিহ্নিত করেছে। ডা. সংযুক্তা সাহা ও ডা. মুনা সাহার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তাদের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া, ডা. সংযুক্তা সাহা উপস্থিত না থাকার তথ্য গোপন রাখা, অন্যান্য ডাক্তারদের আঁখির চিকিৎসা করতে দেওয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডা. সংযুক্তা সাহার বেআইনি প্রচারণার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া।

কমিটি বলেছে, সার্বিকভাবে আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলীরও কিছু দায় রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আঁখি প্রায় ৮ ঘণ্টা প্রসববেদনায় থাকলেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারির ওপর জোর দিয়েছেন ইয়াকুব।

তবে ডা. ফরিদা আক্তার মিলি, ডা. এহসান জামিল ও ডা. সাখাওয়াত আলমকে দায় থেকে মুক্তি দিয়েছে তদন্ত কমিটি। কারণ এই ৩ ডাক্তার হাসপাতালে এসে পৌঁছানোর আগেই রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে।

দ্য ডেইলি স্টার গতকাল রাতে ফোন কল ও এসএমএসের মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।

সেন্ট্রাল হাসপাতালের ভাইস চেয়ারম্যান ড. এম এ কাসেম তদন্ত কমিটির সামনে স্বীকার করেছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সে সংযুক্তা সাহাকে রোগীদের চিকিৎসা করার অনুমতি দিয়ে তারা ভুল করেছেন।

গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'ডাক্তারদের লাইসেন্স চেক করা আমাদের একার দায়িত্ব নয়। এটা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলেরও দায়িত্ব।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

IMF loan tranches: Agreement with IMF at last

The government has reached a staff-level agreement with the International Monetary Fund for the fourth and fifth tranche of the $4.7 billion loan programme, putting to bed months of uncertainty over their disbursement.

11h ago