কান্না থামছে না চারণ কবি রাধাপদ রায়ের, গ্রেপ্তার হয়নি হামলাকারীরা

‘ধারণা করছি পূর্ব-শত্রুতার জের ধরে আমার ওপর হামলা করা হয়েছে। হামলা করার অন্য কারণও থাকতে পারে। আমি ঘুমাতেই পারছি না। চোখ বন্ধ করলেই হামলার দৃশ্য ভেসে উঠছে। আমাকে নির্মমভাবে মারপিট করা হয়েছে। আমি ভাবতেই পারিনি আমার ওপর কেউ এভাবে হামলা করতে পারেন।’
হাসপাতালের বিছানায় অশ্রুসিক্ত কবি রাধাপদ রায়। ছবি: স্টার

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাঁদছেন দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত চারণ কবি রাধাপদ রায় (৮০)। কখনও হাত দিয়ে কখনও গামছা দিয়ে মুছছেন চোখের পানি। হাসপাতালে তাকে সাহস যোগাতে বিভিন্ন জায়গা থেকে লেখক ও সাহিত্য অনুরাগীরা আসছেন। রাধাপদ রায় তাদেরকে বলেছেন, 'ওষুধে আমার শরীরের ব্যথা কমছে কিন্তু মনে যে আঘাত পেয়েছি সেটার উপশম হচ্ছে না। মনের ব্যথা আমাকে পীড়া দিচ্ছে। এ ব্যথা ভুলতে পারছি না।'

কবি রাধাপদ রায় কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের নিভৃত পল্লী মাধাইখাল গ্রামের বাসিন্দা। পূর্বশত্রুতার জেরে গত শনিবার তার ওপর হামলা হয়। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় কবির ছেলে জুগল রায় রোববার রাতে পাশের এলাকার অভিযুক্ত দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে নাগেশ্বরী থানায় মামলা করেছেন।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রাধাপদ রায় বলেন, 'ধারণা করছি পূর্ব-শত্রুতার জের ধরে আমার ওপর হামলা করা হয়েছে। হামলা করার অন্য কারণও থাকতে পারে। আমি ঘুমাতেই পারছি না। চোখ বন্ধ করলেই হামলার দৃশ্য ভেসে উঠছে। আমাকে নির্মমভাবে মারপিট করা হয়েছে। আমি ভাবতেই পারিনি আমার ওপর কেউ এভাবে হামলা করতে পারেন।'

কবির পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা বলছেন, সাত মাস আগে হামলাকারী রফিকুল ইসলামের বড় ভাই কদু মিয়ার সঙ্গে কবির ছেলে মাধব রায়ের ধার নেওয়া ৫০০ টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়েছিল। ওই সময় কদু মিয়া কবির বাড়িতে এসে হুমকি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছিলেন। কবি তাকে 'বেয়াদব' বলেছিলেন। এ কারণে হয়তো কদু মিয়া তার ছোট ভাই রফিকুলকে দিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে হামলার পিছনে অন্য কারণ থাকতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।

কুড়িগ্রাম জেলা কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাসান পলাশ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কবি রাধাপদ রায়ের ওপর হামলার ঘটনায় আমরা মানসিকভাবে আহত হয়েছি। তার ওপর হামলা আমাদের জন্য হুমকির বার্তা দিয়েছে।'

কবির মেয়ে সান্ত্বনা রানী (৪৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের বৃদ্ধ বাবার ওপর নির্মমভাবে আঘাত করা হয়েছে। তার চুল-দাঁড়ি ধরে টানাহ্যাঁচড়া করা হয়েছে। হামলার সময় সাম্প্রদায়িক বিষোদগার করা হয়। এর পর থেকে তিনি ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। তিনি সবসময় কাঁদছেন। আসামি রফিকুল ও কদু এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা আতঙ্কে আছি।'

আসামি রফিকুল ইসলাম (৩৫) ও কদু মিয়া (৪৫) নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের কচুয়ারপাড় গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে। তারা পেশায় রাজমিস্ত্রি।

পুলিশ জানায়, গত শনিবার সকালে বাড়ির পাশে বিলে মাছ ধরার সময় কবি রাধাপদ রায়কে পিটিয়ে আহত করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাধাপদ রায়ের খোঁজখবর রাখছে পুলিশ।

নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ইফতেখারুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কবি রাধাপদ রায় এখন সুস্থ রয়েছেন। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরতে পারবেন।

নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশিকুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঘটনার পর আসামিরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে পূর্ব-শত্রুতার জেরে কবির ওপর হামলার তথ্য পাওয়া গেছে। আসামিদের অবস্থান জানতে তাদের পরিবারের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।'

Comments